Mirzapur: ফুলনদেবী বলছেন মির্জাপুরি কার্পেট ব্যবসার কথা! সংসদে পিনড্রপ সাইলেন্স (৩)

   প্রসেনজিৎ চৌধুরী:  মির্জাপুর। গঙ্গা তীরের এই নগরের হরেক কাহিনী নেই। আছে গালিচা ঝলকে জীবন চালানোর যুদ্ধ। বারাণসীর পৌরাণিক, ঐতিহাসিক বর্ণিল গাথার পাশে মির্জাপুর (Mirzapur)…

  

প্রসেনজিৎ চৌধুরী:  মির্জাপুর। গঙ্গা তীরের এই নগরের হরেক কাহিনী নেই। আছে গালিচা ঝলকে জীবন চালানোর যুদ্ধ। বারাণসীর পৌরাণিক, ঐতিহাসিক বর্ণিল গাথার পাশে মির্জাপুর (Mirzapur) স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট ধরে রেখেছে। বেনারসি শাড়ি আর মির্জাপুরি গালিচা উত্তর প্রদেশের জাঁকালো দুই শিল্প। কাশ্মীরি, পারস্যের গালিচার ভূবন মোহিনী ঝলক যেমন আছে। মির্জাপুরী গালিচা কমতি কিছু না। পুরো জনপদটির অর্থনৈতিক চাবি এই শিল্প। এমনই মির্জাপুরের সাংসদ ফুলনদেবী।

Kolkata 24×7 প্রকাশ করছে আসল মির্জাপুরের কথা। ওয়েব সিরিজে যে কথা আসে না। এই মির্জাপুরের রানি ফুলনদেবী।

   

পড়ুন: Mirzapur:পুলিশের সামনেই চলছিল গুলি…ওয়েব সিরিজ নয় রিয়েল মির্জাপুরের রানি ফুলনদেবী (১)

পড়ুন: Mirzapur: বাবা কেমন আছ? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্তকে প্রণাম করল ফুলন (২)

সংসদ চলাকালীন সেন্ট্রাল হলের আনাচে কানাচে এমন সব রকমারি কাণ্ড ঘটে যার ফল সুদূরপ্রসারী হয়।  “সেন্ট্রাল হলের আড্ডাখানার প্রতি আমার অসীম আকর্ষণ। বোধকরি সারা দেশের মধ্যে এটি একমাত্র স্থান যেখানে মন্ত্রীদের অহমিকার উগ্র প্রকাশ নেই, নেই দলাদলির ক্ষুদ্রতা। রাজনৈতিক দুনিয়ার কৈলাস-মানস সরোবর আর কি !” সাংবাদিক নিমাই ভট্টাচার্যের কলমে দিল্লির রাজনীতির বাহারি অমলতাস ফুল ধরা আছে “রাজধানীর নেপথ্যে”।

রাশভারি ব্যক্তিত্ব ও অনাড়ম্বর জীবনের মিশেলে ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত সংসদের স্তম্ভ হিসেবে সুপরিচিত। এমনই ব্যক্তিত্বের সামনে কে না ঝুঁকতেন। ‘বাবা প্রণাম’ বলে যেদিন সমাজবাদী এমপি ফুলন দেবী তাঁর পিতৃতুল্য ইন্দ্রজিৎ গুপ্তের পায়ে হাত দিলেন, আসে পাশের সবাই চমকে গেল। সংসদ ভবনে এমন দৃশ্য অনেকবার দেখা গিয়েছে। শুধু ফুলন নন, বঙ্গজ কমিউনিস্ট মেদিনীপুরের সিপিআই সাংসদ ইন্দ্রজিৎবাবুর সঙ্গে দেখা হলেই টুক করে প্রণামটি সেরে নিতেন বিজেপির সর্বভারতীয় নেত্রী সুষমা স্বরাজ। 

১৯৯৬ সালের জাতীয় রাজনীতিতে তখন সরকার গঠন ও পড়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নতুন গল্পের জন্ম দিচ্ছিল। ‘তৃতীয় বিকল্প’ বা ‘থার্ড ফ্রন্ট’ শব্দটি রাস্তার অলি গলিতে ঘুরছে। এই জোটের সব থেকে বড় শক্তি বামপন্থীরা। তবে সিপিআইএম কোনওভাবেই প্রধানমন্ত্রীর পদে জ্যোতি বসুর নামে শিলমোহর দিল না। টানা টালবাহানার পর প্রধানমন্ত্রী হলেন দেবেগৌড়া। 

একগুচ্ছ শরিক দলের প্রবল চাপে সে এক নড়বড়ে তৃতীয় বিকল্পের সরকার। সরকারে সিপিআইএম গেল না। তবে সরকারে গেল সিপিআই। দেবেগৌড়ার সরকারে ইন্দ্রজিত গুপ্তর দাপট দেখার মত। সেই থার্ড ফ্রন্ট সরকারের শরিক সমাজবাদী পার্টি। চম্বলের দস্যুরানি থেকে মির্জাপুরের সমাজবাদী সাংসদ নির্বাচিত হয়ে সংসদ ভবনে ঢুকে চমকে যাওয়াই স্বাভাবিক ফুলন দেবীর। তবে ফুলন নিজেই এক চমক।

সংসদে গিয়ে মির্জাপুরের ‘আনপড় গাঁওয়ার’ এমপি ফুলন দেবী তাঁর ‘খড়িবোলি’ (শুদ্ধ হিন্দি নয়) বাচনে বেশকিছু তথ্য দিয়ে গড়গড়িয়ে মির্জাপুরের গালিচা ‘বেওসা’ নিয়ে বলে দিলেন। তবে ভাষণের বেশিরভাগটাই ছিল এলাকার গরিবদের উন্নতি আর মহিলাদের জন্য ব্যবস্থার বিষয়ে।

ম্যাডাম ফুলন তো বলেই খালাস নন, একেবারে ‘এমপি পাওয়ার’ প্রয়োগ করতেই মরিয়া। খবরের কাগজের পাতায় পাতায় এসব মির্জাপুরে পৌঁছতেই বেশি কিছু না বোঝা ফুলন সমর্থকরা আবেগের আনন্দে আকাশের দিকে তাক করে বন্দুক থেকে গুলি চালিয়ে দিল। গুড়়ুম গুড়ুম শব্দে কাঁপছিল গঙ্গার তীর। আর দিল্লি কাঁপিয়ে মির্জাপুরে ফিরলেন ম্যাডাম ফুলন। সে এক হই হই কাণ্ড।  এমপি পারফরমেন্সে খুব একটা খুশি হয়নি গালিচা ব্যবসায়ীরা। একটা ফাটল তৈরি হচ্ছিল।

একসময় চন্বল নদীর অতি দুর্গম বেহড় এলাকায় গুলি খেয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে দিনের পর দিন চলা ফুলন দেবীর কাছে গালিচা মানে ছিল মাটির ঢিপি। বন্দুক ঠেস দিয়ে বসতেই ঝিমুনি চলে আসে। আচমকা দলেরই কেউ বলল-‘ভাগো পুলিশ কে কুত্তে আয়ে’, ব্যাস আবার দৌড় শুরু। চম্বল থেকে যমুনার তীর বরাবর দুটি রাজ্য উত্তর ও মধ্যপ্রদেশের এপার ওপার করে দস্যুরানি। বেঁচে থাকার ইচ্ছা শুধুমাত্র বদলা নেওয়ার জন্যই। গণধর্ষণের প্রতিশোধ নিতে গণহত্যার সময় নিরীহ মানুষের রক্তের উপরেও থুতু ছিটিয়েছে ফুলন। জ্বলতে থাকা অঙ্গারের মত পুড়ছিল তার ‘বাগী’ জীবন।(চলবে)