CBSE-র মতো একই পথে হাঁটবে কি মধ্যশিক্ষা পর্ষদ?

একবার নয়, এবার বছরে দু’বার। ২০২৬ সাল থেকে সিবিএসই (CBSE)-র দশম শ্রেণির পড়ুয়ারা এই নতুন সুযোগ পেতে চলেছে। সিবিএসই বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী বছর থেকেই…

secondary-exam-girl-attends-amid-father-funeral-pandua

একবার নয়, এবার বছরে দু’বার। ২০২৬ সাল থেকে সিবিএসই (CBSE)-র দশম শ্রেণির পড়ুয়ারা এই নতুন সুযোগ পেতে চলেছে। সিবিএসই বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী বছর থেকেই ক্লাস টেনের ছাত্রছাত্রীরা বছরে দুইবার বোর্ড পরীক্ষায় বসতে পারবে। শিক্ষার্থীরা চাইলে প্রথম পরীক্ষার ফলাফল মেনে নিতে পারে, আবার কেউ যদি মনে করে ফলাফল সন্তোষজনক নয়, তাহলে দ্বিতীয়বারও পরীক্ষা দিতে পারবে। প্রথম পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে ফেল করলেও দ্বিতীয়বার পরীক্ষার মাধ্যমে পাশ করার সুযোগ থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা, এতে শিক্ষাবর্ষ নষ্ট হবে না। 

সিবিএসই-র (CBSE) তরফে জানানো হয়েছে, ২০২৬ সাল থেকেই এই নতুন পদ্ধতি চালু হবে। সেই অনুযায়ী, প্রথম পরীক্ষা নেওয়া হবে সাধারণত মার্চ মাসে এবং দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া হবে জুন-জুলাই মাসে। শিক্ষার্থীরা চাইলে উভয় পরীক্ষাতেই বসতে পারবে। দুই পরীক্ষার মধ্যে যেটিতে ভালো ফল হবে, সেটিই চূড়ান্ত মার্কশিটে যোগ করা হবে। তবে বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক। কেউ যদি মনে করে, প্রথম পরীক্ষার ফলই যথেষ্ট, তবে দ্বিতীয় পরীক্ষায় না-ও বসতে পারে।

   

সিবিএসই-র সিদ্ধান্তের কারণ কী?
CBSE জানিয়েছে, এই নতুন পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করার মূল কারণ ছাত্রছাত্রীদের উপর চাপ কমানো এবং ফেইলিয়র ফিয়ার (Failure Fear) দূর করা। শিক্ষার্থীরা যাতে বেশি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বোর্ড পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে পারে, সে কারণেই এই পরিবর্তন। প্রথম পরীক্ষা সাধারণত মার্চে হবে, দ্বিতীয় পরীক্ষা হতে পারে জুন বা জুলাই মাসে।

পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কী ভাবছে?
এই ঘোষণার পরই প্রশ্ন উঠেছে, এবার কী পশ্চিমবঙ্গের মধ্যশিক্ষা পর্ষদ (WBBSE) এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ (WBCHSE) একই পথে হাঁটবে? রাজ্যের প্রচুর অভিভাবক, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের একটাই প্রশ্ন— “CBSE পারলে আমাদের রাজ্যের বোর্ড কেন নয়?”

এই নিয়ে রাজ্যের মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এক সিনিয়র আধিকারিক জানান, ‘‘আমরা এখনও সিবিএসই-র সম্পূর্ণ গাইডলাইন পাইনি। তবে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতরের সঙ্গে আলোচনা করা হতে পারে।’’

কী কী চ্যালেঞ্জ থাকবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজ্যে এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে গেলে বড়সড় পরিকল্পনা প্রয়োজন। কয়েকটি বড় সমস্যার কথা উঠে এসেছে:

পরীক্ষার সময়সূচি পুনর্বিন্যাস: দুইবার মাধ্যমিক পরীক্ষা নিতে গেলে সম্পূর্ণ অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার বদলাতে হবে।

Advertisements

শিক্ষক ও পরিকাঠামো: পর্যাপ্ত পরীক্ষা কেন্দ্র, খাতা দেখার জন্য শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার উন্নতি দরকার।

সিলেবাস কমানো: CBSE-র মতো সিলেবাস কমানোর দিকেও ভাবতে হবে।

শিক্ষাবিদদের মতামত
রাজ্যের শিক্ষা বিশারদদের একাংশ মনে করছেন, CBSE-র এই উদ্যোগ সময়ের দাবি। পশ্চিমবঙ্গেও যদি এই নিয়ম চালু হয়, তাহলে অনেক ছাত্রছাত্রীর মানসিক চাপ কমবে এবং পড়াশোনার প্রতি ভীতি কমবে। তবে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নয়, আগে যথাযথ পরিকল্পনা প্রয়োজন।

কলকাতার এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘বছরে দুইবার পরীক্ষা মানে দ্বিগুণ কাজ। তবে যদি ভালোভাবে পরিকল্পনা করা যায়, তাহলে পড়ুয়াদের জন্য এটা উপকারী হতে পারে।’’

CBSE-র এই সিদ্ধান্ত দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন দেখার, পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ এই পথে হাঁটে কিনা। শিক্ষা দফতরের পরবর্তী ঘোষণা বা নীতিগত সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ও তাদের পরিবার।