তেলেভাজা বিক্রেতার মেয়ের UPSC ব়্যাংক ৯৩! ছেঁড়া কাথায় শুয়ে কোটি টাকার সাফল্য

ভারতবর্ষে সাফল্যের গল্প যতই উচ্চাকাঙ্ক্ষাপূর্ণ, ততই মনের গভীরে অনুপ্রেরণা জাগায়। রাজস্থানের ভরতপুরের এক নির্জন জনপদে থাকা সাধারন এক মেয়ের গল্পও ঠিক তেমন—যিনি ছেঁড়া কাথায় শুয়ে…

Deepesh Kumari, Daughter of a Pakoda Seller

ভারতবর্ষে সাফল্যের গল্প যতই উচ্চাকাঙ্ক্ষাপূর্ণ, ততই মনের গভীরে অনুপ্রেরণা জাগায়। রাজস্থানের ভরতপুরের এক নির্জন জনপদে থাকা সাধারন এক মেয়ের গল্পও ঠিক তেমন—যিনি ছেঁড়া কাথায় শুয়ে পড়াশোনা করে UPSC-এ সাফল্য অর্জন করেছেন। তাঁর নাম দীপেশ কুমারী, যিনি তেলেভাজা বিক্রেতা বাবার মেয়ে। আর তাঁর অর্জন: UPSC-এ অল ইন্ডিয়া ব়্যাংক ৯৩।

দীপেশের পিতা গোবিন্দ কুমার গত ২৫ বছর ধরে ভরপুর পরিশ্রম করে ভর্তা-ভাজা, পকোড়া বিক্রি করে সংসার চালান—মেয়ে সহ পাঁচ সন্তান ও পরিবারের ৭ জন এক ঘরে থাকতেন। তবুও শিক্ষা কখনও পিছিয়ে পড়েনি। দীপেশ স্কুলজীবন থেকেই ছিলেন স্বপ্নপ্রবণ। তিনি শিশু আদর্শ বিদ্যা মন্দির, ভরতপুর থেকে ১০-এ ৯৮% এবং ১২-তে ৮৯% করে উত্তীর্ণ হন ।

   

তারপর তিনি MBM ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জোধপুর থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ B.Tech অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে IIT Bombay থেকে M.Tech শেষ করেন ।

M.Tech পর এক বছর প্রাইভেট চাকরিতে কাজ করার পর দীপেশ UPSC প্রস্তুতির জন্য নিজস্ব পয়সা ব্যয়ে দিল্লি যান। প্রথমবার ২০২০-তে লেগেও সফলতা না আসার পর, তিনি হাল ছাড়েননি। পরিশেষে, দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ২০২১ সালে তিনি UPSC CSE-এ AIR 93 পান এবং EWS ক্যাটাগরিতে ৪র্থ র‌্যাংক অর্জন করেন। সেই অনুসারে তিনি IAS অফিসার হন এবং জারখণ্ড ক্যাডার পান ।

দীপেশ কুমারীর সাফল্য তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যকেও অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁর ছোটবোন বর্তমানে সাফলদরজং হাসপাতালের ডাক্তার, এক ভাই AIIMS গুয়াহাটি-তে MBBS পড়ছেন, আরেক ভাই লাতুর-এ MBBS করছেন ।

দীপেশ বলেছেন, “যখন আমি ক্লান্ত হতাম, তখন বাবার সংগ্রামই আমাকে শক্তি জুগিয়েছে।” এই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও পরিবারের মমতার মিলন তাঁকে আজ এই পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে ।

Advertisements

এই কাহিনি কেবল একটি ফলপ্রসূ পরীক্ষার ফল নয়; এটি শেখায়—সাহস, অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাস থাকলে সীমাবদ্ধতা বড় বাধা হতে পারে না। একজন তেলেভাজা ব্যবসায়ীর ছেলে বা মেয়ে হলেও, তাঁর মেধা ও পরিশ্রম তাঁকে শিখিয়েছে—“ছেঁড়া কাথায় শুয়ে কোটি টাকার সাফল্য” অর্জন করা সম্ভব।

দীপেশ কুমারীর যাত্রা গর্বিত করেছে তাঁর পরিবারকে, গর্বিত করেছে ভরতপুরের শিক্ষাংতরণকে, এবং অনুপ্রাণিত করেছে অসংখ্য ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রীকে, যাঁদের কাছে সীমাবদ্ধতাই–শুরু মাত্র।

দীপেশ কুমারীর জীবন যে শিক্ষা দেয়, তা হল—স্বপ্ন যদি সত্যি হয়, তবে সেটি নির্ভর করে শুধু অর্থ সহায়তা বা বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতেই নয়; বরং নিরলস পরিশ্রম, লক্ষ্যভিত্তিক প্রস্তুতি, পরিবারের সমর্থন ও নিজের আত্মবিশ্বাসেই।

তাঁর এই সাফল্য প্রমাণ করে—যেখানে দৃঢ় সংকল্প ও আত্মবিশ্বাস থাকে, সেখানে ছেঁড়া কাথাও হতে পারে কোটি টাকার সাফল্যের ভিত্তি। দীপেশ তাই সকল প্রার্থীর জন্য এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা এবং প্রতিশ্রুতির পূর্ণবাসন।