পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারতে গুপ্তচরবৃত্তির (jyoti-malhotra) বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযানে তিন দিনে হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই অভিযুক্তরা পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর জন্য সংবেদনশীল তথ্য সরবরাহ করছিল বলে অভিযোগ।
জ্যোতি মালহোত্রা (jyoti-malhotra)
গ্রেফতার হওয়া দের মধ্যে হরিয়ানার ট্রাভেল ভ্লগার জ্যোতি মালহোত্রা (jyoti-malhotra)অন্যতম, যিনি তার ইউটিউব চ্যানেলের আড়ালে গুপ্তচরবৃত্তি করছিলেন। অন্যান্য অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্র, নিরাপত্তা প্রহরী, সাধারণ নাগরিক এবং একজন অ্যাপ ডেভেলপার।
২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এর প্রতিশোধ হিসেবে ভারত অপারেশন সিঁদুর শুরু করে, যা পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এই হামলার পর গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার হয়, যার ফলে এই গ্রেফতারগুলো সম্ভব হয়েছে(jyoti-malhotra)।
গ্রেফতারের পদ্ধতি
অভিযুক্তদের সোশ্যাল মিডিয়া, আর্থিক প্রলোভন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, মেসেজিং অ্যাপ এবং পাকিস্তানে ব্যক্তিগত সফরের মাধ্যমে গুপ্তচর নেটওয়ার্কে টানা হয়। তরুণ ব্যক্তি এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের ব্যবহার গুপ্তচরবৃত্তির নতুন ধরনকে তুলে ধরেছে, যেখানে নিরীহ চ্যানেলগুলো তথ্য সংগ্রহের জন্য শোষিত হচ্ছে।
গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা
জ্যোতি মালহোত্রা (jyoti-malhotra)
হিসারের ইউটিউবার জ্যোতি, (jyoti-malhotra)যার চ্যানেল ‘ট্রাভেল উইথ জো’-তে ৩.৮৫ লক্ষ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে, পাকিস্তানি এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন। তিনি ২০২৩, ২০২৪ এবং ২০২৫ সালের মার্চে পাকিস্তান ভ্রমণ করেন। পাকিস্তানি দূতাবাসের কর্মকর্তা এহসান-উর-রহিম ওরফে ড্যানিশের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল, যিনি সম্প্রতি ভারত থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। জ্যোতির (jyoti-malhotra)পাকিস্তান ও কাশ্মীর ভ্রমণ তদন্তাধীন। তিনি পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডে রয়েছেন।
গাজালা ও ইয়ামিন মোহাম্মদ
পাঞ্জাবের মালেরকোটলার ৩২ বছর বয়সী বিধবা গাজালা এবং ইয়ামিন মোহাম্মদকে ড্যানিশের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন এবং ভিসা-সংক্রান্ত কার্যকলাপের জন্য গ্রেফতার করা হয়। তারা পাকিস্তানি এজেন্টদের কাছে তথ্য সরবরাহ করে অর্থ পেতেন।
দেবেন্দর সিং
পাঞ্জাবের পটিয়ালার ২৫ বছর বয়সী রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র দেবেন্দর সিংকে হরিয়ানার কৈথালে গ্রেফতার করা হয়। তিনি পটিয়ালা সামরিক ছাউনির ছবি আইএসআই এজেন্টদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। গত বছর তিনি পাকিস্তান সফর করেন।
ভারতের এশিয়া কাপ বয়কট গুজব! সত্যতা নেই, জানালেন বোর্ড সচিব
আরমান
নুহের ২৬ বছর বয়সী আরমান ভারতীয় সেনাবাহিনীর তথ্য হোয়াটসঅ্যাপে পাকিস্তানি নম্বরে পাঠাচ্ছিলেন। তার ফোন থেকে কথোপকথন, ছবি এবং ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে।
তারিফ
নুহের দ্বিতীয় ব্যক্তি তারিফ পাকিস্তান দূতাবাসের দুজনের সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন। তিনি সিরসা বিমানবন্দরের ছবি পাঠানোর নির্দেশ পেয়েছিলেন।
নওমান ইলাহি
হরিয়ানার পানিপথে ২৪ বছর বয়সী নওমান, উত্তরপ্রদেশের কৈরানার বাসিন্দা, একটি কারখানার নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কাজ করতেন। তিনি একাধিকবার পাকিস্তান সফর করেছেন।
মোহাম্মদ মুর্তজা আলি
পাঞ্জাবের জালন্ধরে গ্রেপ্তার মুর্তজা নিজের তৈরি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে গুপ্তচরবৃত্তি করছিলেন। তার কাছ থেকে চারটি মোবাইল ফোন এবং তিনটি সিম কার্ড বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
শেহজাদ
উত্তরপ্রদেশের রামপুরের শেহজাদ মোরাদাবাদে গ্রেফতার হন। তিনি পাকিস্তানে একাধিকবার সফর করেছেন এবং প্রসাধনী, পোশাক ও মশলার অবৈধ ব্যবসার আড়ালে গুপ্তচরবৃত্তি করছিলেন। তিনি ১৪ দিনের জুডিশিয়াল হেফাজতে রয়েছেন।
সুখপ্রীত সিং
পাঞ্জাবের গুরুদাসপুরে সুখপ্রীতকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি অপারেশন সিঁদুর -সম্পর্কিত তথ্য আইএসআই-এর কাছে পাঠাচ্ছিলেন। তার অ্যাকাউন্টে ১ লক্ষ টাকা জমা হয়েছিল।
করণবীর সিং
গুরুদাসপুরে গ্রেফতার করণবীর আইএসআই হ্যান্ডলারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগে ছিলেন এবং সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাঠাচ্ছিলেন। তিনি মাদক চোরাচালানেও জড়িত ছিলেন।
তদন্তের অগ্রগতি
তদন্তে দেখা গেছে, অভিযুক্তরা পাকিস্তানি হ্যান্ডলারদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম এবং অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করত। পুলিশ তাদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস বিশ্লেষণ করছে এবং নেটওয়ার্কের অন্যান্য সদস্যদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে।
এই গ্রেপ্তারগুলো ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি প্রকাশ করে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং তরুণদের ব্যবহার করে গুপ্তচরবৃত্তির নতুন পদ্ধতি নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে, এবং আরও গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা রয়েছে।