একুশেই মেয়েদের বিয়ে! বাহ্ মোদীজী কেয়া আইন লায়া!

শবনম হোসেন (কবি-প্রাবন্ধিক): সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদীর সরকার মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স একুশ বছর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।জয়া জেটলির নেতৃত্বে গঠিত কমিটি দেশের মেয়েদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও…

short-samachar

শবনম হোসেন (কবি-প্রাবন্ধিক): সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদীর সরকার মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স একুশ বছর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।জয়া জেটলির নেতৃত্বে গঠিত কমিটি দেশের মেয়েদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও সন্তানধারণ মূলত এই তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে আঠার থেকে বাড়িয়ে বিয়ের বয়স একুশ বছর করার সুপারিশ করেছেন। বলা হচ্ছে এতে পুষ্টি লাভের পাশাপাশি আর্থিক উন্নয়ন ও লিঙ্গসাম্য রক্ষিত হবে।

   

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বলতেই পারি নূতন আইন স্বাগত। কিন্তু এর পাশাপাশি উঠে আসছে বেশ কিছু সমস্যা, সৃষ্টি হচ্ছে নানা বিতর্ক।

ন্যূনতম বিয়ের বয়স আঠারো বছর হওয়া সত্ত্বেও প্রান্তিক অঞ্চলে এমনকি বহু ক্ষেত্রে শহরাঞ্চলেরও ১৪- ১৫ বছরেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। ইউনিসেফের (UNICEF) রিপোর্ট বলছে প্রতি বছর আঠারোর কম বয়সে প্রায় ১৫ লাখ, শতকরা ৫৪ জন নাবালিকার বিয়ে হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে পরিবারগুলির আর্থিক দূরবস্থা এর মূল কারণ। অর্থাৎ পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম অর্থনীতি হতে চলা ভারতে নগণ্য মাথাপিছু আয় বুঝিয়ে দিচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের সুযোগ সমাজের সর্বস্তরে দেশের সব প্রান্তে সমানভাবে মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। তাই প্রশ্ন উঠছে আঠার বছরে মেয়েদের যথেষ্ট পুষ্টিলাভ না হলে একুশ বছরে কি করে সম্ভব ?

তাই আগে প্রয়োজন পরিবারগুলির আর্থিক পরিকাঠামো মজবুত করা। এছাড়া স্কুলগুলিতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মেয়েদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর করে তোলা জরুরি। কন্যা সন্তান পরিবারের আর্থিক অবলম্বন হয়ে উঠলে নাবালিকা বিবাহ আটকানো সম্ভব হবে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। বলতে দ্বিধা নেই একবিংশ শতাব্দীতেও বিভিন্ন সামাজিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অসাম্য রয়ে গেছে নারী পুরুষের মধ্যে। এই অসাম্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থানকে অসাম্যের দিকে চালিত করে। পরিণত বয়সে উচ্চ শিক্ষা লাভ করার পাশাপাশি মেয়েরা শারীরিক ও মানসিক ভাবে আরও পরিণত হবে। ভবিষ্যতে ‘মা’ নিজের ও সন্তানের পরিচর্যায় অধিকতর সচেতন হবেন।

বিয়ের বয়সের নতুন আইনে নিয়ে কী কী হতে পারে

(১) সন্দেহ নেই এই আইন ১৩৮ কোটির দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার অগ্রগতিতে আগামী তিন বছরে দ্রুত লাগাম টানতে পারবে।

(২) বিয়ের বয়স যখন কন্যাশ্রীর মাপকাঠি, ধরে নেওয়া যেতে পারে নতুন আইন প্রণয়ন হলে আগামী তিন বছর কন্যাশ্রীর টাকা বাঁচবে। অর্থাৎ ঋণ জর্জরিত রাজ্য কিছুটা হলেও আর্থিক চাপমুক্ত হবে।

(৩) বর্তমান আইনানুসারে আঠারো বছর হলে প্রাপ্তবয়স্ক বলে গণ্য করা হয় কিন্তু বিয়ের ক্ষেত্রে নাবালিকা ধরা হলে আইনটি স্ববিরোধী বলে পরিগণিত হবে।

বলা হচ্ছে নতুন আইনে ছেলে মেয়ে উভয়ের বিয়ের বয়স একুশ বছর হলে লিঙ্গ সাম্য বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। শুধুমাত্র বিয়ের বয়সে সমতা এনে লিঙ্গ সাম্য তৈরি করা যায় না। বাড়িতে, কর্মক্ষেত্রে এমনকি সামাজিক স্তরে এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত লিঙ্গবৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন যথাযথ শিক্ষা ও মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।

চাইবো নারী সম্পর্কে পুরুষের তথা সমাজের এমনকি নারীর নিজের ও দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন হোক। যখন নারী নিজে জীবনে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পারদর্শী হয়ে উঠবে।