রাজ্যের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ট্যাব কেনার জন্য দেওয়া অর্থের বেনিয়মের (WB Tab Scam) অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পৌঁছানোর কথা থাকলেও অভিযোগ উঠছে যে অনেক পড়ুয়ার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি বা অনেকের অ্যাকাউন্টে আবার দ্বিগুণ টাকা ঢুকে গেছে। কলকাতা থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকেও একই ধরনের অভিযোগ জমা পড়েছে।
এরই মধ্যে, কলকাতা পুলিশ এই ঘটনায় বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে তদন্ত শুরু করেছে। রাজ্য সরকারের ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের অধীনে এককালীন ১০ হাজার টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই টাকা পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি জমা হওয়ার কথা ছিল, যাতে তাঁরা সহজে ট্যাব কেনার সুযোগ পান।
হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে চার বছর পুরনো মামলায় হাজিরা পদ্মনেতা অর্জুনের
কিন্তু পুজোর পর থেকেই অভিযোগ আসতে শুরু করে যে অনেক পড়ুয়া এই টাকা পাননি বা তাঁদের টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। প্রথমে পূর্ব বর্ধমান জেলা থেকে এই অভিযোগ উঠে আসে। তারপর অন্যান্য জেলার পাশাপাশি কলকাতা থেকেও অভিযোগ জমা পড়তে থাকে। কলকাতার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা ট্যাবের টাকা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।
ইতিমধ্যে যাদবপুর, কসবা, বেনিয়াপুকুর, মানিকতলা, ওয়াটগঞ্জ, সরশুনা, জোড়াসাঁকো, গল্ফগ্রিন, এবং ভবানীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যাদবপুরের একটি স্কুলে ১২ জন এবং ঠাকুরপুকুরের এক স্কুলে ৩১ জন ছাত্রীর অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি বলে অভিযোগ। কসবা, জোড়াসাঁকো, বেনিয়াপুকুর এলাকায়ও একাধিক পড়ুয়া টাকা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।
অক্সিজেন সিলিন্ডার ফেটে অ্যাম্বুল্যান্সে বিস্ফোরণ, চালকের বুদ্ধিতে রক্ষা মা-নবজাতকের
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগ এসেছে যে এক ছাত্রের টাকা অন্য ছাত্রের অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। এই ঘটনায় একাধিক সাইবার জালিয়াতির ধারণা তৈরি হচ্ছে। কৃষক, শ্রমিক, গৃহশিক্ষকসহ নানা শ্রেণির মানুষ এই জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। বিভিন্ন জেলা পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে, এবং সম্প্রতি উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ধৃতদের মধ্যে একজন কৃষক এবং অপরজন চা-শ্রমিক। তাঁদের নাম কৃষ্ণপদ বর্মণ এবং সরিফুল ইসলাম। এই দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা সাইবার ক্যাফে থেকে অবৈধভাবে পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে টাকা সরানোর কাজ করছিল। কলকাতা পুলিশও এই ঘটনায় তৎপর হয়ে তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ বিভাগ জানতে পেরেছে যে, অভিযুক্তরা সাইবার ক্যাফে ব্যবহার করেই এই জালিয়াতির কাজ চালাচ্ছিল।
বিয়ের মরশুমে হুড়মুড়িয়ে কমল সোনার দাম, কলকাতায় কত দাম রয়েছে রূপোর?
বর্তমানে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পক্ষ থেকে তদন্তে সহযোগিতা করতে সিট গঠন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রদের টাকা কোথায় যাচ্ছে এবং এই চক্রে কারা কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখা হবে।সিট গঠন করার পর পুলিশ ইতিমধ্যে কিছু গ্রেফতারি অভিযান চালিয়েছে। বুধবার সরশুনা এলাকার স্কুলের পড়ুয়াদের টাকার গায়েবের অভিযোগে, উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থেকে কৃষ্ণপদ বর্মণ এবং সরিফুল ইসলাম নামক দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই দুই অভিযুক্ত সাইবার ক্যাফে থেকে টাকা সরানোর কাজ করত এবং তাদের মাধ্যমে নানা ছাত্রের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকিয়ে দেওয়ার বদলে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা হওয়ার পর বিশেষজ্ঞ সাইবার তদন্ত দলও জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে কাজ শুরু করে দিয়েছে। সিট গঠন হওয়ার পর কলকাতা পুলিশ বিভিন্ন সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করছে এবং এর সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য চক্রের সন্ধান করছে।
ক্রমশই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে রাজধানী, বায়ু দূষণে প্রাণ ওষ্ঠাগত দিল্লিবাসীর
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী দিনে আরও গ্রেফতারি হতে পারে এবং পুরো ঘটনার তদন্ত শেষে এই জালিয়াতি চক্রের মধ্যে আরও কতজন অপরাধীকে শনাক্ত করা হবে। যত দিন যাচ্ছে, এই ট্যাব ‘দুর্নীতি’ প্রসঙ্গে নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে। সেইসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে যে, রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পের মাধ্যমে সুবিধাভোগীরা কতটা নিরাপদ।
যদিও পুলিশ তৎপর কিন্তু পড়ুয়াদের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। এখন দেখার বিষয় সিট এবং সাইবার পুলিশ তদন্ত শেষ করে অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে পারে কিনা।