ভারতের স্কুলছাত্রীদের কথা ভেবে বিশেষ একটি কাজ করল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্র একটি বিশেষ ‘ঋতুকালীন স্বাস্থ্যনীতি’ তৈরি করেছে ছাত্রীদের জন্য। স্বাস্থ্য মন্ত্রক ইতিমধ্যেই এই নীতির অনুমোদন দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) গত বছর এপ্রিলে কেন্দ্রকে এই নীতি প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছিল। এবার সেই নির্দেশমতো স্বাস্থ্য মন্ত্রক ২ নভেম্বর ঋতুকালীন স্বাস্থ্যনীতি অনুমোদন করে।
গত সোমবার একটি জনস্বার্থ মামলায় সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়ে তথ্য দিয়েছে কেন্দ্র। এই নীতির মূল উদ্দেশ্য হল, স্কুলে ছাত্রীদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা তৈরি করা। বিশেষত দেশের বিভিন্ন স্কুলে ছাত্রীদের জন্য পৃথক শৌচালয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং ঋতুকালীন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যে সামাজিক অন্ধবিশ্বাস ও প্রতিকূলতা রয়েছে তা ভেঙে ফেলা।
এছাড়া এই নীতির মধ্যে রয়েছে পরিবেশবান্ধব ঋতুকালীন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা যা ভবিষ্যতে দেশে আরও সুস্থ পরিবেশ গড়ে তোলার দিকে সহায়ক হবে। কেন্দ্রের মতে, এই নীতি চালু হলে সমাজে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ক্ষতিকারক প্রথাগুলি ভেঙে দেওয়া সম্ভব হবে এবং স্বাস্থ্যবিধির প্রতি সচেতনতা তৈরি হবে। এই মামলার আগের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র জানিয়েছিল, দেশে ৯৭.৫ শতাংশ স্কুলে ছাত্রীদের জন্য পৃথক শৌচালয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
তবে কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুসারে, এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান সবার শীর্ষে। রাজ্যের ৯৯.৯ শতাংশ স্কুলে ছাত্রীদের জন্য পৃথক শৌচালয়ের বন্দোবস্ত রয়েছে। অন্যদিকে, দিল্লি, গোয়া এবং পুদুচেরি ছাড়া অন্যান্য সব রাজ্যে কিছুটা বৈষম্য রয়েছে। তবে বেশিরভাগ রাজ্যই তাদের স্কুলে পৃথক শৌচালয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে।
এদিকে কংগ্রেস নেত্রী এবং সমাজকর্মী জয়া ঠাকুর স্কুল ছাত্রীদের ঋতুকালীন পরিছন্নতার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়ে বলেছেন, ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সকল সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলে ছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে স্যানিটারি প্যাড বিতরণের ব্যবস্থা করা হোক।
তাঁর মতে, এই পদক্ষেপটি স্কুলছাত্রীদের জন্য ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি আরও সহজ করে তুলবে এবং তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াবে। শীর্ষ আদালত জয়া ঠাকুরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়ার আবেদন করেছেন। তিনি আরও দাবি করেন, প্রতিটি স্কুলে পৃথক শৌচালয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক যাতে ছাত্রীদের ঋতুকালীন সময়ে কোনো ধরণের অস্বস্তি বা সমস্যা না হয়।
গত শুনানিতে কেন্দ্র একটি হলফনামা জমা দিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, দিল্লি, গোয়া এবং পুদুচেরির সব স্কুলেই ছাত্রীদের জন্য পৃথক শৌচালয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, এবং গুজরাতে বেশিরভাগ স্কুলেই এই সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ৯৯.৯ শতাংশ, উত্তরপ্রদেশে ৯৮.৮ শতাংশ এবং গুজরাতে ৯৯.৫ শতাংশ স্কুলে ছাত্রীদের জন্য পৃথক শৌচালয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
তবে কেন্দ্র এই সুবিধা দেশের সমস্ত স্কুলে নিশ্চিত করার জন্য আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই ‘ঋতুকালীন স্বাস্থ্যনীতি’ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে শুধু শৌচালয়ের ব্যবস্থা নয়, ছাত্রীদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্য পরিচ্ছন্নতা, স্যানিটারি প্যাড সরবরাহ এবং ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধির প্রতি সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব হবে।
এটি শুধু ছাত্রীরা নয় বরং সমগ্র সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা তৈরি করবে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই উদ্যোগ সমাজে একটি সুস্থ এবং সচেতন পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করবে যা দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।