পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে পর্ষদের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত বদলের জেরে। কয়েক দিন আগেই রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (Prinary School) ঘোষণা করেছিল, এবার থেকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দ্বিতীয় সামেটিভ মূল্যায়নের প্রশ্নপত্র তারা নিজেরা তৈরি করবে। এর পিছনে যুক্তি ছিল, রাজ্যের সব স্কুলে (Prinary School) সমান মানের প্রশ্নপত্র হলে পড়ুয়াদের মূল্যায়ন এক রকম হবে।
অনেক স্কুলে দেখা যায়, তারা যতটা পাঠ পড়িয়েছে, তার বাইরের অংশ নিয়েই প্রশ্নপত্র তৈরি করে। এতে পড়ুয়াদের অসুবিধা হয়, এবং জেলার ভিত্তিতে মূল্যায়নের মানেও ফারাক তৈরি হয়। এই সমস্যা দূর করতে এবার প্রশ্নপত্র তৈরি করবে পর্ষদ, এমনটাই জানানো হয়েছিল।
তবে সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নে গতি থাকলেও তা বেশিদিন টিকল না। নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, স্কুলগুলিকেই (Prinary School) আবার প্রশ্নপত্র তৈরি করতে হবে। ৩১ জুলাই পর্ষদ দ্বিতীয় সামেটিভ পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করেছে। সেই অনুসারে পরীক্ষার আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদলিয়ে স্কুলগুলির উপর প্রশ্নপত্র তৈরির দায়িত্ব ফেলে দেওয়ায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে শিক্ষক মহলে।
রাজ্যের বহু প্রাথমিক স্কুলের (Prinary School) প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানিয়েছেন, এত অল্প সময়ের মধ্যে প্রশ্নপত্র তৈরি করা কঠিন। বর্ষা, পুজো প্রস্তুতি ও অন্যান্য প্রশাসনিক কাজের চাপের মধ্যেও তাদের উপর এ দায়িত্ব বর্তানো হচ্ছে, যেটা বাস্তবসম্মত নয় বলেই মনে করছেন অনেকে। অনেক স্কুলে (Prinary School) আবার প্রশ্নপত্র ছাপানোরও পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। ফলে স্থানীয়ভাবে প্রশ্ন তৈরি করে তা হাতে লিখে বা ফটোকপি করে পরীক্ষার্থীদের দেওয়া হবে, এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ এবং চাপের।
প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, এবং কেনই বা তা ফের বাতিল করা হলো? এ নিয়ে পর্ষদের তরফে পরিষ্কার কোনও ব্যাখ্যা এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, এই প্রথম নয়, এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। যেমন, কিছু মাস আগে পর্ষদের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করা হয়েছিল, রাজ্যে সেমিস্টার সিস্টেম চালু করা হবে। কিন্তু পরদিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক জনসভায় বলেন, তিনি এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে কিছুই জানেন না। এরপরেই এই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসে পর্ষদ।
শিক্ষাক্ষেত্রে এ ধরনের অসংগতি ও সিদ্ধান্ত বদল বারবার প্রশ্ন তোলে প্রশাসনিক সমন্বয়ের অভাব নিয়ে। বিশেষ করে শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এমন অস্থিরতা পড়ুয়াদের মনোবল ও শিক্ষার মান দুটোর উপরই প্রভাব ফেলে। শিক্ষক মহলের একাংশের মত, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাকে যদি গুরুত্ব দিয়েই দেখতে হয়, তবে পরিকল্পনাগুলি আরও সুসংগঠিত ও সুদূরপ্রসারী হওয়া দরকার। হঠাৎ সিদ্ধান্ত, আর তার কয়েক দিনের মধ্যেই তা প্রত্যাহার, এই প্রবণতা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপর চাপ বাড়ানো ছাড়া কিছু নয়।
এই পরিস্থিতিতে এখন দেখার বিষয়, ভবিষ্যতে পর্ষদ তার সিদ্ধান্ত গ্রহণে কতটা স্বচ্ছতা ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে। কারণ, শিক্ষা ব্যবস্থায় স্থায়িত্ব ও পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা না থাকলে তার প্রভাব সরাসরি পড়ে শিক্ষার্থীদের উপর। আর এই প্রাথমিক স্তরেই যদি শৃঙ্খলার অভাব থাকে, তবে ভবিষ্যতের ভিতই দুর্বল হয়ে পড়বে — এমনটাই আশঙ্কা শিক্ষাবিদদের।