শনিবার সন্ধ্যায়, প্রজাতন্ত্র দিবসের এক দিন আগে, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মশ্রী (Padma Shri) প্রাপকদের নাম ঘোষণা করেছেন। ২০২৫ সালের পদ্ম পুরস্কারের তালিকায় ১১৩ জন রয়েছেন, ১৯ জন পদ্মভূষণ পুরস্কার পাচ্ছেন এবং ৭ জন পদ্মবিভূষণ পুরস্কার পাচ্ছেন। এই বছরের পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপকদের মধ্যে অন্যতম হলেন পন্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার। তিনি ভারতের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অঙ্গনে এক বিরল প্রতিভা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
পন্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সরোদ বাদকদের মধ্যে একজন। বর্তমানে তেজেন্দ্র নারায়ণের বয়স ৬৩। শনিবার,তিনি আইআইটি খড়গপুরের স্প্রিং ফেস্টে সরোদ বাজাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন পন্ডিত বিক্রম ঘোষ। এই সময়েই তার পদ্মশ্রী পাওয়ার খবরটি প্রকাশ্যে আসে। সেই মুহূর্তেই তিনি পুরস্কারটি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে উৎসর্গ করেন।
তেজেন্দ্র মজুমদারের সঙ্গীত যাত্রা শুরু হয়েছিল ম্যান্ডোলিন দিয়ে। তবে তার প্রকৃত দিশা ছিল সরোদের দিকে। এর মাধ্যমে তিনি বিশ্বজুড়ে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিশেষত্ব তুলে ধরেছেন। তার সঙ্গীত শিক্ষার শুরু হয়েছিল দাদু বিভূতি রঞ্জন মজুমদারের কাছ থেকে। যিনি উস্তাদ বাহাদুর খানের ছাত্র ছিলেন। এরপর তিনি উস্তাদ আলি আকবর খানের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নেন।
নিজের অতীত এবং পরিবারকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পন্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘আমার মা একজন স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন আর বাবা সেতার বাজাতেন ছোটখাটো মিউজিক প্রোডাকশনের জন্য। বাবার অনেক দায়িত্ব ছিল। তিনি তাই ভারতীয় ক্লাসিক্যাল মিউজিশিয়ান হিসেবে নিজের স্বপ্নকে পূরণ করতে পারেনি কিন্তু উনি আমার মধ্যে দিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ করেন।‘
পন্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ আরও জানান, ‘ছোট থেকেই আমি সঙ্গীতের সঙ্গে একটা অদ্ভুত মনের আত্মিক টান অনুভব করতাম। খুব প্র্যাকটিস করতাম। কোনও গডফাদার ছাড়াই ভারতীয় শাস্ত্রী সঙ্গীতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সত্যিই আমার জন্য কঠিন ছিল। আমাদের গুরুদের তালিম, বাবা মায়ের আশীর্বাদ এবং ত্যাগ আমায় এই মাইলস্টোন ছুঁতে সাহায্য করল।‘
পন্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার শুধুমাত্র একজন শ্রেষ্ঠ সরোদ বাদক নন, তিনি ভারতীয় সঙ্গীতের এক কিংবদন্তি। তার প্রতিটি সুর, প্রতিটি রাগের মধ্যে তার নিষ্ঠা, তার আত্মার গভীরতা ফুটে ওঠে। তিনি সেই মহান সঙ্গীতজ্ঞদের একজন, যারা শুধুমাত্র মঞ্চে নয়, বরং সঙ্গীতের প্রতিটি স্তরে তাদের ছাপ রেখে গেছেন। পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্তি শুধু তার নিজস্ব কৃতিত্ব নয়, এটি ভারতের সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য একটি মহান গৌরবের বিষয়।