উত্তরপ্রদেশের হাথরাস জেলায় একটি মর্মান্তিক ঘটনায় ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীর উপর ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে ৩ আগস্ট ২০২৫, রবিবার সন্ধ্যায়, যখন মেয়েটি তার বাড়িতে একা ছিল। অভিযোগ, তার প্রতিবেশীর ২০ বছর বয়সী এক আত্মীয় দেবেশ এই জঘন্য কাণ্ড ঘটিয়েছে।
সার্কেল অফিসার (সদাবাদ) অমিত পাঠক জানিয়েছেন, মেয়েটির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত দেবেশ বর্তমানে পলাতক, এবং পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের জন্য তল্লাশি চালাচ্ছে। ঘটনাটি স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে, এবং এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি উঠেছে।
হাথরাসে এর আগেও একাধিক ধর্ষণের ঘটনা জাতীয় শিরোনামে এসেছে, যা উত্তরপ্রদেশে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। ২০২০ সালে একটি ১৯ বছর বয়সী দলিত মেয়ের গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের সূত্রপাত করেছিল। সেই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা এবং তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। এই সাম্প্রতিক ঘটনা আবারও সেই আলোচনাকে উস্কে দিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েটির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে, এই ঘটনায় স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও উদ্বেগ ছড়িয়েছে। হাথরাসের মতো এলাকায়, যেখানে অতীতে এই ধরনের অপরাধ বারবার ঘটেছে, স্থানীয় বাসিন্দারা এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো সরকারের কাছে দ্রুত ও কঠোর বিচারের দাবি জানিয়েছে।
এই ঘটনার পর মেয়েটিকে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে যে, তারা এই মামলার তদন্তে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে সকল প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে, এই ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে পুলিশি তৎপরতা এবং সামাজিক সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলছেন।
এই ঘটনা কেবল হাথরাসেই নয়, গোটা উত্তরপ্রদেশে নারী নিরাপত্তার ইস্যুকে আবারও সামনে এনেছে। জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি) ২০২১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশে নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধের হার সবচেয়ে বেশি। এই পরিস্থিতিতে, সরকার এবং প্রশাসনের উপর চাপ বাড়ছে যাতে এই ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনার পর মেয়েটির পরিবার শোকাহত এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তারা অভিযুক্তের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে। এদিকে, সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হচ্ছে, এবং অনেকে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা এবং সামাজিক সংস্কারের দাবি তুলছেন।
আগামী দিনগুলোতে পুলিশের তদন্ত কোন দিকে যায় এবং অভিযুক্ত দেবেশকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় কিনা, তা নিয়ে সকলের দৃষ্টি রয়েছে। এই ঘটনা শুধু হাথরাসের নয়, গোটা দেশের নারী নিরাপত্তার প্রশ্নকে আরও জোরালো করেছে।