মণিপুর (manipur) পুলিশ, কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (সিএপিএফ) এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর সমন্বিত অভিযানে শনিবার (১৪ জুন, ২০২৫) পাঁচটি উপত্যকা জেলার উপকণ্ঠে অভিযান চালিয়ে ৩২৮টি অস্ত্র এবং প্রচুর পরিমাণে গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।
এই অভিযান মণিপুরে (manipur) শান্তি ও নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে ছয়টি একে সিরিজের রাইফেল, ১৫১টি সেল্ফ-লোডিং রাইফেল (এসএলআর), ৬৫টি ইনসাস রাইফেল, মর্টার, পিস্তল, কার্বাইন এবং ৫,০০০-এর বেশি রাউন্ড গোলাবারুদ রয়েছে।
অভিযানের বিবরণ
মণিপুর (manipur) পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এডিজিপি) লহরি দোর্জি লহাতু জানিয়েছেন, এই অভিযান গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ১৩-১৪ জুন মধ্যরাতে ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম, বিষ্ণুপুর, কাকচিং এবং থৌবাল জেলার উপকণ্ঠে চালানো হয়। এই অভিযানে মণিপুর পুলিশের সঙ্গে সিএপিএফ, ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং আসাম রাইফেলস যৌথভাবে অংশ নেয়।
উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ১২টি লাইট মেশিনগান, ২টি এমপি-৫, ২টি আমোঘ রাইফেল, ১টি এআর-১৫ রাইফেল, ৬টি পিস্তল, ২টি ফ্লেয়ার গান এবং ১টি মর্টার। এছাড়াও, ১০,৬০০-এর বেশি গোলাবারুদ, ৫৯১টি ম্যাগাজিন, ১০টি গ্রেনেড, ৩টি ল্যাথোড এবং ৭টি ডেটোনেটর উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩,৫৩৪টি এসএলআর রাউন্ড, ২,১৮৬টি ইনসাস রাউন্ড, ২,২৫২টি .৩০৩ রাউন্ড, ২৩৪টি একে রাউন্ড এবং ৪০৭টি আমোঘ রাউন্ড উল্লেখযোগ্য।
পটভূমি এবং তাৎপর্য
মণিপুরে (manipur) ২০২৩ সালের ৩ মে থেকে শুরু হওয়া জাতিগত সহিংসতার পর থেকে রাজ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এই সহিংসতার সময় পুলিশের অস্ত্রাগার থেকে প্রায় ৬,০০০ অস্ত্র এবং লক্ষাধিক গোলাবারুদ লুট হয়েছিল। এই অভিযানে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্রও রয়েছে, যা রাজ্যে অবৈধ অস্ত্রের বিস্তার রোধে একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মণিপুর (manipur) পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত অভিযান রাজ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এডিজিপি লহাতু বলেন, “এই অভিযান মণিপুর পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি বড় অর্জন।
আমরা শান্তি ও জনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” তিনি আরও জানান, এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারা নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে এই প্রক্রিয়াকে আরও জোরদার করবেন।
জনগণের সহযোগিতার আহ্বান
মণিপুর (manipur) পুলিশ জনগণের কাছে আবেদন জানিয়েছে যে তারা অবৈধ অস্ত্র বা সন্দেহজনক কার্যকলাপ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করুন। তারা নিকটবর্তী থানা বা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে এই ধরনের তথ্য জানানোর জন্য অনুরোধ করেছে। পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “জনগণের সহযোগিতা ছাড়া এই ধরনের অভিযানে পূর্ণ সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। আমরা সকলকে এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে উৎসাহিত করছি।”
পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা
মণিপুরে (manipur) অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী গত কয়েক মাস ধরে একাধিক অভিযান পরিচালনা করেছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি মণিপুরের রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লা লুট হওয়া এবং অবৈধ অস্ত্র সমর্পণের জন্য সাত দিনের সময়সীমা ঘোষণা করেছিলেন। এই আবেদনের পর ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ১,০২৩টি অস্ত্র এবং প্রচুর গোলাবারুদ সমর্পণ করা হয়েছে। তবে, কুকি-জো গোষ্ঠীগুলি পৃথক প্রশাসনের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্র সমর্পণ না করার ঘোষণা দিয়েছে।
এর আগে, ২৭ মে ইম্ফাল পূর্ব জেলার চাডং এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনী গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ৩৫ কেজি বিস্ফোরক সহ পাঁচটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) উদ্ধার করে। একইভাবে, ১ জুন চুরাচাঁদপুর জেলার খুয়াংমুন এলাকায় অভিযানে দুটি আইইডি, সাতটি অস্ত্র এবং অন্যান্য যুদ্ধ সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।
রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি (manipur)
মণিপুরে (manipur) ২০২৩ সালের মে মাস থেকে মেইতেই এবং কুকি-জো সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সহিংসতা চলছে, যা মণিপুর হাইকোর্টের মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশের পর শুরু হয়। এই সহিংসতায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। লুট হওয়া অস্ত্র এবং অবৈধ অস্ত্রের বিস্তার রাজ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
নিরাপত্তা বাহিনী এবং পুলিশের এই সমন্বিত প্রচেষ্টা রাজ্যে শান্তি পুনরুদ্ধারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবৈধ অস্ত্রের বিস্তার রোধ এবং জনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
দলে নেই, তবুও সাদা জার্সিতে ইংল্যান্ডে খেলবেন তারকা ভারতীয় ক্রিকেটার
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
এই অভিযান মণিপুরে (manipur) শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে। তবে, কুকি-জো গোষ্ঠীর অস্ত্র সমর্পণে অস্বীকৃতি এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা রাজ্যের পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। রাজ্যপালের আবেদন সত্ত্বেও অবৈধ অস্ত্র সম্পূর্ণভাবে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, যা নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এছাড়াও, অস্ত্র লুটের ঘটনা এবং পুলিশের ইউনিফর্মে সশস্ত্র ব্যক্তিদের উপস্থিতি নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের ইউনিফর্মে সশস্ত্র ব্যক্তিরা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর উপর আক্রমণ করেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
মণিপুরে ৩২৮টি অস্ত্র এবং প্রচুর গোলাবারুদ উদ্ধারের এই অভিযান রাজ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। মণিপুর পুলিশ, সিএপিএফ, ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং আসাম রাইফেলসের সমন্বিত প্রচেষ্টা রাজ্যে অবৈধ অস্ত্রের বিস্তার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তবে, জাতিগত সহিংসতা এবং লুট হওয়া অস্ত্রের সমস্যা সমাধানের জন্য আরও দীর্ঘমেয়াদী কৌশল প্রয়োজন। জনগণের সহযোগিতা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর অব্যাহত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মণিপুরে শান্তি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।