কলকাতা: রাজ্যের বেসরকারি স্কুলগুলিতে লাগামহীন ফি বৃদ্ধি রুখতে নতুন একটি আইন আনতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বিধানসভায় এ দিন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়ে দিয়েছেন, এই বিষয়ে পদক্ষেপ হিসেবে একটি কমিশন গঠন করা হবে।
বেসরকারি স্কুলে অতিরিক্ত ফি বৃদ্ধির অভিযোগ নিয়ে বিধানসভায় প্রশ্ন তোলেন বাঁকুড়া জেলার ছাতনার বিজেপি বিধায়ক সত্যনারায়ণ মুখোপাধ্যায়। তার জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, এই ধরনের অভিযোগ বিভিন্ন অভিভাবকের কাছ থেকে সরকারেও এসেছে। ফি বৃদ্ধি ছাড়াও, স্কুলের অব্যবস্থাপনা, অত্যাধিক পড়াশোনার চাপ এবং স্কুলের অবকাঠামোর বেহাল অবস্থারও অভিযোগ জমা পড়েছে। মন্ত্রী বলেন, “এই সমস্ত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকার একটি নতুন কমিশন গঠন করতে চলেছে।”
এছাড়া, মন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানান, বেসরকারি স্কুলগুলির ফি বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজ্য সরকার শীঘ্রই বিধানসভায় একটি বিল পেশ করবে, যা পরবর্তীতে আইনে পরিণত হবে।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, “অনেক অভিযোগ এসেছে এবং আমরা সেগুলো খতিয়ে দেখেছি। তবে সব সমস্যার সমাধান তৎক্ষণাৎ সম্ভব নয়, তাই এই বিল আনার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।”
পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতোমধ্যেই রাজ্যের বেসরকারি স্কুলগুলির ফি বৃদ্ধির বিষয়ে এক নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২৩ সালের অগস্টে এই কমিশন গঠনের জন্য নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। এছাড়া, কমিশনে থাকবেন স্কুল শিক্ষা কমিশনার, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, উচ্চশিক্ষা সংসদ ও শিক্ষামন্ত্রীর মনোনীত শিক্ষাবিদদের প্রতিনিধিরা। সিবিএসই এবং আইসিএসই বোর্ডের প্রতিনিধিরাও কমিশনে থাকবেন।
এই কমিশন বেসরকারি স্কুলগুলির অতিরিক্ত ফি এবং অন্যান্য অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখে দ্রুত সমাধান করবে। এটি মূলত বেসরকারি স্কুলে অযৌক্তিক ফি বৃদ্ধির উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে এবং অভিভাবকদের অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সাহায্য করবে।
শিক্ষাবিদ দেবাশিস সরকার বলেন, “বিল আনা হলে তা সাধুবাদ পাবেই। তবে, আমাদের আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা উচিত কেন অভিভাবকেরা অধিক অর্থ দিয়ে বেসরকারি স্কুলে পাঠানোর কথা ভাবছেন। সরকারের নিজস্ব খাতে দুর্নীতি এবং শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম বাড়ছে, তাই শুধু বেসরকারি স্কুলে ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যথেষ্ট হবে না।”
এছাড়া, বেসরকারি স্কুলের ফি এবং ভর্তির টাকা নিয়ে প্রায়ই অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ এবং অভিযোগ ওঠে। সরকার যদি এই বিল পেশ করে এবং আইন হিসেবে প্রণয়ন করতে পারে, তাহলে তা অভিভাবকদের দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান করতে সহায়ক হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
বেসরকারি স্কুলগুলিতে ফি বৃদ্ধি, অব্যবস্থাপনা এবং অভিভাবকদের অভিযোগ রোধে রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপকে বড় একটি সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদি আইনটি কার্যকর হয়, তা হলে দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলোর সমাধান হতে পারে এবং অভিভাবকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হবে।