হায়দরাবাদ: আত্মসমর্পণ (Maoist surrender) করলেন সিপিআই (মাওবাদী) সংগঠনের মোট ৩৭ জন সদস্য। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তেলেঙ্গানার রাজ্য কমিটির তিন শীর্ষ নেতা কোয়াড্ডা সাম্বাইয়া ওরফে ‘আজাদ’, আপ্পাসি নায়না ওরফে ‘রামেশ’, এবং মুচাকি সোমাদা ওরফে ‘এর্রা’। শনিবার হায়দরাবাদে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তেলেঙ্গানা রাজ্যের পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিজিপি) বি শিভাধর রেড্ডির সামনে তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন।
ডিজিপি রেড্ডি জানান, সাম্প্রতিক মাসগুলিতে এটি মাওবাদীদের সবচেয়ে বড় সংগঠিত আত্মসমর্পণের ঘটনা। দীর্ঘ তিন দশক ধরে ভূগর্ভস্থ ভাবে সক্রিয় ছিলেন এই তিন রাজ্য কমিটির সদস্য। প্রত্যেকের মাথার ওপর ২০ লক্ষ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা ছিল।
মোট আত্মসমর্পণকারী ৩৭ জনের মধ্যে বাকি ৩৪ জন চত্তিশগড়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তিন ডিভিশনাল কমিটি সদস্য, নয়জন এরিয়া কমিটি সদস্য এবং ২২ জন স্কোয়াড সদস্য। আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে ২৫ জন মহিলা এবং ১২ জন পুরুষ।
আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীরা পুলিশের হাতে তুলে দেন বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র। বাজেয়াপ্ত অস্ত্রের তালিকায় রয়েছে একটি একে–৪৭ রাইফেল, চারটি .৩০৩ রাইফেল, একটি জি-৩ রাইফেল, দুটি এসএলআর এবং প্রচুর গুলি। ডিজিপির কথায়, এই অস্ত্রজমা মাওবাদীদের শক্তিকে বড় আঘাত করেছে এবং এই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে।
আত্মসমর্পণের পিছনে মুখ্যমন্ত্রী এ. রেভন্ত রেড্ডির আবেদনকেই প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেন ডিজিপি। গত ২১ অক্টোবর পুলিশ শহিদ দিবসে মুখ্যমন্ত্রী মাওবাদীদের মূল স্রোতে ফিরে আসার আহ্বান জানান। তাঁর সেই বক্তব্যেই অনেক মাওবাদী প্রভাবিত হয়ে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সরকারি নীতি অনুযায়ী, আত্মসমর্পণকারীদের মোট ১.৪১ কোটি টাকা পুরস্কার হিসেবে বিতরণ করা হবে। পাশাপাশি প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছে ২৫,০০০ টাকা করে তাৎক্ষণিক আর্থিক সাহায্য। তেলেঙ্গানার মাওবাদীরা রাজ্যের পুনর্বাসন–প্যাকেজের সুবিধাও পাবেন বলে জানিয়েছেন ডিজিপি।
ডিজিপি জানান, বর্তমানে তেলেঙ্গানার ৫৯ জন মাওবাদী এখনো ভূগর্ভস্থ অবস্থায় সক্রিয়। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য মুপল্লা লক্ষ্মণ রাও ওরফে গণপতি, মল্লা রাজি রেড্ডি ওরফে সঙ্গ্ৰাম, তিপ্পিরি তিরুপতি ওরফে দেবজি, পাক্কা হনুমান্থু ওরফে গনেশ, এবং বড়ে চোকারাও ওরফে দামোদর। পাশাপাশি রাজ্য কমিটির আরও দশ সদস্য এখনো আত্মসমর্পণ করেননি।
ডিজিপির বার্তা, “যাঁরা এখনও আত্মসমর্পণ করেননি, তাঁরা দ্রুত সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসুন। সহিংসতার পথ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেই উন্নত ভবিষ্যতের পথ খুলে যাবে।”
