কাশ্মীরে ফের ভয়াবহ বিপর্যয়। জনপ্রিয় তীর্থস্থান বৈষ্ণোদেবী যাত্রাপথে (Vaishno Devi Yatra) অর্ধকুয়াড়ি এলাকার ইন্দরপ্রস্থ ভোজনালয়ের কাছে ভয়াবহ ভূমিধসের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৫ জন ভক্তের। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন, যাদের মধ্যে অন্তত ৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। সোমবার গভীর রাতে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। রাতভর উদ্ধারকাজ চলে এবং মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত মৃতদেহগুলি কাটরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আহতদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের বড়সড় বাহিনী। পাশাপাশি, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের (SDRF) একাধিক দল মোতায়েন করা হয়েছে উদ্ধারকাজে। রাতভর চলে ব্যাপক তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান। পাহাড়ি রাস্তা এবং বৃষ্টির কারণে উদ্ধারকাজে বিপত্তি তৈরি হলেও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে মৃতদেহ এবং আহতদের বের করা হচ্ছে। শ্রীমাতা বৈষ্ণোদেবী শ্রাইন বোর্ড (SMVDSB) জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং জম্মু প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে।
প্রবল রাতভর বৃষ্টিপাত এবং ভয়াবহ ভূমিধসের কারণে বৈষ্ণোদেবী যাত্রা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। জম্মু এবং আশেপাশের জেলাগুলিতে বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছে কারণ বেশ কিছু বড় নদীর জলস্তর বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের তরফে যাত্রী এবং স্থানীয়দের কেবলমাত্র শ্রাইন বোর্ডের সরকারি নির্দেশিকা ও আপডেট মেনে চলার অনুরোধ করা হয়েছে।
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (IMD) জম্মু-কাশ্মীরের জন্য লাল সতর্কতা জারি করেছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরও ভারী বৃষ্টি এবং বজ্রঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ সতর্কতায় রাখা হয়েছে কাঠুয়া, সাম্বা, ডোডা, জম্মু, রামবান এবং কিশতওয়ার জেলা। চেনাব নদীর জল বিপদসীমার অনেক উপরে বইছে, ফলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলিতে আগেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে। SDRF ও রাজ্য পুলিশের বিশেষ দল নদী তীরবর্তী এলাকায় মোতায়েন রয়েছে এবং বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে।
প্রশাসনের তরফে বৈষ্ণোদেবী যাত্রায় আসা ভক্তদের আপাতত পাহাড়ি রাস্তা এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাত্রা পুনরায় শুরু হওয়ার আগে সমস্ত রাস্তা মেরামত এবং নিরাপত্তা যাচাই করা হবে। শ্রাইন বোর্ড জানিয়েছে, আবহাওয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নতুন যাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন আপাতত বন্ধ থাকবে। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
টানা বৃষ্টিপাতে জম্মু এবং কাশ্মীরের পাহাড়ি জেলাগুলিতে একাধিক জায়গায় ভূমিধসের খবর পাওয়া গেছে। রাস্তা ভেঙে পড়ার ফলে জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়ক এবং তীর্থযাত্রীদের যাতায়াতের রাস্তা আংশিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের তরফে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে প্রাথমিক ত্রাণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা। তিনি মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে জানিয়েছেন, আহতদের চিকিৎসার জন্য সরকার সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে। দুর্ঘটনাস্থল এবং আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ও ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।