প্রথম সেমেস্টারেই ‘ফেল’ ৯০%! নয়া শিক্ষা নীতিতে ছারখার হওয়ার মুখে কলেজগুলি?

গত বছরই ঘটা করে ন্যাশনাল এডুকেশন প্রোগ্রাম বা NEP চালু হয়েছে (1st Semester Result)। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের নতুন গাইডলাইন অনুযায়ী সারা দেশে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে…

গত বছরই ঘটা করে ন্যাশনাল এডুকেশন প্রোগ্রাম বা NEP চালু হয়েছে (1st Semester Result)। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের নতুন গাইডলাইন অনুযায়ী সারা দেশে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি এবং পাঠক্রম চালু করা হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই NEP-এর ফার্স্ট সেমিস্টারের রেজাল্ট (1st Semester Result) বেরিয়েছে জুলাই মাসে। আর তাতেই রেজাল্ট দেখে রীতিমতো কপাল চাপড়ানোর মতো অবস্থা বঙ্গের শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তাদের।

কথায় বলে মর্নিং শোজ দ্যা ডে। অর্থাৎ শুরু দেখলেই আগামীটা বোঝা যায়। প্রথম সেমিস্টারের (1st Semester Result) যা হাল দেখা যাচ্ছে, তাতে আগামী দিনে কি অবস্থা হতে চলেছে কলেজ শিক্ষায়, সেটা নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তায় শিক্ষাবিদরা। সদ্য প্রকাশিত গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সেমেস্টারের রেজাল্ট অনুযায়ী ফেল করেছে প্রায় ৯৭% ছাত্র! অর্থাৎ কিনা পাশের হার মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশের কাছাকাছি। আবার তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিজ্ঞান বিভাগে ফেলের মাত্রা লক্ষণীয়ভাবে বেশি। একই অবস্থা ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্ষেত্রেও। এখানেও পাশের হারকে বলে বলে গোল দিয়েছে ফেলের শতাংশ। ৮৫ থেকে ৮৭% পর্যন্ত অকৃতকার্য হয়েছে ন্যাশনাল এডুকেশন প্রোগ্রাম অনুযায়ী প্রথম সেমেস্টারের ছাত্র ছাত্রীরা।

   

আগুন দাম সবজির, টাস্ক ফোর্সকে কাঁকুড়গাছির ভিআইপি বাজার ঘোরার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী

আর এখানেই চার বছরের এই নতুন পরীক্ষাক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অনেক বিশেষজ্ঞ এবং অধ্যাপকের মতে, এর আগে কলেজের ইন্টারনাল অ্যাসেসমেন্ট এর নাম্বারগুলি অনেক ক্ষেত্রেই ছাত্র-ছাত্রীদের পাশ করাবার ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা নিত। কিন্তু নতুন শিক্ষানীতি অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রে সেই ইন্টারনাল অ্যাসেসমেন্ট প্রক্রিয়াটাকেই তুলে দেওয়া হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে সরাসরি পরীক্ষার মার্কসে। আগে কলেজের ইন্টারনাল আসেসমেন্টের প্রাপ্ত নম্বর যোগ হতো সেমেস্টারের পরীক্ষাতে প্রাপ্ত নম্বরের সাথে। কিন্তু এখন সেটা আর যোগ হচ্ছে না। বিজ্ঞান বিভাগের এক খ্যাতনামা অধ্যাপকের সরাসরি বক্তব্য, “ছাত্র-ছাত্রীরা যে শুধু ফেল করছে তা নয়, তারা এমন নাম্বার পেয়ে ফেল করছে যেখান থেকে পাশ করানোটা প্রায় অসম্ভবই বলা চলে।”

এ তো গেল পরীক্ষায় পাশ-ফেলের কথা। সামগ্রিকভাবে রাজ্যের উচ্চশিক্ষার চিত্রটা খুব একটা আশাব্যাঞ্জক নয় বলেই অভিমত অনেকের। গত বছর থেকেই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটা নতুন ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে। উপযুক্ত নাম্বার বা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অনেক ছাত্র-ছাত্রী অনার্সে ভর্তি হতে চাইছে না। তাদের পরিষ্কার বক্তব্য অনার্স নিয়ে পড়ে অত চাপ নেওয়ার কোন দরকারই নেই। বরং তারা পাস কোর্সে ভর্তি হতে অনেক বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছে।শিক্ষার্থীদের অনেকের মতেই অনার্স কোর্সে কলেজে হাজিরার কড়াকড়ির ব্যাপার থাকে। কিন্তু পাসে অতটা কড়াকড়ি নেই। ফলে অনায়াসে কোথাও ছোটখাটো চাকরিও করে নিতে পারে তারা পড়াশুনা চালাবার পাশাপাশি। কিন্তু তাতে আদতে শিক্ষা ব্যবস্থার যে প্রাথমিক লক্ষ্য সেটা কি পূর্ণ হচ্ছে?

মানিকের অনুমোদনেই ওএমআর শিট ধ্বংস! আদালতে মোড় ঘোরানো দাবি পর্ষদের আইনজীবীর

রাজ্যের দুই নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় শিক্ষানীতি তে হওয়া প্রথম সেমিস্টারের রেজাল্ট কিন্তু অন্য রকম কথাই বলছে। একদিকে অনার্সে অনীহা, দীর্ঘ চার বছরের লম্বা পাঠক্রম, অন্যদিকে একেবারে নতুন এবং কিছুটা হলেও জটিল সার্টিফিকেশন এবং পরীক্ষা নীতি। সবমিলিয়ে কি ক্রমশ উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ হারাচ্ছে নতুন প্রজন্ম? একটা সময় যেখানে বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে মারকাটারি অবস্থা ছিল। এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই ছাত্র সংসদের অবৈধভাবে টাকা নিয়ে ভর্তির অভিযোগ উঠেছে ভুরিভুরি, আজ যেন সে সবই অতীত। বিভিন্ন কলেজের বহু ডিপার্টমেন্ট শুধুমাত্র ছাত্রের অভাবে ধুঁকছে। নতুন শিক্ষানীতির এই অভাবনীয় ফেলের হার কী একটা নতুন বিপদ সংকেত দিয়ে যাচ্ছে? সেই ভেবেই রাজ্যের শিক্ষাবিদদের কপালে এখন গভীর ভাঁজ।