কলকাতা: বাংলা চলচ্চিত্র দুনিয়ায় নক্ষত্রপতন। প্রয়াত হলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়। রবিবার রাত পৌনে ন’টা নাগাদ বাঙুর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘদিনের বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা ক্রমশ জটিল আকার নিচ্ছিল। চিকিৎসকদের অবিরাম প্রচেষ্টার পরও তাঁকে আর ফেরানো গেল না। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। আপাতত বাঙুর হাসপাতালেই রাখা রয়েছে তাঁর মরদেহ। সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলে আজ রাতেই সম্পন্ন হবে শেষকৃত্য।
একাধিক ছবিতে অভিনয়
কল্যাণ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক উজ্জ্বল মুখ, এক নির্ভরযোগ্য চরিত্রাভিনেতা। সাগিনা মাহাতো, ধন্যি মেয়ে, পার, সফেদ হাতি থেকে সবুজ দ্বীপের রাজা—দর্শকের হৃদয়ে আজও অমলিন তাঁর অভিনয়। শুধু বড় পর্দা নয়, টেলিভিশনের পর্দাতেও সমান দক্ষতায় কাজ করেছেন। নানা ধারাবাহিক, টেলিফিল্ম ও বিশেষ চরিত্রে তাঁর উপস্থিতি বাংলার দর্শককে বারবার মুগ্ধ করেছে। শিল্পী মহলের ভাষ্য, চরিত্রাভিনয়ের এক নিজস্ব, নিখুঁত শৈলী তৈরি করেছিলেন কল্যাণবাবু—যা তাঁকে আলাদা মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
ছোট থেকেই ছিল অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক Bengali Actor Kalyan Chatterjee Passes Away
১৯৪২ সালে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে জন্ম। ছোটবেলা থেকেই নাটক-অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক। সেই পথ ধরেই ১৯৬৮ সালে আপনজন ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ। এরপর সত্যজিৎ রায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান, যা তাঁর কেরিয়ারের এক মোড় ঘোরানো অধ্যায়। জীবনের বিভিন্ন সময়ে কাজ করেছেন উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো কিংবদন্তিদের সঙ্গে। পাশাপাশি বলিউডেও কাজ করেছেন বিদ্যা বালান, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির সঙ্গে। কয়েকশো ছবিতে অভিনয় করে তিনি গড়ে তুলেছিলেন সুবিশাল এক উত্তরাধিকার।
বাঙুর হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল
গত কয়েকদিন ধরে বাঙুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন প্রবীণ অভিনেতা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থেমে গেল লড়াই। আজ রাতেই কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। আটিস ফোরামের পক্ষ থেকে শেষযাত্রার যাবতীয় ব্যবস্থায় সহযোগিতা করা হচ্ছে।
কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে টলিপাড়ায়। সহকর্মী শিল্পী, পরিচালকেরা জানিয়েছেন—বাংলা সিনেমা হারাল এক গভীর, সংযত, শক্তিশালী অভিনেতাকে; বাংলা সংস্কৃতি হারাল তার এক নিবেদিতপ্রাণ সৈনিককে।
