১৯৯০ এর জঙ্গি হামলায় বিস্ফোরক সাক্ষ্যে জড়াল প্রধানমন্ত্রীর নাম

1990-rawalpora-iaf-terror-attack-yasin-malik-testimony-breaking-news

শ্রীনগর, ২৩ নভেম্বর: কাশ্মীরের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়ের ৩৫ বছর পরে যেন নতুন করে রহস্য উন্মোচন হল। ১৯৯০ সালের ২৫ জানুয়ারি শ্রীনগরের রাওয়ালপোরা এলাকায় ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলায় চার ভারতীয় বিমানবাহিনী অফিসার নৃশংসভাবে খুন হয়েছিলেন। সেই ঘটনার মূল শুটার ছিলেন জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএলএফ) প্রধান ইয়াসিন মালিক এমনই বিস্ফোরক দাবি করলেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর এক প্রাক্তন স্টাফ।

Advertisements

এই কর্মী নিজে সেই দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং চোখের সামনে দেখেছেন ইয়াসিন মালিকের নেতৃত্বে কীভাবে আইএএফ-এর গাড়িতে অতর্কিত গুলি চালানো হয়েছিল।প্রাক্তন এয়ারফোর্স কর্মী স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) রবীন্দ্র পান্ডে (নাম পরিবর্তিত) সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমি নিজের চোখে দেখেছি ইয়াসিন মালিক কালাশনিকভ হাতে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে গুলি চালাচ্ছেন। তার পাশে আরও দু-তিনজন সন্ত্রাসবাদী ছিল।

   

শিল্প-কর্মসংস্থান নেই! মাথাপিছু ঋণে কপালে ভাঁজ বাঙালির

চারজন অফিসারকে রাস্তায় ফেলে একেবারে কাছ থেকে গুলি করা হয়।” তিনি আরও জানিয়েছেন, সেই সময় তিনি নিজেও গুলিবিদ্ধ হন এবং অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। এত বছর পরে তিনি মুখ খুলেছেন কারণ “এই সত্যটা দেশবাসীর জানা উচিত”।

১৯৯০-এর সেই হত্যাকাণ্ড ভারতের জন্য এক কলঙ্কিত দিন। কাশ্মীরে হিন্দু পণ্ডিতদের গণহত্যা ও নির্যাতনের মধ্যেই এই ঘটনা ঘটেছিল। চারজন নিরীহ আইএএফ অফিসার উইং কমান্ডার রমেশ কুমার ভাটিয়া, স্কোয়াড্রন লিডার রবি খান্না, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পি.এস. বেদি এবং কর্পোরাল ডি.কে. পাণ্ডে সেদিন সকালে রুটিন ডিউটিতে যাচ্ছিলেন।

Advertisements

হঠাৎই জেকেএলএফ-এর সন্ত্রাসবাদীরা তাদের গাড়ি আটকায় এবং কোনও সুযোগ না দিয়ে গুলি চালায়। চারজনের মধ্যে তিনজন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান, একজন হাসপাতালে মারা যান। ইয়াসিন মালিকের নাম সেই সময় থেকেই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল, কিন্তু এত বছর ধরে তিনি আইনের ফাঁকফোকরে বারবার বেঁচে গেছেন। একবার নয়, একাধিকবার তাকে গ্রেফতার করা হলেও মামলা গুলি কার্যত ঝুলে থেকেছে।

আর সবচেয়ে বিতর্কিত ঘটনা ঘটেছিল ২০০৮-২০১০ সালের দিকে, যখন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের আমলে ইয়াসিন মালিককে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে (পিএমও) ভিআইপি অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেই সময় মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং কাশ্মীর নীতিতে ‘টক টু সেপারেটিস্ট’ নীতির অংশ হিসেবে যাসিন মালিকের মতো ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসানো হয়েছিল।

অনেকে এখনও প্রশ্ন তোলেন যে ব্যক্তির হাতে চারজন সেনা অফিসারের রক্ত লেগে আছে, তাকে কীভাবে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে লাল গালিচা সম্বর্ধনা দেওয়া হল? সেই ছবিগুলো এখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়ায়, যেখানে ইয়াসিন মালিক হাসিমুখে দিল্লির উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে করমর্দন করছেন। সেই সময় কংগ্রেসের নেতারা বলেছিলেন, “শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য এটা দরকার”। কিন্তু শান্তি এল কোথায়? বরং তারপরেও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ থামেনি, উল্টে আরও বেড়েছে।