তামিলনাড়ু: তামিলনাড়ুর কারুর জেলায় অভিনেতা-রাজনীতিক বিজয়ের (Vijay) রাজনৈতিক দল ‘তামিলাগা ভেত্রি কাজাগম’ (TVK)-এর এক বিশাল জনসভায় পদদলিত হয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪১ জন মানুষের। মর্মান্তিক এই ঘটনায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ গ্রেফতার করেছে দলের কারুর পশ্চিম জেলার সম্পাদক মথিয়াঝাগনকে (Mathiyazhagan)। তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে গুরুতর অব্যবস্থাপনা ও জননিরাপত্তা বিপন্ন করার জন্য। চাঞ্চল্যকর ভাবে, পুলিশের এফআইআরে (FIR) নাম রয়েছে নিজে অভিনেতা বিজয়েরও।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু মথিয়াঝাগনই নন, টিভিকে-র সাধারণ সম্পাদক বুসি আনন্দ (Bussy Anand) এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্মল শেখর (Nirmal Sekar)-এর বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, খুনের সমতুল্য অপরাধ এবং জননিরাপত্তা বিপন্ন করার অভিযোগে মামলা হয়েছে।
Also Read | আগামী দুইটি সিজনের জন্য জামশেদপুরে থাকছেন প্রতীক
এফআইআরের অভিযোগ অনুযায়ী, বিজয় ইচ্ছাকৃতভাবে জনসভায় প্রায় চার ঘণ্টা দেরিতে উপস্থিত হন, যদিও তিনি আগে থেকেই ওই এলাকায় ছিলেন। রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে এই বিলম্ব ঘটান, যার ফলে অধৈর্য জনতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অভিযোগে বলা হয়েছে, বিজয় অনুমতি ছাড়াই রোডশো করেন এবং প্রশাসনের শর্ত ভঙ্গ করে “অযথা প্রত্যাশা” তৈরি করেন দলের সমর্থকদের মধ্যে।
শনিবারের ওই সভায় অনুমিত ১০ হাজার মানুষের পরিবর্তে উপস্থিত হয়েছিল প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি লোক। তীব্র গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠে যখন জনতা সামনে ধাক্কা দেয়, ব্যারিকেড ভেঙে পড়ে এবং বহু মানুষ টিনের ছাউনি ও গাছে উঠতে থাকে। ছাউনি ও গাছ ভেঙে পড়লে নিচে থাকা মানুষজন চাপে পড়ে যান এবং মুহূর্তের মধ্যে ভয়াবহ পদদলিত শুরু হয়।
Also Read | নবরাত্রির সন্ধ্যায় গোরক্ষনাথ মন্দিরে হোমানুষ্ঠান যোগীর
হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে অন্তত ১০ জন শিশু এবং ১৮ জন মহিলা রয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, মৃতদের পরিবারে চরম শোক এবং হতাশার ছায়া নেমে এসেছে। এফআইআরে আরও অভিযোগ করা হয়েছে যে, বিজয়কে স্বাগত জানাতে দলের পক্ষ থেকে অনুমতি ছাড়াই এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল, যা যানজট এবং সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়ে তোলে।
এই ঘটনার জেরে টিভিকে নেতা আধব অর্জুনা (Aadhav Arjuna) মাদ্রাজ হাইকোর্টে আবেদন করেছেন যে, ঘটনাটির তদন্ত সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়া হোক। পাশাপাশি, বিজয়কে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যেন রাজ্য সরকার বাধা না দেয়, সেই নির্দেশ চাওয়া হয়েছে। টিভিকে অভিযোগ করেছে যে, এই দুর্ঘটনার পেছনে শাসক দল দ্রাবিড় মুনেত্রা কাজাগম (DMK)-এর ষড়যন্ত্র রয়েছে, যদিও সরকার তা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছে।
অন্যদিকে, পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন না থাকা, জনসমাগমের ভুল হিসাব এবং যথাযথ ভিড় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অভাব – এই সব বিষয়েই প্রশাসনের সমালোচনা হচ্ছে।
বিজয় এক বিবৃতিতে জানান, তিনি “অত্যন্ত শোকাহত” এবং “অব্যক্ত যন্ত্রণায়” ভুগছেন। তিনি নিহতদের পরিবারের জন্য ২০ লক্ষ টাকা এবং আহতদের জন্য ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।
এই মর্মান্তিক পদদলিত কাণ্ড তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে এবং বিজয়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।