নয়াদিল্লি ২৭ সেপ্টেম্বর: মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নেমে চাঞ্চল্য তৈরী করেছে মাত্র ১১ র এক ছাত্র (Supreme Court)। দিল্লি সরকারের সিএম শ্রী স্কুলে ক্লাস ষষ্ঠ, সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য চালু করা প্রবেশিকা পরীক্ষার বিরুদ্ধে এই ছোট্ট ছাত্রের আবেদন ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আবেদনকারী জনমেশ নামক এই ছাত্র দাবি করেছে যে, এই পরীক্ষা সংবিধানের ২১-এ ধারা এবং শিশু অধিকার সংরক্ষণ ও বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষা অধিকার আইন, ২০০৯-এর (আরটিই আইন) ১৩ নং ধারা লঙ্ঘন করে।
জনমেশের ওই আবেদন সংবিধানের ৩২ নং ধারার অধীনে দায়ের করা হয়েছে, যা মৌলিক অধিকারের সরাসরি সুরক্ষা নিশ্চিত করে। আবেদনে বলা হয়েছে যে, সিএম শ্রী স্কুলগুলোকে ‘নির্দিষ্ট শ্রেণীর’ (স্পেসিফায়েড ক্যাটাগরি) হিসেবে আরটিই আইনের ২(পি) ধারায় সংজ্ঞায়িত করা হলেও, এগুলো ১৩ নং ধারার বাইরে নয়।
এই ধারা স্পষ্টভাবে বলে যে, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাত্র নির্বাচনের জন্য কোনো ধরনের স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া—যেমন প্রবেশিকা পরীক্ষা চালাতে পারবে না। জনমেশের ক্ষেত্রে, তিনি ২০২৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর দিল্লি সরকারের ২৩ জুলাই-এর সার্কুলার অনুসারে এই পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এটিকে তিনি বৈষম্যপূর্ণ এবং অবৈধ বলে অভিহিত করেছেন।
সিএম শ্রী স্কুলসমূহ হলো রাষ্ট্রীয় শিক্ষা নীতি (এনইপি) ২০২০ এবং জাতীয় পাঠ্যক্রম ফ্রেমওয়ার্ক ২০২৩-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি উদ্যোগ। এগুলো প্রধানমন্ত্রী শ্রী স্কুলসমূহের রাজ্য-স্তরীয় সংস্করণ, যা দিল্লিতে ৭৫টি মডেল স্কুলকে আধুনিক অবকাঠামোসহ বিশ্বমানের শিক্ষা প্রদানের জন্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে চালু হয়েছে।
দিল্লি সরকারের শিক্ষা পরিচালনা অধিদপ্তর (ডিওই) এই স্কুলগুলোর জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে এবং ২০২৫ সেপ্টেম্বরে উদ্বোধনের পরিকল্পনা করেছে। ভর্তির জন্য অনলাইন আবেদন ৩০ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত চলেছিল, অ্যাডমিট কার্ড ২৩ আগস্ট থেকে পাওয়া যায় এবং পরীক্ষা ৩০ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়। ফলাফল ১০ সেপ্টেম্বর ঘোষণা হয়েছে এবং চূড়ান্ত ভর্তি ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা। এই স্কুলগুলোতে ভর্তির জন্য শুধুমাত্র দিল্লির বাসিন্দা এবং স্বীকৃত স্কুলে পড়া ছাত্রছাত্রীরা যোগ্যতাসম্পন্ন।
আবেদনকারীর পক্ষ থেকে জোর দেওয়া হয়েছে যে, আরটিই আইনের আচার্যবদ্ধতা সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপর প্রযোজ্য, বিশেষ করে ৬ থেকে ১৪ বছরের শিশুদের জন্য বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষা নিশ্চিত করতে। আইনটি ২০০৯ সালে কার্যকর হয়েছে এবং সংবিধানের ২১-এ ধারা দ্বারা সমর্থিত, যা রাষ্ট্রকে এই অধিকার বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়।
আবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, দিল্লি হাইকোর্টের একটি পূর্ববর্তী রায়ে ‘নির্দিষ্ট শ্রেণীর’ স্কুলগুলোতে আরটিই প্রযোজ্য নয় বলা হলেও, এটি সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনকারী কয়েকটি নির্দেশনা চেয়েছেন: সিএম শ্রী স্কুলে ১৩ নং ধারা প্রযোজ্য ঘোষণা, ২৩ জুলাই-এর সার্কুলার বাতিল এবং লটারি পদ্ধতিতে ভর্তি পরিচালনা।
এই আবেদন শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ বলে মনে করছেন অনেকেই । দিল্লির মতো মহানগরীতে, যেখানে সরকারি স্কুলগুলোর মান উন্নয়নের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে, প্রবেশিকা পরীক্ষা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারের শিশুদের বঞ্চিত করে। আরটিই আইনের লক্ষ্য হলো প্রতিটি শিশুকে তার আশেপাশের স্কুলে সমান সুযোগ প্রদান, যাতে কোনো স্ক্রিনিং ছাড়াই শিক্ষা অর্জন সম্ভব হয়।
কলকাতা থেকে জেলা প্যান্ডেল হপিং এবার রাজ্য পুলিশের ‘সবার পুজো’ অ্যাপে
জনমেশের মতো ছোট্ট একজনের এই লড়াই দেশব্যাপী শিক্ষা সংস্কারের দাবিকে জোরালো করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি সুপ্রিম কোর্ট এই আবেদন গ্রহণ করে, তাহলে এটি সিএম শ্রী-এর মতো উদ্যোগগুলোর ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করবে এবং লটারি পদ্ধতিকে বাধ্যতামূলক করে তুলতে পারে।