দোসর: ভানু ও সুচরিতার সম্পর্ক- এক মানবিক গল্পের অনুসন্ধান

দ্য আই উইথিন ক্লাব এবং ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালাইড আর্টস দোসর (দ্য সোলমেট) যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে একটি মনস্তাত্ত্বিক এবং মানবিক গল্প “ভানু ও…

Bhanu and Sucharita

দ্য আই উইথিন ক্লাব এবং ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালাইড আর্টস দোসর (দ্য সোলমেট) যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে একটি মনস্তাত্ত্বিক এবং মানবিক গল্প “ভানু ও সুচরিতা”, যা পরিচালনা করেছেন কৌশিক সেনগুপ্ত। এই গল্পে উঠে এসেছে এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের পিতৃসুলভ ভালোবাসা ও এক তরুণী মনের অন্ধকারের মধ্যে থাকা জীবনের গল্প।

এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক ও মানবিক কাহিনী, যেখানে প্রধান চরিত্র ভানু, একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, তার এক ছাত্রীর মাধ্যমে এক অজানা তরুণী সুচরিতাকে আশ্রয় দেন। গল্পটি এক গভীর অনুপ্রেরণা ও সম্পর্কের চিত্র তুলে ধরে, যা মানবিক সংবেদনশীলতা, অপরাধবোধ এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতার গল্প।

   

ভানু একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, যিনি একা একা তার বাড়িতে বাস করতেন। একদিন তার একজন প্রাক্তন ছাত্রী তাকে জানায়, একটি তরুণী, সুচরিতা, অত্যন্ত ক্লান্ত এবং অসুস্থ হয়ে তার বাড়িতে আশ্রয় চেয়েছে। সে যেহেতু একজন অপরিচিত মানুষ, তাই ভানু প্রথমে কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন, তবে তার শারীরিক অবস্থা দেখে তিনি তাকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

সুচরিতা ছিল অত্যন্ত শান্ত এবং একাকী প্রকৃতির। তিনি প্রায় সময় একা বসে কথা বলতেন, নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলতেন এবং অস্থির আচরণ করতেন। ভানু যখন এই পরিস্থিতি লক্ষ্য করেন, তখন তিনি তার এক বন্ধু মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান, যিনি কিছু ওষুধ দেন। তবে সুচরিতা সেগুলি নিতে অস্বীকার করে। ভানু, তার এক পিতৃসুলভ অনুভূতি থেকে, সুচরিতার প্রতি যত্নশীল হয়ে ওঠেন এবং তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তার জন্য কিছু করা প্রয়োজন। কিন্তু সুচরিতা তার অস্বাভাবিক আচরণে ভানুকে আরও বিস্মিত করে, যা ভানুর মনে এক ধরনের অজানা রহস্যের জন্ম দেয়।

একদিন ভানু জানতে পারেন যে সুচরিতা তার ব্যাগ প্যাক করছেন এবং তিনি মুম্বাই ফিরে যেতে চান। ভানু জানতে পারেন যে সুচরিতার মা-বাবা মুম্বাইয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিহত হয়েছেন এবং সেই পরিস্থিতিতে ভয়ে তিনি পালিয়ে আসেন। সুচরিতা এক ধরনের মানসিক অস্থিরতা ও শোকের মধ্যে ডুবে গিয়েছিলেন। তিনি মনে করতেন, তার প্রিয় চরিত্র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “গোরা” চরিত্রটি তার সঙ্গে কথা বলছে এবং তাকে দেশের জন্য কিছু করতে বলছে। সুচরিতা নিজেকে অপরাধী মনে করতেন, কারণ মুম্বাইয়ের দাঙ্গায় তিনি পালিয়ে এসেছিলেন এবং তাই তাকে মনে হচ্ছিল যে গোরা তাকে আর ভালোবাসছে না।

তিনি মনে করতেন, তাঁর শাস্তি শুধুমাত্র দেশের দরিদ্র, নিঃস্ব মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্য করার মাধ্যমে সম্ভব হবে। ভানু চেষ্টাও করেন তার সঙ্গে মুম্বাই যাওয়ার, কিন্তু সুচরিতা মনে করতেন যে তাকে এই সংগ্রাম একা মোকাবেলা করতে হবে। তাই ভানু তাকে যেতে দেন এবং আশা করেন, একদিন সুচরিতা তার কাজ শেষ করে ফিরে আসবে।

এই গল্পটি একটি সজাগ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, যেখানে মানুষকে তার জীবনের দায়িত্ব ও বিশ্বাসের প্রতি সত্য হতে শেখানো হয়। সুচরিতার মানসিক অবস্থা এবং তার মধ্যে এক ধরনের দুর্বলতা ও সাহসিকতার মিশ্রণ কাহিনীর মূল উপজীব্য। একদিকে, এটি আমাদের শিখায় যে, কিছু সময় মানুষকে তার নিজস্ব পথে চলতে দিতে হয়, তবে অন্যদিকে, এটি এইও শিখায় যে, অন্যের প্রতি আমাদের সহানুভূতি ও পিতৃসুলভ ভালোবাসা কখনও কখনও সবচেয়ে বড় শক্তি হতে পারে।

এই চিত্রনাট্যটি যেমন মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে গভীর, তেমনই মানবিক দিক থেকেও অসাধারণ। ভানু ও সুচরিতার সম্পর্ক, তাদের একে অপরের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবনের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা আমাদের মনে শক্তিশালী প্রভাব ফেলবে।

শ্রেয়া ভট্টাচার্য এবং সুব্রতনাথ মুখোপাধ্যায়ের অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে এই কাহিনী আরও জীবন্ত হয়ে উঠেছে, যা দর্শকদের মনে এক গভীর রেখাপাত করবে। কৌশিক সেনগুপ্তের পরিচালনায় গল্পটি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং সম্পর্কের নানান স্তরের অনুভূতির মাধ্যমে দর্শকদের এক নতুন জগতে নিয়ে যাবে।

“ভানু ও সুচরিতা” গল্পের গভীরতা, মানবিক সঙ্গতি এবং মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ আমাদের সকলকে এক নতুন ভাবনায় জাগ্রত করবে।