২৬/১১ র মূল ষড়যন্ত্রী রানা হাসানাবাদাল একাডেমিতে প্রশিক্ষিত, অস্বীকার পাকিস্তানের

26/11 Mastermind Rana Hassanabadal Trained at Academy, Pakistan Denies Allegations পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে কুখ্যাত তাহাওয়ার হুসেন রানার (rana) প্রশিক্ষণ নিয়ে নতুন করে…

rana accused

26/11 Mastermind Rana Hassanabadal Trained at Academy, Pakistan Denies Allegations

পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে কুখ্যাত তাহাওয়ার হুসেন রানার (rana) প্রশিক্ষণ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন পুলিশ মহানির্দেশক (ডিজিপি) মঙ্গলবার একটি বিস্ফোরক মন্তব্যে বলেছেন, “পাকিস্তানের জন্য ‘অস্বীকার’ই এখন মূল ও গুঞ্জন শব্দ।

তাহাওয়ার রানা (rana) পাকিস্তানের হাসানাবাদাল একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।” এই মন্তব্য ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে অভিযুক্ত রানার প্রতি ভারতের দীর্ঘদিনের দাবি এবং পাকিস্তানের অস্বীকৃতির প্রেক্ষাপটে এসেছে।

তাহাওয়ার রানা (rana)কে 

তাহাওয়ার রানা, একজন পাকিস্তানি-কানাডিয়ান নাগরিক, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হেফাজতে রয়েছেন। তিনি মুম্বাই হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতের কাছে প্রত্যর্পণের মুখোমুখি। প্রাক্তন ডিজিপি, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, দাবি করেছেন যে, রানা পাকিস্তানের হাসানাবাদালে অবস্থিত একটি সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, যা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।

তিনি বলেন, “পাকিস্তান বারবার তাদের ভূখণ্ডে সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। কিন্তু রানার ক্ষেত্রে এটা স্পষ্ট যে, তিনি হাসানাবাদালে প্রশিক্ষিত হয়েছেন। এটি পাকিস্তানের দ্বৈত নীতির আরেকটি প্রমাণ।”

রানার পটভূমি ও মুম্বাই হামলা

তাহাওয়ার রানা (rana) ২০০৮ সালের ২৬/১১ মুম্বাই হামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে অভিযোগ। এই হামলায় লস্কর-ই-তৈয়বার ১০ জন সন্ত্রাসী মুম্বাইয়ে হামলা চালিয়ে ১৬৬ জনকে হত্যা করে এবং শতাধিক মানুষকে আহত করে। রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তার সহযোগী ডেভিড কোলম্যান হেডলির সঙ্গে মিলে হামলার পরিকল্পনায় সহায়তা করেছিলেন। হেডলি, যিনি মার্কিন তদন্তকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন, জানিয়েছিলেন যে, রানার ইমিগ্রেশন বিজনেস মুম্বাইয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।

২০২৩ সালে মার্কিন আদালত রানাকে মুম্বাই হামলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগ থেকে মুক্তি দিলেও, তিনি অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে জড়িত থাকার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। ভারত এখনও তাঁর প্রত্যর্পণের জন্য চাপ দিচ্ছে, যা পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কলহ প্রকাশ্যে, ফাঁস কীর্তি-কল্যাণের হোয়াটস্যাপ চ্যাট

হাসানাবাদাল একাডেমির ভূমিকা

হাসানাবাদাল, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত, পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমির (পিএমএ) কাছাকাছি একটি এলাকা। প্রাক্তন ডিজিপি দাবি করেছেন, “রানা এখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, যা পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। পাকিস্তান এই ধরনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অস্তিত্ব অস্বীকার করে, কিন্তু গোয়েন্দা তথ্যে এর সত্যতা প্রমাণিত।” তিনি আরও বলেন, “এটি শুধু রানার ক্ষেত্রে নয়, অনেক সন্ত্রাসবাদী এই ধরনের প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে কাজ করেছে।”

Advertisements

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, পাকিস্তানের ভূখণ্ডে এমন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে জঙ্গি সংগঠনগুলোকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে বালাকোট হামলার পরও এমন অভিযোগ উঠেছিল। তবে, পাকিস্তান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।

প্রাক্তন ডিজিপির মন্তব্য

প্রাক্তন ডিজিপি, যিনি উত্তরপ্রদেশে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, বলেন, “পাকিস্তানের অস্বীকার করার প্রবণতা এখন তাদের পরিচয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রানার মতো ব্যক্তিরা এই প্রশিক্ষণের ফসল। তিনি হাসানাবাদালে প্রশিক্ষিত হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িয়েছেন।” তিনি পাকিস্তানের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এই অস্বীকৃতি তাদের বাঁচাতে পারবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন তাদের প্রকৃত চেহারা বুঝতে পেরেছে।”

রাজনৈতিক ও আইনি প্রতিক্রিয়া

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বারবার পাকিস্তানের কাছে রানার প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছে। ২০২৪ সালে ভারত-মার্কিন প্রত্যর্পণ চুক্তির আলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই দাবি আরও জোরালো হয়েছে। তবে, পাকিস্তান এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। বিজেপি নেতা অমিত মালবিয়া বলেন, “পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের কারখানা। রানার প্রত্যর্পণ না হলে এই ধরনের ঘটনা বন্ধ হবে না।” অন্যদিকে, বিরোধী নেতারা সরকারের কাছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর কূটনৈতিক পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক প্রভাব

রানার প্রত্যর্পণ মামলা এখন মার্কিন আদালতে বিচারাধীন। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এই বিষয়ে একটি শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, “এটি শুধু রানার বিষয় নয়, পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ক উন্মোচনের প্রশ্ন।” পাকিস্তানের অস্বীকৃতি সত্ত্বেও, ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের উপর চাপ বাড়াচ্ছে।

সমাজে প্রতিক্রিয়া

সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “পাকিস্তানের অস্বীকার আমাদের আর অবাক করে না। কিন্তু ভারতের উচিত এই ষড়যন্ত্রের জবাব দেওয়া।” আরেকজন বলেন, “রানার প্রত্যর্পণ না হলে ন্যায়বিচার মিলবে না।”

প্রাক্তন ডিজিপির এই মন্তব্য তাহাওয়ার রানার প্রশিক্ষণ এবং পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তানের ‘অস্বীকার’ নীতি এবং ভারতের প্রত্যর্পণের দাবি এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরেছে। রানার ভাগ্য এখন মার্কিন আদালতের হাতে, তবে এই বিতর্ক ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা যোগ করেছে।