নয়াদিল্লির কাছ থেকে প্রায় ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক, ২০টি টাইমার এবং জইশ-ই-মহম্মদের ৭ জন জঙ্গিকে গ্রেফতারের ঘটনাটি গোটা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। আটক জঙ্গিদের মধ্যে চিকিৎসকও রয়েছে—এমন তথ্যই আলাদা উদ্বেগ তৈরি করেছে। এত বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার হওয়ায় এখন দুইটি বড় প্রশ্ন সামনে এসেছে—কাদের বা কোন জায়গাকে লক্ষ্য করে এই পরিকল্পনা ছিল? এবং কীভাবে এত বিপুল বিস্ফোরক রাজধানীর এত কাছে পৌঁছে গেল অথচ কেউ টের পেল না?
প্রথম প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—লক্ষ্যবস্তু কে বা কোথায় ছিল?
জইশ-ই-মহম্মদ সাধারণত উচ্চ প্রোফাইল টার্গেট বেছে নেয়—সরকারি ভবন, নিরাপত্তা অবকাঠামো, সেনাবাহিনী বা পুলিশ ক্যাম্প, অথবা জনবহুল এলাকা। ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক একক এলাকায় ভয়াবহ ধ্বংস ডেকে আনতে পারত। প্রশাসনিক সূত্রগুলি বলছে, এই পরিমাণ বিস্ফোরক সাধারণত বড় আকারের ব্লাস্টের জন্য ব্যবহৃত হয়—যেখানে উদ্দেশ্য শুধু ক্ষয়ক্ষতি নয়, বৃহৎ আতঙ্ক সৃষ্টি করা। টাইমারের সংখ্যাও ইঙ্গিত দেয় যে, একাধিক জায়গায় সমন্বিত বিস্ফোরণের পরিকল্পনা থাকতে পারে। তবে তদন্তে নিশ্চিত প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তু অনুমান করা কঠিন।
দ্বিতীয় প্রশ্নটি আরও উদ্বেগজনক—এত বিপুল বিস্ফোরক কীভাবে পৌঁছল, অথচ নজরে এল না?
এখানে কয়েকটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন—
১. সাপ্লাই চেইন ভেঙে গিয়ে ছোট ছোট চালানের মাধ্যমে পরিবহণ:
বিস্ফোরক হয়তো একসঙ্গে নয়, ধাপে ধাপে দেশে প্রবেশ করেছে। ছোট ছোট অংশে আনা হলে নজর এড়ানো সহজ হয়।
২. সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাককে কভার হিসেবে ব্যবহার:
দীর্ঘ দূরত্বে ট্রাক চলাচল সাধারণ ঘটনা, তাই সহজেই লুকিয়ে আনা যায়। অনেক সময় ভুয়ো কাগজপত্র বা অস্থায়ী রুটের তথ্য ব্যবহার করেও ট্রাক চলাচল ঘটানো হয়।
৩. গ্রাউন্ড-লেভেল নেটওয়ার্ক বা স্থানীয় সহযোগী:
এ ধরনের অপারেশনে সাধারণত স্থানীয় সহযোগী বা নেটওয়ার্ক দরকার হয়। গ্রেফতার হওয়া ৭ জনের মধ্যে পেশাদার মানুষ থাকায় তদন্তকারীরা মনে করছেন, পরিকল্পনা খুব সূক্ষ্মভাবে সাজানো হয়েছিল।
৪. সীমান্তের দুর্বল পর্যবেক্ষণ বা ফাঁকফোকর ব্যবহার:
পাকিস্তান থেকে ভারতে সরাসরি নয়, বরং নেপাল বা অন্য কোনও রুট ব্যবহার করা হয়েছিল কি না—তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ধরনের পথ জঙ্গিদের আগেও ব্যবহৃত হয়েছে।
যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—এই ঘটনায় স্পষ্ট বোঝা যায়, একটি বড় বিপদ ও বহু মানুষের প্রাণহানি খুব অল্পের জন্য এড়ানো গেছে। বিস্ফোরক, টাইমার, প্রশিক্ষিত জঙ্গি—সব মিলিয়ে এটি ছিল একটি উচ্চ পর্যায়ের অপারেশন।
তদন্তকারীরা এখন মনোযোগ দিচ্ছেন—
কারা এই অপারেশন পরিচালনা করছিল
ফান্ডিং কোথা থেকে
ভারতীয় শহরের কোন জায়গাকে লক্ষ্য করে পরিকল্পনা
নেটওয়ার্কের অন্যান্য সদস্য বা লজিস্টিক সাপোর্ট কোথায়
এই ঘটনার পর নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এটা শুধু উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরকের গল্প নয়। এটা দেখিয়ে দিচ্ছে, সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ক ভারতের ভেতরে প্রবেশের নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। নজর আরও কড়া করা জরুরি।”
বর্তমানে তদন্ত চলমান, এবং সঠিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যবস্তু উদঘাটনের আগে প্রশাসন বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে চায় না। তবে দুটি প্রশ্নই সামনে স্পষ্ট—কে ছিল টার্গেট? আর কীভাবে এত বড় বিপদ চোখ এড়িয়ে দেশে ঢুকে গেল?
এই ঘটনার পর ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা কৌশল ও সীমান্ত পর্যবেক্ষণ আরও শক্ত করার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।


