সভ্যতার শুরু ভারতে। শিক্ষা ব্যবস্থাও এই মহান দেশ থেকে যাত্রা শুরু করে। বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের মাটিতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমান সময়ে পড়ুয়াদের উপযোগী সেরা শহর ভারতেই আছে।
বৃহস্পতিবার, কিউএস র্যাঙ্কিংস (QS Rankings) ২০২৫-এর মাধ্যমে এই অবাক করা তথ্য প্রকাশ করেছে। ভারতের রাজধানী দিল্লি, যেটি সাধারণত তার ভিড়, দ্রুতগতির জীবনযাত্রা এবং দূষণের জন্য পরিচিত, এবার বিশ্বের শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী শহর হিসেবে র্যাঙ্কিং পেয়েছে। এই সংবাদটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছে এবং ভারতের শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মানের কথা বিশ্বের কাছে প্রচার করেছে। দিল্লির এই অসাধারণ অর্জনের পেছনে কী কী কারণ রয়েছে, সেইসঙ্গে এর সুবিধা ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করব।
দিল্লির অর্থনৈতিক সুবিধা
কিউএস র্যাঙ্কিংস ২০২৫ অনুযায়ী, দিল্লি শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী শহর হিসেবে র্যাঙ্কিং পেয়েছে, যেখানে গড় মাসিক ভাড়া মাত্র ১১০ ডলার (প্রায় ৯,২০০ টাকা)। এই সাশ্রয়িকতা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় আকর্ষণ। নাম্বিওর তথ্য অনুযায়ী, দিল্লির জীবনযাত্রার খরচ মুম্বাই (১৭৫ ডলার) বা লন্ডন (৬০০ ডলারের বেশি) এর তুলনায় অনেক কম। শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় (DU), জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় (JNU) এবং জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর টিউশন ফি অত্যন্ত কম, যা বার্ষিক ১০০-২০০ ডলারের মধ্যে রয়েছে। এই কম খরচের কারণে দিল্লি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
পরিবহন ও জীবনযাত্রার সুবিধা
দিল্লির মেট্রো রেল সিস্টেম, যা ১৯৯৫ সালে শুরু হয়েছিল, শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় সুবিধা। প্রতি ট্রিপের খরচ মাত্র ২৫-৩০ টাকা, যা শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন ভ্রমণ খরচ ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেয়। দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন (DMRC) এর এই উদ্যোগ সরকারি বিনিয়োগের একটি উদাহরণ, যা অতীতের বাস পরিবহনের বেসরকারি অক্ষমতার সমস্যা সমাধানে সাহায্য করেছে। এছাড়া, শহরের বিভিন্ন এলাকায় সস্তা পিৎজি (PG) এবং হোস্টেলের উপলব্ধতা শিক্ষার্থীদের জীবনকে আরও সহজ করে তুলেছে। উত্তম নগর, নজাফগড়, রাজেন্দ্র নগর বা কালুসরাইয়ের মতো এলাকায় শিক্ষার্থীরা তাদের বাজেটের মধ্যে থেকে আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারেন।
শিক্ষার মান ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য
দিল্লি শুধু সাশ্রয়িকতায়ই এগিয়ে নয়, এর শিক্ষার মানও বিশ্বমানের। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উচ্চমানের শিক্ষা ও গবেষণার জন্য বিখ্যাত। এছাড়া, শহরে লাইব্রেরি, ইন্টার্নশিপের সুযোগ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ক্যাফে সংস্কৃতির উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে। দিল্লির সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য—বিভিন্ন রাজ্যের খাবার, উৎসব এবং ঐতিহ্য—শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়। ইন্ডিয়া গেটের মতো ঐতিহাসিক স্থানগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য একটি শিক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবেও কাজ করে, যা ১৯৩১ সালে স্যার এডউইন লুটিয়েন্সের নকশায় তৈরি হয়েছিল।
চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা
তবে দিল্লির এই সাফল্যের পেছনে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কিছু ব্যক্তি দাবি করছেন যে এই সাশ্রয়িকতার পেছনে দিল্লির দুর্ভোগজনক অবস্থা—যেমন ভিড়, দূষণ, এবং মৌসুমী বন্যা—কারণ হতে পারে। এআইকিউ (Air Quality Index) এর অবনতি এবং বৈদ্যুতিক তারের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। তবে এই সমস্যাগুলো সরকারি উদ্যোগে ধীরে ধীরে সমাধানের পথে, যেমন গাছ লাগানো অভিযান এবং পরিবেশ সচেতনতা।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
দিল্লির এই র্যাঙ্কিং ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নতুন দরজা খুলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরাও এখন দিল্লিকে বেছে নিতে পারেন, যা শহরের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে আরও সমৃদ্ধ করবে। সরকারের উদ্যোগে পরিবহন সুবিধা এবং শিক্ষা গুণগত উন্নতি চালিয়ে গেলে দিল্লি ভবিষ্যতে শিক্ষার আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
দিল্লি শুধু ভারতের রাজধানী নয়, এখন বিশ্বের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি স্বপ্নের শহর। এর সাশ্রয়িকতা, শিক্ষার মান, এবং সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করছে। তবে শহরের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে সরকার ও নাগরিকদের যৌথ প্রয়াস প্রয়োজন। ২০২৫ সালে এই র্যাঙ্কিং দিল্লির জন্য একটি গৌরবময় পদক, এবং ভবিষ্যতে এই শহর শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও উন্নতি করবে বলে আশা করা যায়।