বিহারের সীতামঢ়িতে তিরহুত বিধান পরিষদ (এমএলসি) নির্বাচনের আগে নিরাপত্তা বাড়ানোর অংশ হিসেবে পুলিশ একটি গাড়ি আটক করেছে, যাতে প্রায় ₹১.৫২ লাখ নগদ টাকা, প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ পার্টির (Jansuraj Party) প্রচারপত্র এবং নির্বাচনী সামগ্রী পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার রাতে দুমরা থানার অন্তর্গত এলাকায় রুটিন যানবাহন চেকিংয়ের সময় এই ঘটনা ঘটে।
গাড়ি ও আটককৃত ব্যক্তিদের পরিচিতি
পুলিশ জানায়, একটি সাদা গাড়ি, যাতে “ভারত সরকার” লেখা ছিল, সেটিকে আটকানো হয়। গাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় নগদ ₹১.৫২ লাখ, জান সুরাজ পার্টির প্রচারপত্র এবং অন্যান্য নির্বাচনী সামগ্রী। সীতামঢ়ি জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মনোজ কুমার তিওয়ারি বলেন, “যানবাহন চেকিংয়ের সময় পুলিশ একটি সাদা গাড়ি থামায়। এর ভেতর থেকে নগদ টাকা এবং প্রচারপত্র উদ্ধার করা হয়। গাড়িতে থাকা তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আটক ব্যক্তিরা স্বীকার করেছে যে তারা জান সুরাজ পার্টির সদস্য।”
ভোটার প্রভাবিত করার সম্ভাবনা?
উদ্ধার হওয়া টাকা এবং নির্বাচনী সামগ্রীর প্রাথমিক তদন্তে ভোটারদের প্রভাবিত করার সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। যদিও পুলিশ এখনো নিশ্চিত করেনি যে এই টাকা ভোট কেনার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে।
এই ঘটনার মাধ্যমে সীতামঢ়ি পুলিশের সক্রিয় ভূমিকার পরিচয় পাওয়া গেছে, যারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং ভোট কেনার মতো অনিয়ম প্রতিরোধে উদ্যোগ নিয়েছে।
তিরহুত বিধান পরিষদ নির্বাচন: ত্রিমুখী লড়াই
আগামী ৫ ডিসেম্বর তিরহুত বিধান পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এই নির্বাচন মূলত তিনজন প্রার্থীর মধ্যে লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে: জেডিইউ-এর অভিষেক ঝা, আরজেডি-র গোপী কিষাণ এবং জান সুরাজ পার্টির ড. বিনায়ক গৌতম।
ড. বিনায়ক গৌতম একটি সুপরিচিত রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছেন। তিনি প্রাক্তন বিধান পরিষদ সদস্য রামকুমার সিং-এর পুত্র এবং বিহারের প্রাক্তন মন্ত্রী রঘুনাথ পান্ডের নাতি। তার এই পারিবারিক রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড ভোটারদের মধ্যে আবেগের এক বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে।
নির্বাচনী প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
জেলা প্রশাসন তিরহুত নির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জেলাজুড়ে মোট ৫৪টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
এসপি তিওয়ারি জানিয়েছেন, “জেলা প্রশাসন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করতে বদ্ধপরিকর।” ভোটকেন্দ্রগুলির মধ্যে সদর দপ্তরে চারটি, শহরে দুটি এবং প্রতিটি ব্লকে দুটি করে বুথ স্থাপন করা হয়েছে।
রাজনৈতিক উত্তাপ এবং জনসুরাজ পার্টির ভূমিকা
তিরহুত বিধান পরিষদের আসনটি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে ড. বিনায়ক গৌতমের অংশগ্রহণ এই উত্তাপকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তার প্রার্থিতা শুধুমাত্র পারিবারিক ঐতিহ্যই নয়, বরং জান সুরাজ পার্টির সামগ্রিক প্রভাব এবং ভোটারদের উপর প্রভাব ফেলার সম্ভাবনাও বাড়িয়েছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
আটককৃত ব্যক্তিদের থেকে উদ্ধার করা সামগ্রীর উৎস এবং উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখতে তদন্ত চলছে। জেলা প্রশাসন নিশ্চিত করেছে যে কোনো ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনাটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় প্রশাসনের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভোটারদেরও এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে তাদের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে হবে।