বলিউডের বাজারে হানা দক্ষিণী ব্লকবাস্টার এলটু-কুলি

Bollywood vs South Indian films: ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে ২০২৫ সাল একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে, যেখানে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা তাদের শক্তিশালী গল্প, বড় তারকা…

South Indian cinema L2 Empuraan and Coolie Challenge Bollywood Dominance

Bollywood vs South Indian films: ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে ২০২৫ সাল একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে, যেখানে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা তাদের শক্তিশালী গল্প, বড় তারকা এবং কৌশলগত মুক্তির মাধ্যমে বলিউডের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করছে। মোহনলাল অভিনীত মালয়ালম ছবি এল২: এমপুরান এবং রজনীকান্তের তামিল ছবি কুলি বনাম বলিউডের সালমান খানের সিকান্দর এবং হৃতিক রোশন ও জুনিয়র এনটিআর অভিনীত ওয়ার ২-এর মধ্যে উচ্চ-প্রোফাইল সংঘর্ষ এই প্রতিযোগিতার প্রমাণ। দক্ষিণ ভারতীয় ছবিগুলির খাঁটি গল্প বলার ধরন, উচ্চ প্রযোজনা মান, এবং প্যান-ইন্ডিয়া আবেদন বলিউডের তুলনায় তাদের বক্স অফিসে এগিয়ে রাখছে। এই প্রতিবেদনে আমরা এই সংঘর্ষের বিশ্লেষণ করছি এবং বক্স অফিস প্রক্ষেপণের তথ্য তুলে ধরছি।

এল২: এমপুরান-এর বিশাল সাফল্য
পৃথ্বীরাজ সুকুমারান পরিচালিত এল২: এমপুরান মালয়ালম সিনেমার ইতিহাসে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে। ২০১৯ সালের লুসিফার-এর সিক্যুয়েল হিসেবে এই ছবিটি ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ মুক্তি পায় এবং প্রথম দিনেই বিশ্বব্যাপী ৬৫ কোটি টাকা আয় করে মালয়ালম সিনেমার সর্বোচ্চ ওপেনিং রেকর্ড গড়ে। ছয় দিনের মধ্যে এটি বিশ্বব্যাপী ২১৯ কোটি টাকা আয় করে, যা সালমান খানের সিকান্দর-এর তুলনায় ৬৯ কোটি টাকা বেশি। সৌদি আরবে এই ছবিটি ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৯.২৫ কোটি টাকা) আয় করে, সিকান্দর এবং বীরা ধীরা সূরন-এর তুলনায় অনেক এগিয়ে।

   

এল২: এমপুরান তার শক্তিশালী গল্প, মোহনলালের চৌম্বকীয় উপস্থিতি, এবং আন্তর্জাতিক মানের অ্যাকশন দৃশ্যের জন্য প্রশংসিত হয়েছে। এটি কেবল মালয়ালম বাজারেই নয়, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও দর্শকদের মন জয় করেছে। ছবিটির প্যান-ইন্ডিয়া আবেদন এবং আগ্রাসী প্রচারণা এটিকে বলিউডের বড় ছবির সঙ্গে টক্কর দিতে সক্ষম করেছে।

কুলি: রজনীকান্তের বড় বাজি
লোকেশ কনগরাজ পরিচালিত কুলি ২০২৫ সালের ১৪ আগস্ট মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে, যা ওয়ার ২-এর সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে যাবে। রজনীকান্তের বিশাল ফ্যান বেস এবং লোকেশের সমকালীন পরিচালনা শৈলীর সমন্বয়ে এই ছবিটি তামিল সিনেমার পাশাপাশি হিন্দি বেল্টেও বড় প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। কুলি-তে আমির খান, নাগার্জুন, শিবকার্তিকেয়ন, এবং উপেন্দ্রের মতো তারকাদের ক্যামিও এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

বাণিজ্য বিশ্লেষক রমেশ বালা বলেন, “দক্ষিণ ভারতীয় ছবিগুলি তাদের আঞ্চলিক বাজারে শক্তিশালী পারফরম্যান্স দেখায় এবং উত্তর ভারতেও দর্শকদের মন জয় করে। পুষ্পা ২-এর হিন্দি বাজারে সাফল্যের মতো কুলিও এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারে।” কুলি-র বক্স অফিস প্রক্ষেপণ এখনও স্পষ্ট না হলেও, এটি বিশ্বব্যাপী ৩০০-৫০০ কোটি টাকা আয় করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, বিশেষ করে রজনীকান্তের প্যান-ইন্ডিয়া আবেদন এবং স্বাধীনতা দিবসের ছুটির সুবিধার কারণে।

Advertisements

বলিউডের চ্যালেঞ্জ: সিকান্দর ও ওয়ার ২
সালমান খান অভিনীত সিকান্দর ২০২৫ সালের ঈদে (৩০ মার্চ) মুক্তি পেয়েছে এবং প্রথম দিনে বিশ্বব্যাপী ৪৫-৫৪ কোটি টাকা আয় করেছে। তবে, এটি এল২: এমপুরান-এর তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে এবং প্রথম দিনে ভিকি কৌশলের ছাওয়া-র (৪৭.২৫ কোটি টাকা) রেকর্ডও ভাঙতে পারেনি। মিশ্র প্রতিক্রিয়া এবং অনলাইন পাইরেসির কারণে সিকান্দর প্রত্যাশিত গতি ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ছয় দিনে এটি বিশ্বব্যাপী ১৫০.৭৫ কোটি টাকা আয় করেছে, যা ২০০ কোটি টাকার বাজেটের তুলনায় কম।

অন্যদিকে, ওয়ার ২ হৃতিক রোশন এবং জুনিয়র এনটিআর-এর সমন্বয়ে একটি বড় প্রত্যাশা তৈরি করেছে। আদিত্য চোপড়ার স্পাই ইউনিভার্সের অংশ হিসেবে এই ছবিটি ১৪ আগস্ট মুক্তি পাবে। তবে, কুলি-র সঙ্গে সংঘর্ষ এবং দক্ষিণ ভারতীয় বাজারে এনটিআর-এর ফ্যান বেস সত্ত্বেও তামিল বাজারে কুলি-র আধিপত্য এটিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। ওয়ার ২-এর প্রক্ষেপিত আয় ২৫০-৪০০ কোটি টাকা, তবে এটি কুলি-র রজনীকান্ত ফ্যাক্টরের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার শক্তি
দক্ষিণ ভারতীয় ছবিগুলির সাফল্যের পিছনে রয়েছে তাদের খাঁটি গল্প, শক্তিশালী চরিত্র, এবং উচ্চ প্রযোজনা মান। পুষ্পা, কেজিএফ, এবং বাহুবলী-র মতো ছবিগুলি হিন্দি বেল্টে বিশাল সাফল্য পেয়েছে, যা বলিউডের জন্য অর্জন করা কঠিন। এল২: এমপুরান এবং কুলি এই ধারা অব্যাহত রেখেছে, যেখানে তারা আঞ্চলিক বাজারে আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি হিন্দি বাজারেও শক্তিশালী পারফরম্যান্স দেখাচ্ছে। কৌশলগত মুক্তির তারিখ, যেমন ঈদ (এল২: এমপুরান) এবং স্বাধীনতা দিবস (কুলি), দর্শকদের আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বলিউডের জন্য এটি একটি শিক্ষণীয় মুহূর্ত। তারকা-নির্ভরতার পরিবর্তে গল্প-কেন্দ্রিক এবং উদ্ভাবনী কনটেন্ট তৈরির উপর জোর দিতে হবে। এল২: এমপুরান এবং কুলি-র সাফল্য প্রমাণ করে যে ভারতীয় দর্শকরা বৈচিত্র্যময় এবং মানসম্পন্ন গল্পের জন্য প্রস্তুত। ২০২৫ সালে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার এই উত্থান ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।