কলকাতা: রাজ্যে স্নাতক স্তরে ভর্তির (West Bengal UG Admission) প্রক্রিয়ায় ফের একবার সময়সীমা বাড়ানো হল। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তাঁর সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আরও ১০ দিন বাড়ানো হয়েছে আবেদনের সময়সীমা। ফলে এখন ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকে ভর্তি হতে ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীরা আগামী ২৫ জুলাই পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন ও রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন অভিন্ন পোর্টালের মাধ্যমে।
উল্লেখ্য, এ বছর উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশের ৪১ দিনের মাথায়, অর্থাৎ ১৮ জুন থেকে রাজ্যে চালু হয় সেন্ট্রালাইজড বা অভিন্ন পোর্টালের মাধ্যমে স্নাতক স্তরের ভর্তি প্রক্রিয়া। প্রথমে নির্ধারিত ছিল ১ জুলাই পর্যন্ত আবেদনগ্রহণ। পরে সময়সীমা বাড়িয়ে তা করা হয় ১৫ জুলাই। এবার দ্বিতীয়বারের মতো ১০ দিন সময় বাড়ানো হলো। এই সিদ্ধান্ত উচ্চশিক্ষা দফতরের তরফে জানানো হয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনলাইন পোর্টালে জমা পড়া মোট আবেদন সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯,৯২,৬৬১। এর মধ্যে আবেদনকারী ইউনিক পড়ুয়াদের সংখ্যা ৩,৪৮,১৬৯। শুধু তাই নয়, ভিন্ রাজ্য থেকেও আবেদন করেছেন ২৩,১৫৯ জন ছাত্রছাত্রী।
এই সময়সীমা বারবার বাড়ানো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন একাধিক কলেজ কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষক মহল। সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল কর বলেন, ‘‘যত তাড়াতাড়ি ভর্তি শেষ হবে ততই ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা হবে। এবছর দুর্গাপুজোও আগে, ফলে হাতে সময় খুবই কম।’’
তাঁর মতে, দুইবার সময় বাড়ানোর ফলে প্রথম সেমেস্টারের ক্লাস ও পাঠ্যসূচি সম্পূর্ণ করার সময় অনেকটাই কমে যাবে। একই মত একাংশ শিক্ষকেরও, যাঁরা মনে করছেন, দেরিতে ভর্তি শেষ হলে ভালো ছাত্রছাত্রীদের পছন্দমতো কলেজে জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
এদিকে রাজ্যের বেশ কিছু স্বশাসিত ও বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং নেতাজী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই নিজস্ব নিয়মে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। ফলে যারা নির্দিষ্ট সময়ে ভর্তি সম্পন্ন করেছে, তারা সেমেস্টারের ক্লাস শুরু করতে পারবে অনেক আগে।
মঙ্গলবার অভিন্ন পোর্টালের এক বিজ্ঞপ্তি ঘিরে নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে ২০২৪ সালের ২২ মে কলকাতা হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী সংরক্ষণ নীতি মানা হবে, কারণ বিষয়টি এখনও বিচারাধীন। যদি ভবিষ্যতে আদালত ভিন্ন নির্দেশ দেয়, তবে সেই অনুযায়ী নতুন গাইডলাইন জারি করা হবে।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, ২০১০ সালের আগে ৬৬টি জনগোষ্ঠীর জন্য ওবিসি শ্রেণিতে ৭% সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। এখন রাজ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কোন আইনকে অনুসরণ করবে, তা নিয়ে ধন্দে রয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রভারতী, বর্ধমান, বিদ্যাসাগর ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ তাদের সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের নির্দেশিকাই নির্ধারণ করবে।
ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই মনে করছেন, বারবার সময়সীমা বাড়ানোর ফলে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। যদিও অনেকের কাছেই এটি বাড়তি সুযোগ। তবে উচ্চশিক্ষার সময়সীমা নিয়ে এত বার রদবদল শিক্ষার মান এবং পাঠক্রম পরিচালনায় প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এখন দেখার বিষয়, ২৫ জুলাইয়ের পর আর সময়সীমা বাড়ানো হয় কি না এবং ক্লাস শুরু হয় কবে।