চণ্ডীগড়: পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় বৃহস্পতিবার সকালে এক বাড়িতে জমিয়ে রাখা আতশবাজি হঠাৎই বিস্ফোরিত (Fireworks explosion) হয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি করে। এই দুর্ঘটনায় অন্তত ২৪ জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১০ জনই শিশু। ভয়াবহ এই বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডে সমগ্র এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে চরম বিশৃঙ্খলা ও আতঙ্কের পরিবেশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনাটি ঘটে লুধিয়ানার এক আবাসিক এলাকায়। বাড়ির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আতশবাজি এবং পটকা মজুত করে রাখা ছিল। হঠাৎই কোনো অজানা কারণে আগুন ধরে যায় সেই আতশবাজিগুলিতে। মুহূর্তের মধ্যে টানা একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাড়িজুড়ে। ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে যায় আশপাশের এলাকা। বিস্ফোরণের শব্দে ভয়ে আশেপাশের লোকজন ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন।
ঘটনার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইঞ্জিন। আগুন নেভানোর কাজে প্রায় সাতটি দমকলের ইঞ্জিন অংশ নেয়। প্রায় দু’ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। তবে ততক্ষণে বাড়িটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায় এবং পাশের দুইটি বাড়িও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
লুধিয়ানা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শিশুদের শরীরের বড় অংশ দগ্ধ হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। আহতদের চিকিৎসা চলছে লুধিয়ানার সিভিল হাসপাতাল এবং গুরু নানক হাসপাতালে।
পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে, ওই বাড়িতে বেআইনি ভাবে আতশবাজি মজুত করা হয়েছিল। দুর্ঘটনার উৎস খুঁজতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ও দমকল কর্তৃপক্ষ। ফরেন্সিক টিম ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “এই বাড়িতে কোনো আতশবাজি রাখার অনুমতি ছিল না। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাড়িটিতে প্রায়শই আতশবাজি আনা-নেওয়া হত। অনেকেই আগে থেকে প্রশাসনকে সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু তাতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দুর্ঘটনার পর ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর দাবি, বেআইনি আতশবাজি ব্যবসার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছান লুধিয়ানার জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা। তাঁরা আহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন এবং প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দেন। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আহতদের চিকিৎসার সমস্ত খরচ সরকার বহন করবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে।
ঘটনাটি দীপাবলির পরদিন ঘটলেও এটি উৎসব-পরবর্তী আতশবাজি সংরক্ষণের বিপজ্জনক দিকটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আতশবাজি ও পটকা জাতীয় দ্রব্য নির্দিষ্ট নিরাপত্তা বিধি মেনে সংরক্ষণ না করলে এই ধরনের দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী।
বর্তমানে লুধিয়ানার ওই এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রশাসন গোটা এলাকা ঘিরে রেখেছে এবং স্থানীয়দের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়িটি ও আশেপাশের এলাকায় এখনও ধোঁয়া বের হচ্ছে বলে জানা গেছে।
