বলিউডের জনপ্রিয় কৌতুকশিল্পী কপিল শর্মা ফের একবার অপরাধী চক্রের নিশানায়। নিজের কমেডি শোতে সলমন খানকে আমন্ত্রণ জানানোর জেরেই বিষ্ণোই গ্যাং তাঁর বিরুদ্ধে হামলার হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ। আর সেই হুমকি বাস্তবে রূপ পেল কানাডায়। এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার কপিল শর্মার কানাডার ক্যাফেতে হামলা চালাল দুষ্কৃতীরা। গুলি চালিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোই ছিল মূল উদ্দেশ্য।
ঘটনার পরপরই একটি বিস্ফোরক অডিও ক্লিপ সামনে আসে। তাতে গ্যাংস্টার গোল্ডি ধিঁলো সরাসরি হামলার দায় স্বীকার করে। ধিঁলো, যিনি কুখ্যাত লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের অন্যতম সদস্য, স্পষ্ট বার্তা দেন—“সলমন খানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণেই কপিল শর্মার ক্যাফেতে গুলি চালানো হয়েছে। ভবিষ্যতে কেউ সলমনের সঙ্গে কাজ করলে তাকেও চরম পরিণতি ভুগতে হবে। এবার সোজা বুকে গুলি চলবে।”
বলিউড তারকাদের কার্যকলাপ ও সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করার এই চেষ্টা স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভ উসকে দিয়েছে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। অল ইন্ডিয়া সিনে ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন (AICWA) সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দ্বারস্থ হয়েছে (Bollywood Demands Security)। তাঁদের দাবি, শুধু কপিল শর্মা নন, সলমন খান, সইফ আলি খান, বাবা সিদ্দিকির মতো তারকার উপর সাম্প্রতিক আক্রমণগুলি ইঙ্গিত দিচ্ছে—বলিউডকে আবারও ৯০-এর দশকের ভয়ঙ্কর আন্ডারওয়ার্ল্ড আতঙ্কের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
AICWA এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছে, “এটি পূর্বপরিকল্পিত আক্রমণ। ভারতীয় সিনে ইন্ডাস্ট্রির মর্যাদা ও স্বাধীনতার উপর সরাসরি আঘাত। এটা নয়ের দশকের সেই অন্ধকার অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি, যখন আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনদের হুমকি, তোলাবাজি ও চাঁদাবাজির কারণে বলিউড আতঙ্কে কাঁপত।”
দ্বিতীয়বার হামলার পরপরই কপিল শর্মার মুম্বইয়ের বাড়িতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে মুম্বই পুলিশ। কানাডা পুলিশও হামলার তদন্ত শুরু করেছে। বিষ্ণোই গ্যাং-এর বার্তায় স্পষ্ট হুমকি—“পরের হামলা হবে মুম্বইতে।” এর ফলে কপিলের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা আরও কঠোর করা হয়েছে।
AICWA-এর পক্ষ থেকে অমিত শাহকে অনুরোধ জানানো হয়েছে, তিনি যেন কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি বিষয়টি আলোচনা করেন। বিদেশের মাটিতে ভারতীয় নাগরিক ও তারকাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে। সংগঠনটির বক্তব্য, এই ধরণের হামলা শুধু কপিলের ক্যাফে নয়, সমগ্র ভারতীয় সিনে সংস্কৃতির উপর আক্রমণ। এর ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকা বিপন্ন হচ্ছে, যাঁদের রুজিরুটি সম্পূর্ণভাবে এই ইন্ডাস্ট্রির উপর নির্ভরশীল।
গত কয়েক মাসে সলমন খান, সইফ আলি খান, বাবা সিদ্দিকি এবং কপিল শর্মার বিরুদ্ধে হুমকি ও হামলার ঘটনা স্পষ্ট করে দিচ্ছে—তারকারা ফের আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিশানায়। কখনও গুলি, কখনও ভয় দেখানো—সবই এক উদ্দেশ্যে, সৃজনশীল স্বাধীনতা দমিয়ে রাখা এবং ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া।
ফলে প্রশ্ন উঠছে—এরপর কার পালা? বলিউডের ভেতরে এবং বাইরে, সবার নজর এখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পদক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক আলোচনার দিকে।