মুক্তির আগে আগাম বুকিংয়েই লক্ষ লক্ষ টাকা আয় দ্য বেঙ্গল ফাইলসের

ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে পরিচালক বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রি (Vivek Agnihotri) আবারও আলোচনার কেন্দ্রে। তাঁর নতুন ছবি ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ (The Bengal Files) মুক্তির আগেই বক্স অফিসে…

The Bengal Files Advance Booking Soars: Earns Over ₹20 Lakh Before September 5 Release

ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে পরিচালক বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রি (Vivek Agnihotri) আবারও আলোচনার কেন্দ্রে। তাঁর নতুন ছবি ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ (The Bengal Files) মুক্তির আগেই বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে। মাত্র দু’দিনের আগাম বুকিংয়েই ছবিটি আয় করেছে ২০ লক্ষ টাকারও বেশি। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩৯২টি শো-র জন্য ১,৯২৮টি টিকিট বিক্রি হয়েছে এবং এর মোট গ্রস আয় দাঁড়িয়েছে ২১.৮৭ লক্ষ টাকা। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, দর্শকদের মধ্যে ছবিটি নিয়ে প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

ট্রিলজির শেষ অধ্যায়
অগ্নিহোত্রির নাম ইতিমধ্যেই ‘ফাইলস ট্রিলজি’র সঙ্গে যুক্ত। ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য তাশকেন্দ ফাইলস’ লালবাহাদুর শাস্ত্রীর রহস্যময় মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয়েছিল এবং জাতীয় পুরস্কারও জিতেছিল। এরপর ২০২২ সালে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উচ্ছেদের কাহিনি তুলে ধরে বিশাল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বিশ্বব্যাপী ৩৪০ কোটিরও বেশি আয় করা সেই ছবিটি জাতীয় একীকরণের সেরা ছবির পুরস্কার পায়। এবার ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ সেই ট্রিলজির শেষ অধ্যায়।

   

কাহিনি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
ছবিটির মূল কাহিনি আবর্তিত হয়েছে ১৯৪৬ সালের ডিরেক্ট অ্যাকশন ডে-এর দাঙ্গাকে কেন্দ্র করে। মুসলিম লীগের ঘোষণার পর কলকাতা থেকে শুরু হওয়া এই দাঙ্গা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল নোয়াখালি, টিপেরা ও কুমিল্লায়। ঐতিহাসিক অনুমান অনুযায়ী, তখন ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ মানুষ প্রাণ হারান, যাদের মধ্যে বেশিরভাগ ছিলেন হিন্দু। অগ্নিহোত্রি ছবিটিকে ‘হিন্দু গণহত্যা’ হিসেবে চিত্রিত করেছেন এবং দাবি করেছেন যে ইতিহাসের এই অধ্যায় ইচ্ছাকৃতভাবে চাপা দেওয়া হয়েছে।

গল্পে একজন তদন্তকারী অফিসারের চরিত্র রয়েছে, যিনি একটি নিখোঁজ ব্যক্তির মামলার সূত্রে করাপশনের জাল ফাঁস করেন। পাশাপাশি, আরেকটি চরিত্র ভারতের বিভাজনের আগের সাম্প্রদায়িক হিংসার প্রেক্ষাপটকে অন্বেষণ করে। অগ্নিহোত্রি জানিয়েছেন, ছবিটির জন্য তিনি নিউইয়র্ক টাইমস, টাইম ম্যাগাজিনসহ নানা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় আর্কাইভ থেকে গবেষণা করেছেন।

তারকাদের উপস্থিতি
ছবিটিতে একঝাঁক তারকা অভিনয় করেছেন। মিথুন চক্রবর্তী একজন পাগলের চরিত্রে, অনুপম খের মহাত্মা গান্ধীর ভূমিকায়, পল্লবী জোশী ‘মা ভারতী’ এবং দর্শন কুমার শিবা পণ্ডিত হিসেবে। এছাড়াও রয়েছেন সশ্বতা চট্টোপাধ্যায়, সিমরাত কৌর, নমশী চক্রবর্তী, রাজেশ খেরা, পুনিত ইসসর, দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য, সৌরভ দাস ও মোহন কাপুর। ছবিটি প্রযোজনা করেছেন আভিষেক অগারওয়াল ও পল্লবী জোশী, আর সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন সামার্থ শ্রীনিবাসন। ছবির বাজেট প্রায় ২০ কোটি টাকা।

Advertisements

বিতর্ক ও প্রতিবন্ধকতা
ছবির জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে বিতর্কও বাড়ছে। ১৬ আগস্ট কলকাতায় ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠানে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। অগ্নিহোত্রি অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক চাপে থিয়েটার চেইন অনুষ্ঠান বাতিল করে। কলকাতা পুলিশ অবশ্য জানিয়েছিল, অনুমতি ছাড়া কোনও পাবলিক স্ক্রিনিং করা যায়নি। অগ্নিহোত্রি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ করেছিলেন, “এই ছবি ঘৃণা নয়, সত্য প্রকাশের চেষ্টা।”

আরেকটি বড় বিতর্ক তৈরি হয়েছে গোপাল চন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে। তাঁর নাতি সন্তানু মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন যে ছবিতে দাদার চরিত্র বিকৃত করা হয়েছে। যদিও পরিচালক বলেছেন, তিনি গোপালকে নায়ক হিসেবেই দেখিয়েছেন। অভিনেতা সশ্বতা চট্টোপাধ্যায়ও বলেছেন, “আমি অভিনেতা, ইতিহাসবিদ নই। ইতিহাস নিয়ে মতবিরোধ থাকলে আদালতে যাওয়া উচিত।”

দর্শকদের প্রতিক্রিয়া
ট্রেলার মুক্তির পর থেকেই দর্শকরা আলোচনায় মেতেছেন। রক্তাক্ত দৃশ্য, সহিংসতার চিত্র এবং সংলাপ মানুষকে চমকে দিয়েছে। টিজারে বলা হয়েছে, “যদি কাশ্মীর আপনাকে আঘাত করে, বাংলা আপনাকে ভূত করে তুলবে।” অগ্নিহোত্রির কথায়, “এটি কেবল ছবি নয়, আত্মার কাঁপুনি।”

‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ নিছক বিনোদনের জন্য নয়, বরং ঐতিহাসিক সচেতনতারও একটি প্রচেষ্টা। মুক্তির আগেই অ্যাডভান্স বুকিং ছবিটির জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিয়েছে। তবে বিতর্ক ও রাজনৈতিক চাপের কারণে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে ছবির মুক্তি ঘিরে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তবুও দর্শকরা অপেক্ষা করছেন— কীভাবে সিনেমা হলের পর্দায় বাংলার ইতিহাসের এই অন্ধকার অধ্যায় নতুনভাবে জীবন্ত হয়ে ওঠে।