টলিউডের সবচেয়ে চর্চিত জুটিগুলির মধ্যে অন্যতম দেব-শুভশ্রী (Dev-Shubhashree) জুটি। তাঁদের রসায়ন বরাবরই দর্শকদের মধ্যে বিশেষ আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। বহুদিনের অপেক্ষার পর অবশেষে মুক্তি পেতে চলেছে তাঁদের অভিনীত ছবি ‘ধূমকেতু’। কিন্তু এই ছবির নেপথ্যে রয়েছে এক চমকপ্রদ কাহিনি—কারণ শুরুতে শুভশ্রী নয়, দেবের বিপরীতে নায়িকা হিসেবে ভাবা হয়েছিল শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়কে।
শিল্পমহলের খবর অনুযায়ী, ছবির প্রথম পর্যায়ের পরিকল্পনা যখন হয়, তখনই দেব এবং প্রযোজকদের পক্ষ থেকে শ্রাবন্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রাথমিক আলোচনা ও চুক্তিও অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল। শ্রাবন্তী তখন টলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা। কিন্তু ছবির কাজ শুরু হওয়ার কিছুদিন পর প্রযোজকদের মনে হয়, সদ্য বিচ্ছেদ হওয়া বাস্তব জীবনের জনপ্রিয় জুটি দেব-শুভশ্রীকে (Dev-Shubhashree) আবারও পর্দায় ফেরালে ছবির প্রচারে বাড়তি সুবিধা হবে। এই কারণেই শেষ মুহূর্তে নেওয়া হয় নায়িকাবদলের সিদ্ধান্ত।
প্রযোজকদের এই সিদ্ধান্ত শ্রাবন্তীকে যথাযথভাবে জানানো হয়। শ্রাবন্তীও এই বিষয়ে কখনও প্রকাশ্যে ক্ষোভ দেখাননি বা কোনও বিতর্ক তৈরি করেননি। বরং তিনি পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে বিষয়টি মেনে নেন। টলিউডের এই পরিপক্ব আচরণ আজও বহু মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
অন্যদিকে, দেব-শুভশ্রী জুটিকে একসঙ্গে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত সত্যিই ছবির জন্য ‘মাস্টারস্ট্রোক’ প্রমাণিত হয়। যদিও ছবির শুটিংয়ের পর আইনি জটিলতায় দীর্ঘ কয়েক বছর আটকে যায় ‘ধূমকেতু’র মুক্তি। এই বিলম্বের মধ্যেই দেব-শুভশ্রীর জনপ্রিয়তা আরও বহুগুণে বেড়ে যায়। তাঁদের রিয়েল লাইফ কেমিস্ট্রি এবং পর্দার রোমান্স মিলে ছবির প্রচারে আলাদা মাত্রা যোগ করে।
‘ধূমকেতু’ মুক্তি পেতেই দর্শকদের মধ্যে তৈরি হয় তুমুল উন্মাদনা। টানা কয়েকদিন ছবির টিকিট ‘হাউসফুল’ হয়ে যায়। এই পরিস্থিতি প্রযোজকদের জন্য নিঃসন্দেহে লাভজনক ছিল। নায়িকাবদলের সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল, তা প্রমাণ হয় ছবির সাফল্যের মধ্য দিয়ে। দেব-শুভশ্রীর জুটি আবারও দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়।
টলিউডে এমন নায়িকাবদলের ঘটনা নতুন নয়। অনেক সময়ই প্রযোজকরা ছবির বাজারজাতকরণের কৌশল হিসেবে শেষ মুহূর্তে কাস্টিংয়ে পরিবর্তন আনেন। তবে ‘ধূমকেতু’র ঘটনা আরও বিশেষ কারণ এখানে ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং তার জনপ্রিয়তাকে কার্যকরভাবে কাজে লাগানো হয়েছিল। প্রযোজকদের এই বুদ্ধিমত্তা ছবিকে কেবল বাণিজ্যিক সাফল্যই এনে দেয়নি, বরং দেব-শুভশ্রীর অনুরাগীদের জন্যও তৈরি করেছে এক আবেগঘন মুহূর্ত।
শ্রাবন্তীর জায়গায় শুভশ্রীর আসা নিয়ে কোনও বিতর্ক না হওয়াটা টলিউডের পেশাদার সম্পর্কের এক দৃষ্টান্ত। শ্রাবন্তীর ভক্তরাও তাঁর এই সৌজন্যতার প্রশংসা করেছেন। অন্যদিকে, শুভশ্রীর উপস্থিতি ‘ধূমকেতু’কে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে। তাঁর অভিনয় এবং দেবের সঙ্গে রসায়ন দর্শকদের নতুনভাবে মুগ্ধ করেছে।
সব মিলিয়ে, ‘ধূমকেতু’ শুধু একটি ছবি নয়, বরং এটি টলিউডের এক বিশেষ অধ্যায়, যেখানে বাণিজ্যিক কৌশল, ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং শিল্পীসুলভ পেশাদারিত্ব একসঙ্গে মিশে তৈরি করেছে সফল সিনেমার গল্প। এই ছবির নেপথ্য কাহিনি আজও সিনেমাপ্রেমীদের আলোচনায় শীর্ষে।