বর্ষীয়ান অভিনেত্রী বাসন্তী চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকের ছায়া টলিউডে

বাংলা বিনোদন জগতে নক্ষত্রপতন। প্রয়াত হলেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী বাসন্তী চট্টোপাধ্যায় (Basanti Chatterjee)। বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। দীর্ঘ রোগভোগের পর মঙ্গলবার তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন বহুদিন ধরেই, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল কোলেস্টরেল, কিডনির সমস্যা ও হার্টের অসুখ। প্রায় ছয় মাস ধরে টানা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। ভর্তি হওয়ার পরপরই তাঁকে আইসিউতে রাখা হয়েছিল। মাঝেমধ্যে শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলেও, শেষবার আর জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে পারলেন না। তাঁর মৃত্যুর খবর আর্টিস্ট ফোরামের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

Advertisements

বাসন্তী চট্টোপাধ্যায় ছিলেন বাংলা থিয়েটার ও সিনেমার এক স্বর্ণযুগের অভিনেত্রী। মঞ্চ থেকে বড়পর্দা—সব জায়গাতেই তাঁর ছিল সমান দাপট। অভিনয় জীবনের শুরু থিয়েটার মঞ্চে, পরে ধাপে ধাপে পা রাখেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতে। তাঁর ক্যারিয়ারে রয়েছে অসংখ্য উল্লেখযোগ্য কাজ। মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে তিনি অভিনয় করেছেন একাধিক ছবিতে। নব্বইয়ের দশক থেকে দুই হাজারের দশক পর্যন্ত বাংলা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি জনপ্রিয় টেলিভিশন ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছেন তিনি।

তাঁর অভিনীত জনপ্রিয় ছবির মধ্যে রয়েছে মঞ্জরী অপেরা, ঠগিনী, আলো। ছোটপর্দায় ‘বরণ’, ‘দুর্গা দুর্গেশ্বরী’, ‘ভূতু’–র মতো ধারাবাহিকে অভিনয় করে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নেন। টেলিভিশনের দর্শকের কাছে তিনি ছিলেন এক পরিচিত মুখ, যিনি চরিত্রে প্রাণসঞ্চার করতে জানতেন।

গত বছরের শুরুর দিকে ‘গীতা এলএল বি’ ধারাবাহিকের শুটিং চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েন বাসন্তী দেবী। দীর্ঘ চিকিৎসা চললেও শারীরিক অবস্থা ধীরে ধীরে অবনতি হতে থাকে। ‘গীতা এলএল বি’-তেই ছিল তাঁর শেষ অভিনয়।

জীবনের শেষপর্বে তাঁকে লড়তে হয়েছে অর্থনৈতিক অনটনের সঙ্গেও। আশি পার হওয়ার পরও কেবল সংসারের প্রয়োজনে এবং নিজের পেশার প্রতি ভালোবাসা থেকে কাজ করে গিয়েছেন তিনি। একদিকে শারীরিক যন্ত্রণা, অন্যদিকে আর্থিক সংকট—সব মিলিয়ে শেষ জীবন সহজ ছিল না। কিন্তু অভিনয়ের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও নিষ্ঠা তাঁকে শেষ অবধি কর্মক্ষম রেখেছিল।

Advertisements

বাংলা বিনোদন জগতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাঁর অভিনয় দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সহকর্মী, ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনেতা-অভিনেত্রী, পরিচালক ও শিল্পীরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।

বাসন্তী চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু বাংলা সিনেমা ও থিয়েটারের এক যুগের অবসান ঘটাল। যাঁর প্রাণবন্ত অভিনয় একসময় দর্শকদের মুগ্ধ করত, যিনি সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চরিত্রে অভিনবত্ব আনতেন, তিনি আজ আর নেই। তবে তাঁর কাজ বেঁচে থাকবে বাংলা সংস্কৃতির ভাণ্ডারে, নতুন প্রজন্মকে জানাবে এক শিল্পীর জীবনসংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প।

তাঁর চলে যাওয়া বাংলা বিনোদন জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শিল্পের প্রতি যে নিবেদন তিনি রেখে গিয়েছেন, তা চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।