Indian Cinema with Bold: ভারতীয় সিনেমা, বিশেষ করে হিন্দি সিনেমা, দীর্ঘদিন ধরে পুরুষদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলিতে নারী চলচ্চিত্র নির্মাতারা তাঁদের সৃজনশীলতা ও দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে এই শিল্পকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন। জোয়া আখতার এবং পায়েল কাপাডিয়ার মতো নির্মাতারা হিন্দি সিনেমা এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ গল্প বলার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী দর্শকদের মন জয় করছেন। ২০২৫ সালের ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল সার্কিটে, বিশেষ করে ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অফ লস অ্যাঞ্জেলেস (আইএফএফএলএ)-এ তাঁদের কাজ নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাঁদের চলচ্চিত্র নারীদের জীবন, সংগ্রাম এবং আকাঙ্ক্ষাকে কেন্দ্র করে গভীর এবং সংবেদনশীল গল্প উপস্থাপন করছে।
জোয়া আখতার, এক্সেল এন্টারটেইনমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্মাতা, হিন্দি সিনেমায় বাণিজ্যিক এবং শৈল্পিক দিকের এক অসাধারণ সমন্বয় ঘটিয়েছেন। তাঁর ‘জিন্দগি না মিলেগি দোবারা’ (২০১১) একটি রোড ট্রিপ সিনেমা যা হিন্দি সিনেমার জন্য একটি সাংস্কৃতিক পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হয়। এই চলচ্চিত্রটি বন্ধুত্ব, জীবনের উদ্দেশ্য এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার গল্পকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছিল। জোয়ার পরিচালনায় আরও কিছু উল্লেখ “লাক বাই চান্স” (২০০৯), “গালি বয়” (২০১৯) এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ‘মেড ইন হেভেন’ সিরিজ তাঁর বহুমুখী প্রতিভার প্রমাণ। এই কাজগুলো শুধু বিনোদনই নয়, সমাজের বিভিন্ন দিক যেমন শ্রেণি, লিঙ্গ এবং সংস্কৃতির মতো বিষয়গুলোকে তুলে ধরেছে। তাঁর নির্মিত ‘দ্য আর্চিস’ (২০২৩) নতুন প্রজন্মের তারকাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি হিন্দি সিনেমার বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে গেছে। জোয়া আখতারের গল্প বলার ধরন আধুনিক ভারতের জটিলতা এবং সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধিকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরছে।
অন্যদিকে, পায়েল কাপাডিয়া তাঁর প্রথম ফিচার ফিল্ম ‘অল উই ইমাজিন অ্যাস লাইট’ (২০২৪) দিয়ে বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলেছেন। এই চলচ্চিত্রটি ৭৭তম কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গ্র্যান্ড প্রিক্স জিতেছে, যা ভারতীয় সিনেমার জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। হিন্দি, মারাঠি এবং মালয়ালম ভাষায় নির্মিত এই ছবিটি মুম্বাইয়ের তিনজন প্রবাসী নারীর জীবনের গল্প বলে। এটি একাকীত্ব, হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের রাজনৈতিক জটিলতা এবং নারীদের স্বাধীনতার সংগ্রামকে তুলে ধরে। পায়েলের কথায়, “ভারতে প্রেম খুবই রাজনৈতিক। নারীদের উপর পরিবারের সম্মান এবং জাতি ধরে রাখার দায়িত্ব চাপানো হয়।” তাঁর এই ছবি নিউ ইয়র্ক ফিল্ম ক্রিটিকস সার্কেল এবং টরন্টো ফিল্ম ক্রিটিকস অ্যাসোসিয়েশনের ‘বেস্ট ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম’ পুরস্কার জিতেছে এবং দুটি গোল্ডেন গ্লোব মনোনয়ন পেয়েছে। ২০২৫ সালের আইএফএফএলএ-তে এই ছবিটি একটি বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে উপস্থাপিত হবে, যা দক্ষিণ এশীয় সিনেমার বৈচিত্র্য এবং নারী নির্মাতাদের প্রভাব প্রদর্শন করবে।
জোয়া এবং পায়েলের কাজ হিন্দি সিনেমায় নারী কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করছে। জোয়ার বাণিজ্যিক সিনেমা এবং ওটিটি কনটেন্টে সমাজের বিভিন্ন স্তরের গল্প বলার ক্ষমতা তাঁকে একজন পথিকৃৎ করে তুলেছে। অন্যদিকে, পায়েলের ইন্ডি সিনেমা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতীয় নারীদের জীবনের সূক্ষ্ম চিত্র তুলে ধরছে। তাঁরা দুজনেই প্রমাণ করেছেন যে আবেগপ্রধান গল্প সাংস্কৃতিক সীমানা অতিক্রম করে সর্বজনীনভাবে দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পারে।
২০২৫ সালের ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল সার্কিটে, বিশেষ করে আইএফএফএলএ-তে, নারী নির্মাতাদের কাজ বিশেষভাবে উদযাপিত হচ্ছে। আইএফএফএলএ-র শৈল্পিক পরিচালক আনু রঙ্গচার বলেছেন, “এই বছরের লাইনআপ দক্ষিণ এশীয় সিনেমার সমৃদ্ধ বৈচিত্র্য উদযাপন করছে, যেখানে নারী নির্মাতাদের গল্পগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেয়েছে।” জোয়া এবং পায়েল ছাড়াও অন্যান্য নারী নির্মাতারা যেমন রিমা দাস, শুচি তালাতি এবং কিরণ রাও তাঁদের কাজের মাধ্যমে ভারতীয় সিনেমার গল্প বলার ধারাকে পুনর্নির্মাণ করছেন।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো এই নারী নির্মাতাদের জন্য নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। জোয়ার ‘মেড ইন হেভেন’ এবং ‘দ্য আর্চিস’ নেটফ্লিক্স এবং অ্যামাজন প্রাইমের মতো প্ল্যাটফর্মে বিশ্বব্যাপী দর্শকদের কাছে পৌঁছেছে। এই প্ল্যাটফর্মগুলো নারী নির্মাতাদের স্বাধীনভাবে তাঁদের গল্প বলার সুযোগ দিয়েছে, যা আগে বাণিজ্যিক সিনেমার সীমাবদ্ধতার মধ্যে সম্ভব ছিল না। পায়েলের ‘অল উই ইমাজিন অ্যাস লাইট’ও আন্তর্জাতিক বিতরণের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী দর্শকদের কাছে পৌঁছেছে।
নারী নির্মাতারা ভারতীয় সিনেমায় একটি নতুন যুগের সূচনা করছেন। তাঁদের গল্পগুলো শুধুমাত্র বিনোদন নয়, সমাজের গভীরে লুকিয়ে থাকা সমস্যাগুলো তুলে ধরছে। জোয়া এবং পায়েলের কাজ ভারতীয় সিনেমাকে বিশ্ব মঞ্চে নতুন পরিচয় দিচ্ছে, যা ২০২৫ সালের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আরও স্পষ্ট হবে।