বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে আবারও চিকিৎসা পরিষেবার বেহাল অবস্থার শিকার হয়ে পাঁচ প্রসূতি নিজেদের স্মৃতি হারালেন। এ ঘটনা ঘটেছে রেওয়া জেলার গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতালে, যেখানে গত শুক্রবার সিজারের সময় ভুল ইঞ্জেকশনের কারণে এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। চিকিৎসকদের দাবি, সিজারের জন্য মেরুদণ্ডে দেওয়া যে অ্যানাস্থেটিক (অচেতন করার) ইঞ্জেকশন ছিল, তার থেকেই এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে ওই পাঁচ প্রসূতির স্মৃতি চলে গেছে, তাঁরা কিছুই মনে করতে পারছেন না। দ্রুত তাঁদের আইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয় এবং পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
মধ্যপ্রদেশের স্বাস্থ্য দফতর এ বিষয়ে একটি তদন্ত শুরু করেছে এবং অচেতন করার ইঞ্জেকশনের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে, এই ঘটনার পরই উঠেছে প্রশ্ন—এই ইঞ্জেকশনে গাফিলতি ছিল, না কি প্রস্তুতকারী সংস্থার কোনো ত্রুটি ছিল? একটি ভুল ইঞ্জেকশনই যে এমন বড় ঘটনা ঘটাতে পারে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। বরং, অভিযোগ উঠেছে যে, ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এটি কোনও একক ঘটনা নয়, কারণ গত বছরের আগস্ট মাসেও মধ্যপ্রদেশে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। সে সময়ও ইন্ট্রাভেনাস ইঞ্জেকশনের কারণে পাঁচ প্রসূতির মৃত্যু হয়েছিল। সে ঘটনায়ও রাজ্য সরকার দ্রুত অভিযোগ মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং বিষয়টি নিয়ে কোনো কার্যকর তদন্ত হয়নি। যদিও কিছু জীবনদায়ী ওষুধ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তবুও সেগুলির প্রস্তুতকারী সংস্থার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এই ঘটনার সঙ্গে রেওয়া জেলার বাসিন্দা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেন্দ্র শুক্লার নামও জড়িত। তাঁর নিজেদের এলাকা রেওয়া জেলার হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটায় রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিস্থিতি নিয়ে আরও প্রশ্ন উঠেছে। রাজেন্দ্র শুক্লা, যিনি কেন্দ্রীয় সরকারের ডবল ইঞ্জিন শাসনের তত্ত্বাবধায়ক, তিনি এই বিষয়টি নিয়ে নীরব রয়েছেন। তাঁর এই নীরবতা বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলছে এবং রাজ্যের শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে চরম সমালোচনার ঝড় তুলছে।
গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতালের এই ঘটনা, যা সারা দেশে একটি বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে, তা প্রমাণ করছে যে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একাধিক গলদ রয়েছে। প্রসূতির মৃত্যু এবং স্মৃতি হারানোর ঘটনা মধ্যপ্রদেশে প্রথম নয়, বরং একাধিক বার এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। এসব ঘটনা নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ অত্যন্ত ধীর এবং কার্যকর না হওয়ায় জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে।
এছাড়া, এই ঘটনার পর, রাজ্যে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিশেষত, ইঞ্জেকশনের প্রস্তুতকারক সংস্থার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় জনমনে গভীর ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। জনগণের অভিযোগ, রাজ্যের শাসক দল এবং সরকারের কাছ থেকে তারা কোনভাবেই সঠিক ব্যবস্থা পাচ্ছে না, যা তাদের জীবন এবং নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
এখন সকলের মনে একটাই প্রশ্ন—কবে মধ্যপ্রদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আসবে আসল পরিবর্তন? রাজনৈতিক বিরোধীরা এই ঘটনার নিন্দা করেছেন এবং দাবি করেছেন যে, রাজ্য সরকারকে আর এক মুহূর্তও ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। তাঁদের দাবি, যতদিন না রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংস্কার হয়, ততদিন পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জীবন বিপদের মধ্যে পড়ে থাকবে।