সন্তানহীন দম্পতিদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে কোটি টাকার শিশু পাচার (child trafficking) চক্র চালানোর অভিযোগে তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের বিভিন্ন স্থানে একযোগে অভিযান চালিয়ে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সেকেন্দ্রাবাদের ‘ইউনিভার্সাল সৃষ্টি ফার্টিলিটি সেন্টার’-এর মালিক ডা. আথালুরি নাম্রাতা, তাঁর সহযোগী চার চিকিৎসক, ল্যাব টেকনিশিয়ান, এজেন্ট এবং এমনকি পাচার হওয়া শিশুদের কিছু প্রকৃত বাবা-মাও।
তদন্তে জানা গেছে, গত ১৫ বছর ধরে ওই সেন্টার আইভিএফ ও সারোগেসি পরিষেবার আড়ালে অবৈধভাবে শিশু বিক্রির কাজ চালাচ্ছিল। বাস্তবে কোনও সারোগেসি প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হয়নি। দম্পতিদের কাছ থেকে ৩০–৪০ লক্ষ টাকা নিয়ে ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের ভান করা হতো, আর নয় মাস পর আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারের কাছ থেকে কেনা শিশু তাদের হাতে তুলে দেওয়া হতো। শিশুদের প্রকৃত বাবা-মাকে দেওয়া হতো মাত্র ৯০ হাজার টাকা, অথচ একটি মেয়ের জন্য ৩.৫ লক্ষ টাকা এবং ছেলের জন্য ৪.৫ লক্ষ টাকা এজেন্টদের মাধ্যমে আদায় করা হতো। দম্পতিদের বোঝানোর জন্য জাল মেডিকেল ও ডিএনএ রিপোর্টও সরবরাহ করা হত।
নর্থ জোন ডিসিপি এস রশ্মি পেরুমাল জানান, “তারা একদিকে সন্তানহীন দম্পতিদের ঠকিয়েছে, অন্যদিকে গরিব বাবা-মায়ের কাছ থেকে তাদের সন্তান কিনে নিয়েছে।”
গত ২৭ জুলাই রাজস্থানের এক দম্পতির অভিযোগের পর তদন্ত শুরু হয়। স্বাধীন ডিএনএ পরীক্ষায় তারা জানতে পারেন, সারোগেসির মাধ্যমে পাওয়া শিশুর সঙ্গে তাদের কোনো জিনগত সম্পর্ক নেই। পরে গোপালপুরম থানায় আরও আটটি মামলা দায়ের হয়। এক ঘটনায়, ২২ লক্ষ টাকা নেওয়ার পর নকল সারোগেসির মাধ্যমে একটি মৃত শিশু দেখানো হয়। অন্য ঘটনায়, ১৯ লক্ষ টাকা দিয়ে পাওয়া প্রি-টার্ম কন্যাশিশুর সঙ্গেও দম্পতির কোনও জিনগত মিল পাওয়া যায়নি। প্রতিবাদ করলে অভিযুক্তরা তাদের হুমকি দেয়।
এই ঘটনায় দুটি শিশুকে সরকারি কেন্দ্র ‘শিশু বিহার’-এ পাঠানো হয়েছে, কারণ তাদের প্রকৃত বাবা-মা তাদের ছেড়ে দিয়েছেন এবং প্রতারিত দম্পতিরাও ফিরিয়ে দিয়েছেন।
ডা. আথালুরি নাম্রাতার বিরুদ্ধে এর আগে প্রতারণা, শিশু পাচার ও মেডিকেল জালিয়াতির মতো অভিযোগে প্রায় ১৫টি মামলা হয়েছিল। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে হায়দরাবাদ পুলিশ কমিশনার মামলাটি সেন্ট্রাল ক্রাইম স্টেশনের বিশেষ তদন্তকারী দলের হাতে তুলে দিয়েছেন।