আধার কার্ড দিয়ে নাগরিকত্ব প্রমাণ করা সম্ভব নয়, সুপ্রিম কোর্টে বড় দাবি

আজকের দিনে আধার কার্ড আমাদের জীবনের এক অপরিহার্য নথিতে পরিণত হয়েছে। ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা হোক, বা রেশন কার্ড তৈরি, মোবাইল সিম নেওয়া হোক বা আয়কর…

SSC Faces Legal Challenge in Calcutta HC Over Controversial Hiring Norms"

আজকের দিনে আধার কার্ড আমাদের জীবনের এক অপরিহার্য নথিতে পরিণত হয়েছে। ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা হোক, বা রেশন কার্ড তৈরি, মোবাইল সিম নেওয়া হোক বা আয়কর রিটার্ন, সবেতেই আধার নম্বর প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। ফলে অনেকেই ধরে নিচ্ছেন, আধার কার্ডই একজন নাগরিকের পরিচয় ও নাগরিকত্বের চূড়ান্ত প্রমাণ। কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল বলে জানাচ্ছে ভারতের নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশনের স্পষ্ট বক্তব্য, আধার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নয়। এটি মূলত একটি বাসিন্দা-ভিত্তিক পরিচয়পত্র, যা ভারতের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বসবাসকারী ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য দেয়। অর্থাৎ, কেউ যদি দীর্ঘদিন ভারতে বসবাস করেন, তাঁর আধার কার্ড থাকতে পারে, কিন্তু তা এই প্রমাণ করে না যে তিনি ভারতীয় নাগরিক।

   

তাহলে আধার কী?

আধার একটি বায়োমেট্রিক ভিত্তিক পরিচয়পত্র, যা ভারতের UIDAI (Unique Identification Authority of India) কর্তৃক জারি করা হয়। এতে ব্যক্তির নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা এবং আঙুলের ছাপ ও চোখের মণির স্ক্যান অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই তথ্যগুলি মূলত ব্যক্তি চিহ্নিতকরণে সহায়ক হয়, বিশেষ করে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পরিষেবার ক্ষেত্রে।

নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য কী প্রয়োজন?

নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য যেসব নথি গ্রহণযোগ্য, তার মধ্যে রয়েছে:

জন্মসনদ

ভারতীয় পাসপোর্ট

নাগরিকত্ব শংসাপত্র (যদি কেউ প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক না হন এবং পরবর্তীকালে নাগরিকত্ব পান)

Advertisements

ভোটার কার্ড (EPIC) – যদিও এক্ষেত্রেও ভোটার তালিকায় নাম থাকলেই কেউ নাগরিক, এমন বলা যায় না।

ভোটার তালিকায় নাম তোলার প্রক্রিয়া

নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স হলে ভারতীয় নাগরিকরা ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আবেদন করতে পারেন। এই সময় আবেদনকারীকে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত উপযুক্ত প্রমাণ দিতে হয়। নির্বাচন কমিশন আধার নম্বর চেয়ে থাকলেও, তা ঐচ্ছিক এবং শুধুমাত্র পরিচয় যাচাইয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়, নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য নয়।

আধার ও নাগরিকত্ব বিতর্ক: কেন এত জটিলতা?

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এনআরসি (National Register of Citizens) ও সিএএ (Citizenship Amendment Act) নিয়ে দেশজুড়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তাতে অনেকেই ভয় বা বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। অনেকে মনে করছেন আধার কার্ড থাকলেই তারা নিরাপদ, আবার কেউ কেউ ভাবছেন আধার না থাকলে হয়তো তারা ‘নাগরিক’ হিসেবে স্বীকৃত হবেন না। কিন্তু বাস্তব হল—আধার কার্ড কেবলমাত্র একজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করার উপায়, নাগরিকত্ব নির্ধারণ করার নয়।

নির্বাচন কমিশনের বার্তা

নির্বাচন কমিশনের তরফে একাধিকবার জানানো হয়েছে, আধার নম্বর সংগ্রহ করা হচ্ছে শুধুমাত্র ভোটার তালিকা বিশুদ্ধিকরণে। অর্থাৎ, যাতে একাধিকবার নাম তোলা না হয় বা মৃত ব্যক্তিদের নাম তালিকায় না থাকে। কিন্তু কোনও পরিস্থিতিতেই এটি নাগরিকত্ব নির্ধারণে ব্যবহৃত হবে না।