CBSE-র বড় সিদ্ধান্ত: একাদশ-দ্বাদশে থাকছে নতুন সুবিধা

সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (CBSE) দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এক নতুন যুগের সূচনা করতে চলেছে। ইতিমধ্যেই নবম ও দশম শ্রেণির জন্য বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে দুটি…

CBSE-র বড় সিদ্ধান্ত: একাদশ-দ্বাদশে থাকছে নতুন সুবিধা

সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (CBSE) দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এক নতুন যুগের সূচনা করতে চলেছে। ইতিমধ্যেই নবম ও দশম শ্রেণির জন্য বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে দুটি পৃথক স্তরের চালু করার পর এবার একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান ও গণিতের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে CBSE। এই নিয়ম কার্যকর হতে চলেছে ২০২৬-২৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে।

কীভাবে ভাগ করা হবে স্তর?
বর্তমানে দশম শ্রেণির গণিত বিষয়ে “স্ট্যান্ডার্ড” ও “বেসিক” স্তরের সিলেবাস থাকলেও মূল পাঠ্যক্রম এক। পার্থক্য মূলত প্রশ্নের মানের ক্ষেত্রে—বেসিক স্তরে তুলনামূলক সহজ প্রশ্ন থাকে। এবার একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান (Physics, Chemistry, Biology) এবং গণিতেও একই কাঠামো অনুসরণ করা হবে বলে বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। অর্থাৎ, দুই স্তরের মধ্যে থাকবে Basic ও Advanced বিভাগের ফারাক।

   

শিক্ষার্থীদের জন্য কী সুবিধা?
এই নতুন ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের উপর থেকে পড়াশোনার চাপ অনেকটাই কমাবে। অনেক ছাত্রছাত্রীই উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বা গণিত বিষয়টি নেন শুধুমাত্র নম্বর বাড়ানোর জন্য বা সাধারণ জ্ঞান অর্জনের জন্য, তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এই বিষয়গুলির উপর ভিত্তি করে নয়। তাঁদের জন্য বেসিক স্তরের মাধ্যমে সহজতর পথ খুলে যাবে। অন্যদিকে, যাঁরা প্রকৌশল, গবেষণা বা চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ গড়তে চান, তাঁদের জন্য অ্যাডভান্সড স্তরের পাঠ্যক্রম থাকবে, যেখানে বিষয়বস্তুর গভীরতা ও কঠিনতা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকবে।

CBSE-র এই পদক্ষেপের ফলে প্রতিটি শিক্ষার্থী নিজের ইচ্ছা ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য অনুযায়ী বিষয় এবং তার স্তর বেছে নিতে পারবে। এটি শিক্ষাকে আরও ব্যক্তিগত এবং পছন্দনির্ভর করে তুলবে। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা কঠিন বিষয় পড়তে বাধ্য হন শুধুমাত্র সিলেবাসে থাকার কারণে, অথচ তাঁদের আগ্রহ বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় সেই বিষয়ের প্রয়োজন নেই। এখন থেকে সেই বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি পাবে তারা।

Advertisements

কবে আসবে নতুন পাঠ্যবই?
এই নতুন পাঠ্যক্রম চালু হওয়ার নির্ধারিত সময় নির্ভর করবে NCERT-এর নতুন পাঠ্যবই প্রস্তুতির উপর। এখনো পর্যন্ত CBSE জানায়নি যে কবে নাগাদ এই পাঠ্যবইগুলি প্রস্তুত হবে বা বাজারে আসবে। বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাঠ্যপুস্তক চূড়ান্ত হওয়ার পরেই সঠিক সময় নির্ধারণ করা হবে এই দুই স্তরের পাঠ্যক্রম চালুর।

জাতীয় শিক্ষানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পদক্ষেপ
CBSE-র এই পদক্ষেপ জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ (NEP 2020) ও জাতীয় পাঠ্যক্রম কাঠামো ফর স্কুল এডুকেশন (NCFSE)-এর সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য হল ছাত্রছাত্রীদের শেখার গতি ও আগ্রহ অনুযায়ী বিকল্প সৃষ্টি করা এবং তাদের কেবলমাত্র পরীক্ষামুখীন পড়াশোনা থেকে বের করে এনে বাস্তবভিত্তিক জ্ঞানচর্চার দিকে নিয়ে যাওয়া।

CBSE-র এই নতুন পরিকল্পনা শিক্ষাক্ষেত্রে এক বড় পরিবর্তনের বার্তা দেয়। এতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের আগ্রহ ও প্রয়োজন অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করতে পারবে, যার ফলে পড়াশোনার মান ও মানসিক চাপ দুই-ই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যদি পাঠ্যবই যথাসময়ে প্রস্তুত হয়, তবে ২০২৬-২৭ সাল থেকে ভারতীয় শিক্ষাপদ্ধতি এক নতুন ধাপে পৌঁছাবে—যেখানে ‘এক সাইজ ফিটস অল’ ধরণ থেকে সরে এসে ‘স্টুডেন্ট চয়েস’-এর উপর ভিত্তি করে গঠিত হবে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রম।