বেশ কিছুদিন আগে ২৪ জুলাই মহানায়ক উত্তমকুমারের প্রয়াণ দিবসে বাংলা ছবির সুপারষ্টার প্রসেনজিৎ একটি ঘোষণা করেন (Cinema Halls)। ঘোষণাটি হল তিনি সারা বাংলা জুড়ে ১০০ টি সিনেমা হল তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করবেন। বাংলা ছবির হারানো সুর ফিরিয়ে আনতে এই পরিকল্পনা নিঃসন্দেহে অভিনব। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলা ছবি কি আবার ফিরে পাবে নিজের হারানো গৌরব।
বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলা ছবির একটা দুঃসময় চলছে। ছবি অনেক হচ্ছে কিন্তু তার মধ্যে হাতে গোনা কিছু ছবি যেগুলো ভীষণ ভালো ছবি সেগুলোও মানুষ হলে গিয়ে বেশি দিন দেখছেন না। এর কারণ কি ? কিছু সিনেমা প্রেমী মানুষের মতে একটা সিনেমার প্রথম আকর্ষণ হল তার গল্প। একটু বয়স্ক সিনেমা প্রেমীরা বলেছেন একটা সময়ে বাংলা ছবি হলে গিয়ে দেখেছি।
একটা ছবি বার দশেক দেখার অভিজ্ঞতাও শুনিয়েছেন অনেকে। তাদের মতে একটা সময়ে বাংলা ছবি ছিল সাহিত্য ধর্মী। প্রোথিত যশা সাহিত্যিকদের কাহিনী অবলম্বনে তখন পরিচালকরা ছবি তৈরী করতেন। এমনকি সত্যজিৎ রায়ের মত জগৎ বিখ্যাত চিত্র পরিচালকও বরেণ্য সাহিত্যিকের কাহিনী অবলম্বনে ছবি করেছেন এবং সেগুলো মানুষের মনে এখনও জায়গা করে আছে।
কিন্ত একটা সময় এল যখন চিত্রপরিচালকরাই নিজেরা তাদের গল্প লিখতে শুরু করলেন। এই প্রসঙ্গে কয়েকজন সিনেমা প্রেমী মন্তব্য করেছেন, নিজেরা গল্প লিখতে গিয়ে অনেক সময়ই গল্প মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে গেছে কিংবা অনেক ছবির গল্পের বিন্যাসই ঠিক নেই খাপছাড়া। আবার অনেকে মন্তব্য করেছেন একটা সময় সিনেমা ছিল সমস্ত ধরণের মানুষের জন্য।
কিন্তু যেদিন থেকে বাংলার ইন্টেলেক্চুয়ালরা ভাবছেন তাদের ভাবনার রসদে মানুষ সিনেমা হলে বসে ভাবনা চিন্তা করবেন সেদিন থেকে সিনেমা হলের দরজা সবার জন্য খোলা নেই। আবার অনেক বর্ষীয়ান অভিনেতা তাদের বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন টিকিটের দাম নিয়ে। আজকের দিনে সবই প্রায় মাল্টিপ্লেক্স। সিঙ্গল স্ক্রীন প্রায় উঠেই গেছে বাংলায়।
এখানে টিকিট কেটে সিনেমা দেখা একজন প্রান্তিক মানুষের পক্ষে অসম্ভব। তাই ছবি ভালো হলেও সাধারণ মানুষের কাছে সেই ছবি পৌঁছোচ্ছে না। তাহলে অবস্থাটা এমন দাঁড়াল যে শুধু মাত্র যাদের পকেটে পয়সা আছে শুধু তারাই ছবি উপভোগ করবেন।
আর গ্রামের একজন খেটে খাওয়া প্রান্তিক মানুষ সেই রস থেকে বঞ্চিত হবেন। শুধু গ্রামের মানুষ কেন আজ মাল্টিপ্লেক্সের দুনিয়াতে শহরের কিংবা মফস্সলের একজন মধ্যবিত্তের পক্ষে কয়েক ঘন্টার আনন্দের জন্য হাজার বা তারও বেশি টাকা খরচ করাটা বাতুলতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
কিন্তু একটা সময় তখনও সিঙ্গল স্ক্রীন পুরোপুরি উঠে যায়নি তখন সত্যি একটা সিনেমা সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে পড়ত। সবাই সিনেমা দেখার সাহস অন্তত জোগাতে পারতেন। কিন্তু এখন সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
Asia Cup 2025: আবুধাবিতে বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে হারিয়ে অভিযান শুরু শ্রীলঙ্কার
প্রসেনজিতের হল তৈরির পরিকল্পনাকে সাধুবাদ জানিয়েও একথা বলতেই হয় যে বাংলা ছবির গৌরব যদি আবার ফিরিয়ে আনতে হয়, তবে সে ছবি ছড়িয়ে পড়তে হবে সমাজের সর্বস্তরে এবং সাহিত্য নির্ভরতায় ফেরত গেলে নতুন প্রজন্মও অনুভব করবে বিখ্যাত সাহিত্যিকদের সাহিত্য পড়ার প্রয়োজনীয়তা এবং হয়তো তাতে ফিরে আসতে পারে সমাজ থেকে হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধ ।