দু’ দেশের কূটনৈতিক টানাপোড়েন সত্ত্বেও টলিউড ও বলিউড তারকাদের প্রতি বাংলাদেশের দর্শকদের ভালোবাসা বরাবরের মতোই অটুট। ভারতীয় সিনেমার প্রতি বাংলাদেশের দর্শকদের উন্মাদনা নতুন কিছু নয়। বিশেষত টলিউডের দেব-শুভশ্রী জুটি নিয়ে তাঁদের আবেগ প্রতিবারই আলাদা মাত্রা ছুঁয়েছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সম্পর্কের ওঠাপড়া থাকলেও ‘ধূমকেতু’র মুক্তির পর আবারও সেই উন্মাদনার প্রমাণ মিলল।
বাংলার বক্স অফিসে দেব-শুভশ্রী অভিনীত ‘ধূমকেতু’ যে প্রবল ঝড় তুলেছে, তা সিনেমার প্রথম দু’দিনের সংগ্রহেই স্পষ্ট। ওপেনিং ইনিংসে বলিউডের বহুচর্চিত ‘ওয়ার ২’ কিংবা দক্ষিণী ব্লকবাস্টার *‘কুলি’*কে কড়া টক্কর দিয়ে ২.১০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে এই বাংলা ছবি। দ্বিতীয় দিন শেষে সেই অঙ্ক আরও চড়ে পৌঁছেছে ৩.০২ কোটিতে। অর্থাৎ মাত্র দু’দিনে ৫.১২ কোটি টাকার ব্যবসা করে টলিউডে নতুন ইতিহাস গড়েছে ‘ধূমকেতু’।
প্রযোজক রানা সরকার এক সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, দেবের কর্মজীবনে এই প্রথম কোনও ছবি মাত্র দুই দিনে ৫ কোটির ব্যবসা করেছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, টলিউডে গত এক দশকে সর্বাধিক ব্যবসাসফল ছবির তালিকায় দেবের নাম বারবার উঠে এসেছে। তাই এবারও নিজেরই রেকর্ড ভেঙে আবার শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছেন দেব।
তবে সব রেকর্ড-পরিসংখ্যানের বাইরেও দর্শকদের উন্মাদনাই সিনেমার আসল মাপকাঠি। প্রেক্ষাগৃহের ভেতর ‘দেশু’ জুটিকে ঘিরে দর্শকদের হাসি, কান্না, উল্লাস ক্যামেরাবন্দি মুহূর্তগুলোই বলছে—‘ধূমকেতু’ দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে।
এমন আবেগময় পরিস্থিতিতে ছবির অন্যতম প্রযোজক রানা সরকার নিজেও এগিয়ে এসেছেন। তিনি বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিচালক মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীকে ট্যাগ করে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি অনুরোধ জানান, “বাংলাদেশে ‘ধূমকেতু’ রিলিজ করতে আমরা আগ্রহী। বাংলাদেশের অগণিত সিনেমাপ্রেমী মানুষের বাংলা সিনেমার প্রতি ভালোবাসাকে সম্মান জানিয়ে সরকার আমাদের অনুমতি দিক। আবেদনটি যেন মঞ্জুর হয়।”
প্রযোজক শুধু সরকারকেই নয়, বাংলাদেশের ভক্তদের প্রতিও আহ্বান জানান। তিনি অনুরোধ করেন, দর্শকেরাও যেন তাঁদের দাবি সরকার পর্যন্ত পৌঁছে দেন, যাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
ফারুকীর সঙ্গে কি ইতিমধ্যেই যোগাযোগ হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তরে রানা সরকার জানান, “বাংলাদেশে শুক্রবার সরকারি ছুটি থাকে। ফলে এখনও ফারুকীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলা হয়নি। তবে ওদের তরফ থেকে ফোন এলে অবশ্যই জানাব।”
বাংলাদেশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজর রাখলে স্পষ্ট বোঝা যায়, দেব-শুভশ্রী জুটির ভক্তরা ইতিমধ্যেই সরব হয়ে উঠেছেন। তাঁরা বিভিন্ন হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে দাবি তুলছেন—দেশে দ্রুত মুক্তি পাক ‘ধূমকেতু’।
টলিউডে একসময় বাস্তব জীবনেও আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন দেব-শুভশ্রী। যদিও পরবর্তীতে তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন আলাদা পথে এগিয়েছে। তবু পর্দায় তাঁদের রসায়ন এখনও সমান জনপ্রিয়। ‘ধূমকেতু’ সেই প্রমাণকেই আরও একবার শক্তভাবে হাজির করেছে। দেবের অ্যাকশন ইমেজ আর শুভশ্রীর আবেগঘন অভিনয় ছবিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।