চলতি বছরেই বিপুল ছাঁটাই IT তে! দেখুন কোম্পানির তালিকা

global-tech-layoffs-2025-amazon-intel-tcs-job-cuts

বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি খাত যেন নতুন করে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ২০২৫ সাল শুরু হওয়ার পর থেকেই একের পর এক বড় সংস্থা খরচ বাঁচাতে কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, Layoffs.fyi-এর রিপোর্টে দেখা গেছে এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ২১৮টি প্রযুক্তি সংস্থা তাদের কর্মীসংখ্যা কমিয়েছে। আর এই সিদ্ধান্তের জেরে চাকরি হারিয়েছেন ১ লক্ষ ১২ হাজারেরও বেশি কর্মী।

Advertisements

বিশ্বজুড়ে এই প্রবণতার নেপথ্যে রয়েছে মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-নির্ভর ব্যবসায়িক পরিবর্তন, প্রযুক্তি বাজারে মন্দাভাব এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধীরগতি। একদিকে যেমন সংস্থাগুলি নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে চাইছে, অন্যদিকে খরচ কমিয়ে মুনাফা টিকিয়ে রাখার চাপও বাড়ছে।

   

প্রযুক্তি জায়ান্ট Amazon ঘোষণা করেছে যে তারা তাদের কোম্পানির প্রায় ৪% কর্পোরেট কর্মী অর্থাৎ প্রায় ১৪,০০০ জন কে ছাঁটাই করছে। সংস্থার বিভিন্ন বিভাগ যেমন ক্লাউড সার্ভিস (AWS), অপারেশনস এবং হিউম্যান রিসোর্সে বড় আকারের কাটছাঁট করা হচ্ছে। অ্যামাজন জানিয়েছে, “আমরা ভবিষ্যতের বাজার পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে পুনর্গঠন করছি। কিছু বিভাগে পুনঃবিন্যাস প্রয়োজন।”

Intel-এর ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি ভয়াবহ। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৫ সালে তারা তাদের বিশ্বব্যাপী কর্মীসংখ্যার প্রায় ২২%, অর্থাৎ প্রায় ২৪,০০০ কর্মী কমাবে। সংস্থার অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠনের অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চিপ উৎপাদন শিল্পে কম চাহিদা, বিনিয়োগের ঘাটতি এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা ইন্টেলের মুনাফাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে।

ভারতের অন্যতম বৃহত্তম আইটি সংস্থা Tata Consultancy Services (TCS)-ও এই বিশ্বব্যাপী ছাঁটাই প্রবণতার বাইরে নয়। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে, অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে সংস্থাটি প্রায় ১২,০০০ কর্মী ছাঁটাই করেছে। এটি টিসিএস-এর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এককালীন কর্মী ছাঁটাই। সংস্থার মোট হেডকাউন্টও এক ত্রৈমাসিকে ২০,০০০ কমে গেছে, যা ভারতের আইটি খাতে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

Advertisements

টিসিএস-এর এক অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অটোমেশন সিস্টেমের দ্রুত প্রসারের ফলে মাঝারি এবং সিনিয়র স্তরের কর্মীদের ভূমিকা দ্রুত বদলাচ্ছে। অনেক কাজ এখন মেশিনই করছে, ফলে মানবসম্পদে কাটছাঁট অনিবার্য।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ছাঁটাই শুধুমাত্র অর্থনৈতিক মন্দার ফল নয়। বরং এটি এক “AI-Driven Transformation”-এর ফলাফল। বিশ্বব্যাপী সংস্থাগুলি এখন মানবশ্রমের পরিবর্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর প্রক্রিয়ায় ঝুঁকছে। এতে উৎপাদনশীলতা বাড়লেও, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ধাক্কা লেগেছে।

একজন অর্থনীতিবিদ মন্তব্য করেছেন, “যেভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিদিন নতুন নতুন কাজ দখল করছে, তাতে আগামী কয়েক বছরে টেক ইন্ডাস্ট্রিতে মানবসম্পদের চাহিদা আরও কমে যাবে।” বিশ্বজুড়ে এই ছাঁটাই তরঙ্গের ফলে শুধু কর্মহীনতা নয়, মানসিক চাপ ও অনিশ্চয়তার সঙ্কটও বাড়ছে। বিশেষ করে মধ্যবয়সী কর্মীরা নতুন চাকরির সন্ধানে ভুগছেন। চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্ক এখন প্রযুক্তি খাতের প্রতিটি স্তরে।

বিশ্বের যেসব সংস্থা একসময় ছিল তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের কর্মক্ষেত্র, সেখানেই এখন ছাঁটাইয়ের ছায়া। প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ যতই উজ্জ্বল হোক না কেন, এই মুহূর্তে টেক কর্মীদের জীবনে এক গভীর অন্ধকার নেমে এসেছে।