India-Russia Relations: বিশ্বে শ্রমিক ঘাটতি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার চাপে বিভিন্ন দেশ নতুন নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এমনই একটি বড় সংবাদে রাশিয়া ঘোষণা করেছে যে, ২০২৫ সালে তারা ১ মিলিয়ন ভারতীয় শ্রমিককে নিয়োগ করবে। এই সিদ্ধান্তটি রাশিয়ার শিল্প ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপটি রাশিয়ার বর্তমান শ্রমশক্তি সংকটের সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
রাশিয়ার শ্রমসংকট: কারণ ও প্রেক্ষাপট
রাশিয়া বর্তমানে একটি গভীর শ্রমশক্তি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বহু যুবক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে, যার ফলে শিল্প ও উৎপাদন ক্ষেত্রে শ্রমিকের সংখ্যা কমে গেছে। তাছাড়া, পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিসংহারের মুখে রাশিয়ার অনেক দক্ষ শ্রমিক দেশত্যাগ করেছে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি ২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুসারে, শ্রমশক্তির কমতি বর্তমানে প্রায় ৪.৮ মিলিয়ন জনের কাছাকাছি, যা দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, রাশিয়া তার প্রাচীন সঙ্গী দেশ ভারতের দিকে তাকিয়েছে, যেখানে প্রচুর সংখ্যক তরুণ শক্তি উপলব্ধ রয়েছে।
ভারতীয় শ্রমিকদের গুরুত্ব
ভারতের জনসংখ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি “ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড” হিসেবে পরিগণিত হয়। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ তরুণ ভারতীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ শেষে চাকরির সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। রাশিয়া এই সুযোগটি কাজে লাগাতে চায়, বিশেষ করে নির্মাণ, উৎপাদন ও লজিস্টিক্স ক্ষেত্রে। এর আগে মস্কোর সামোলিওট গ্রুপ নামক কোম্পানি একটি পাইলট প্রকল্পে ভারতীয় শ্রমিকদের নিয়োগ করেছিল, যার ফলাফল সন্তোষজনক হয়েছে। কোম্পানির কর্তৃপক্ষের মতে, ভারতীয় শ্রমিকরা বেশি নির্ভরযোগ্য এবং কেন্দ্রীয় এশিয়ার শ্রমিকদের তুলনায় কম ব্যয়বহুল।
নতুন কনস্যুলেট ও সহযোগিতা
এই পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত জুলাই মাসে রাশিয়া সফরে গিয়ে ইয়েকাতেরিনবার্গ ও কাজানে নতুন ভারতীয় কনস্যুলেট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই কনস্যুলেটগুলো ভারতীয় শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কাজের সুবিধার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ইয়েকাতেরিনবার্গ, রাশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহর, অর্থনৈতিক কার্যকলাপের কেন্দ্র হিসেবে উঠে এসেছে, যেখানে ভারতীয় শ্রমিকদের নিয়োগ বাড়ছে।
সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ
ভারতীয় শ্রমিকদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। রাশিয়ায় উচ্চ মাইনে, বিনামূল্যে আবাসন ও খাদ্যের ব্যবস্থা প্রদান করা হচ্ছে, যা ভারতের গ্রামীণ এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণদের জন্য আকর্ষণীয়। তবে এর সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে কিছু ব্যবহারকারী উল্লেখ করেছেন যে, রাশিয়া যুদ্ধের কারণে শ্রমিকদের ইউক্রেনে লড়াইয়ে নিয়োগ করতে পারে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি। তবে এই দাবির কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ভাষার ব্যবধান ও সাংস্কৃতিক পার্থক্যও একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্কের নতুন দিগন্ত
রাশিয়া ও ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ। সোভিয়েত যুগ থেকে দুই দেশের মধ্যে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা চলছে। এবার শ্রমশক্তি সরবরাহের মাধ্যমে এই সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই সুযোগটিকে দেশের তরুণদের জন্য আর্থিক স্বাবলম্বনের পথ হিসেবে দেখছে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কথায়, ইসরায়েলে ৫,৬০০ তরুণ ইতিমধ্যে চাকরি পেয়েছে, এবং রাশিয়া থেকেও এই ধরনের সুযোগ বাড়বে।
রাশিয়ার ১ মিলিয়ন ভারতীয় শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনা একটি বড় অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক ঘটনা। এটি ভারতের তরুণদের জন্য আর্থিক সুযোগের দ্বার খুলে দেবে, তবে নিরাপত্তা ও কাজের শর্ত নিয়ে সতর্কতা অত্যন্ত প্রয়োজন। ভারত সরকারের উচিত এই শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে রাশিয়ার সঙ্গে কঠোর চুক্তি সই করা। এই সহযোগিতা যদি সফল হয়, তবে এটি দুই দেশের মধ্যে একটি নতুন যুগের শুরু হবে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের ভূমিকাকে আরও শক্তিশালী করবে।