মণিপুরের (manipur) বিজেপি বিধায়ক থকচম রাধেশ্যাম সিং ঘোষণা করেছেন যে, রাজ্যে নতুন সরকার গঠনের জন্য ৪৪ জন বিধায়ক প্রস্তুত। বুধবার রাজভবনে রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি এই প্রস্তুতির কথা জানান। তাঁর সঙ্গে আরও নয়জন বিধায়ক এই সাক্ষাতে উপস্থিত ছিলেন।
রাধেশ্যাম সিং
রাধেশ্যাম সিং বলেন, “জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী ৪৪ জন বিধায়ক সরকার গঠনের জন্য প্রস্তুত। আমরা এই বিষয়টি রাজ্যপালের কাছে জানিয়েছি এবং রাজ্যের চলমান সমস্যার সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করেছি।” তিনি আরও জানান, রাজ্যপাল তাঁদের বক্তব্য গ্রহণ করেছেন এবং জনগণের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
রাধেশ্যাম সিং স্পষ্ট করেছেন যে, সরকার গঠনের জন্য আনুষ্ঠানিক দাবি পেশ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বিজেপির (manipur) কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপর নির্ভর করছে। তিনি বলেন, “তবে, আমরা প্রস্তুত আছি বলে জানানোর মধ্যেই সরকার গঠনের দাবি পেশ করার মতোই।” তিনি জানান, বিধানসভার স্পিকার থকচম সত্যব্রত সিং ৪৪ জন বিধায়কের সঙ্গে পৃথকভাবে এবং যৌথভাবে সাক্ষাৎ করেছেন, এবং নতুন সরকার গঠনের বিরোধিতা করার মতো কেউ নেই।
মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন (manipur)
মণিপুরে (manipur)গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন চলছে। এই সিদ্ধান্ত বিজেপি নেতা এন. বিরেন সিংয়ের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফার পর নেওয়া হয়। ২০২৩ সালের মে মাস থেকে মৈতৈ এবং কুকি-জো সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষের পর তাঁর সরকারের ব্যবস্থাপনার তীব্র সমালোচনা হয়। এই সংঘর্ষে ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
মণিপুর (manipur) বিধানসভায় মোট ৬০টি আসন রয়েছে, যার মধ্যে বর্তমানে একটি আসন শূন্য রয়েছে একজন বিধায়কের মৃত্যুর কারণে। বর্তমানে ৫৯ জন বিধায়ক রয়েছেন। নতুন সরকার গঠনের দাবি করা জোটে রয়েছেন ৩২ জন মৈতৈ বিধায়ক, তিনজন মণিপুরি মুসলিম বিধায়ক এবং নয়জন নাগা বিধায়ক, মোট ৪৪ জন।
এদিকে, কংগ্রেসের রয়েছে পাঁচজন বিধায়ক, যারা সবাই মৈতৈ সম্প্রদায়ের। বাকি ১০ জন বিধায়ক কুকি সম্প্রদায়ের, যাদের মধ্যে সাতজন গত নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন, দুজন কুকি পিপলস অ্যালায়েন্সের এবং একজন স্বতন্ত্র(manipur)।
সোফিয়া কুরেশি বিতর্কে বিজয় শাহের গ্রেফতারিতে স্থগিতাদেশ সুপ্রিম কোর্টের
চলমান উত্তেজনা ও বিক্ষোভ
এই মুহূর্তে মৈতৈ-অধ্যুষিত ইম্ফল উপত্যকায় ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে তার প্রেক্ষিতেই এই ঘোষণা । গত ২০ মে গোয়ালতাবিতে একটি সরকারি বাসের উইন্ডশিল্ডে রাজ্যের নাম লেখা ঢেকে দেওয়ার ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় মৈতৈ গোষ্ঠী রাজ্যপালের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা এবং মুখ্য সচিব, ডিজিপি এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে।
গত নভেম্বরে জিরিবাম জেলায় তিনজন মহিলা ও শিশু হত্যার ঘটনার পর তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ জনতা তিনজন মন্ত্রী এবং ছয়জন বিধায়কের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশ ২৩ জনকে গ্রেফতার করেছে এবং ইম্ফল উপত্যকার পাঁচটি জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে।
রাধেশ্যাম সিংয়ের রাজনৈতিক পটভূমি
থকচম রাধেশ্যাম সিং একজন প্রাক্তন আইপিএস অফিসার, যিনি ২০০৬ সালে রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক এবং ২০১৩ সালে মেরিটোরিয়াস সার্ভিসের জন্য পদক পেয়েছেন। তিনি ২০১৭ এবং ২০২২ সালে হেইরক কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হন। তিনি এন. বিরেন সিংয়ের মন্ত্রিসভায় শিক্ষা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পরে মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা হন। ২০২৩ সালে তিনি উপদেষ্টার পদ থেকে ইস্তফা দেন, কারণ তাঁকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
মণিপুরে (manipur) রাষ্ট্রপতি শাসনের মধ্যে এই রাজনৈতিক উত্থান গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৩ সালে মৈতৈ এবং কুকি-জো সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষের পর থেকে রাজ্যে অশান্তি চলছে। এই সংঘর্ষের জন্য বিরেন সিংয়ের সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছিল। ২০২৩ সালে নয়জন বিজেপি বিধায়ক, যার মধ্যে রাধেশ্যাম সিং ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করে জানান যে, রাজ্যের জনগণ সরকারের উপর ভরসা হারিয়েছে।
রাধেশ্যাম সিং তখন বলেছিলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মৈতৈ এবং কুকি বিধায়কদের মধ্যে সংলাপ প্রয়োজন। তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, কুকি মন্ত্রীদের ইম্ফলে না আসার কারণে সরকারের কার্যক্রম পক্ষাঘাতগ্রস্ত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, ৪৪ জন বিধায়কের সমর্থন নিয়ে নতুন সরকার গঠনের দাবি রাজ্যের রাজনৈতিক সংকট সমাধানের একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লা এই বিষয়ে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া শুরু করবেন বলে জানা গেছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেনি। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন স্পিকার থকচম সত্যব্রত সিং, পূর্বতন আইপিএস অফিসার থৌনাওজাম বসন্তকুমার এবং রাধেশ্যাম সিং নিজেও। এই ঘটনা মণিপুরের জটিল রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উপর নতুন আলোকপাত করেছে।