“Kolkata24x7-এ খবর হলে আমেরিকা থেকেও ফোন আসে”, বলতেন জয়

রানা দাস: খবরটা শোনার পর অবাক হয়েছিলাম। হাসপাতাল থেকে অনেকবার তো বাড়ি ফিরছিলেন। এবার কী হল? শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। গাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ঘুরতেন। শরীর…

Joy Banerjee ,Kolkata24x7

রানা দাস: খবরটা শোনার পর অবাক হয়েছিলাম। হাসপাতাল থেকে অনেকবার তো বাড়ি ফিরছিলেন। এবার কী হল? শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। গাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ঘুরতেন। শরীর ভাঙলেও কখনও মন ভাঙেনি।  খুব তরতাজা। সবসময়ই নিজেকে সেই “গাঁয়ের ছেলে হিরু” বলেই মনে করতেন। একটা পুরো জাতিকে আই লাভ ইউ বলতে শিখিয়েছিলেন। আপামর বাঙালির মতো জয় বন্দ্যোপাধ্যায়েরও (Joy Banerjee) খুব প্রিয় চরিত্র ছিল হিরু।

অভিনয় ছেড়ে নেতা হওয়ার পর আচমকা শিরোনামে আসেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। সেটা ২০১৪ সাল।  তখন কয়েক মাস হল Kolkata24x7 চালু হয়েছে। সবার মতোই আমরাও খবর করেছিলাম। বাংলার প্রথম পূর্ণাঙ্গ নিউজ পোর্টাল হওয়ার সুবাদে আমাদের পসার বাড়ছিল। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের পর রাজ্যজুড়ে দলের প্রচার করতেন জয়। তখন তিনি রাজ্য বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। সহকর্মী সৌমেন শীল সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্য নিয়ে জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের খবর লিখত। বেশিরভাগই ছিল নেতিবাচক। পাঠকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হচ্ছিল। গুগল অ্যানালিটিক্সে দেখতাম আমেরিকা কিংবা তেহরান থেকেও জয় বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কিত খবর পড়ছেন।

   

এমন সময় একদিন আমার কাছে ফোন এল। তখন Truecaller আসেনি। তাই কে ফোন করছে আগাম বোঝার উপায় ছিল না। কল রিসিভ করতেই উলটো প্রান্তের ব্যক্তি বললেন, “জয় ব্যানার্জি বলছি। আমি কি রানার সঙ্গে কথা বলছি?” নিয়মিত খবর করার জন্য ধন্যবাদ জানালেন আর সৌমেনের ফোন নম্বর নিলেন। কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। নেতিবাচক খবর হলে নেতারা ফোন করে হুমকি দেন—এটাই দেখে এসেছি। এ তো অন্য ছবি। সেদিনই বলেছিলেন, “এবিপি আনন্দ আর Kolkata24x7-এ খবর হলে অনেকের ফোন আসে। আলিপুরদুয়ার থেকেও আসে আবার আমেরিকা থেকেও। আমেরিকার বাঙালিদের কাছে তোমার পোর্টাল খুব জনপ্রিয়। ওখানে আমার বোন থাকে, আমায় বলেছে।”

সেই শুরু। তারপর আর সোশ্যাল মিডিয়ার উপরে ভরসা নয়। অনেক গভীরের খবর আমরা করেছি। যারা সেই সময়ও Kolkata24x7 পড়তেন, তাঁরা বুঝবেন। সৌমেনের থেকে জেনেছিলাম জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানা কীর্তি। ২০১৪ সালে অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ডিভোর্স এবং আসানসোলের মেয়ে অঙ্কিতার সঙ্গে বিয়ে—এই খবরটা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর আগের দিনও অধিকাংশ ব্যক্তিই জানতেন না। সংবাদমাধ্যমের অনেকেরই তা অজানা ছিল। তবে গাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে সারা বাংলা চষে ফেলার বিষয়টা শুনে অবাক হয়েছিলাম। আরেকটা বিষয় শুনেছিলাম যে দলের প্রচারে গেলেও গাড়ির জ্বালানির খরচের জন্য বিজেপির থেকে নিতেন না জয়।

Advertisements

এতকিছুর পরেও কিছুটা অভিমান ছিল। তবে মনটা সবসময়ই ফুরফুরে থাকত। শুরুতেই লিখলাম—জয় ছিলেন একদম তরতাজা যুবক গাঁয়ের ছেলে হিরু। এর প্রমাণ পেয়েছিলাম ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি। দিনটা ছিল আমার বাবা হওয়ার ১১ বছর পূর্তি এবং আর সেদিনই আমার বাবাকে হারানোর দিন। রাতে শ্মশানে বসেছিলাম। ওদিকে টানা ২ দিন পর বাড়ি ফিরেছেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ ক্লান্ত। আমায় ফোন করেছিলেন। তখনও আমার পিতৃবিয়োগের খবর তাঁর কানে যায়নি। কল ধরতেই চিৎকার করে বলেছিলেন, “রানা ভাই, হ্যাপি নিউ ইয়ার…”। আমি বললাম, “আর, নিউ ইয়ার…”। সব শুনে মুষড়ে পড়েছিলেন। আমায় আর ফোন করেননি। সৌমেনের থেকে নিয়মিত খবর নিতেন।

২০১৯ সালের পর আমাদের সবার জীবনেই অনেক চড়াই-উতরাই গেছে। করোনা মহামারির সময় গাঁয়ের ছেলে হিরুর মতোই জয় আমাদের পাশে ছিলেন। বছর তিনেক ধরে ফোন করতেন না।  দরকার হলে সৌমেনকে বলতেন। এ বিষয়ে নাকি জয় বলেছিলেন, “রানাকে একটা কথা দিয়ে সেটা রাখতে পারিনি। লজ্জায় ফোন করি না।  রানার লড়াইকে কুর্নিশ।  Kolkata24x7-এর উন্নতি দেখলে ভালো লাগে।”

রাখতে না পারা কথা নিয়েই আজ তিনি বহুদূরে। সোমবার সকালে সৌমেনের থেকেই দুঃসংবাদটা পেলাম। তাঁর থেকে শেখা কথাটাই বলতে চাই, “আই লাভ ইউ… এটা সারাজীবনের।”

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News