ভারতের শীর্ষস্থানীয় ফুড ডেলিভারি এবং টেক কোম্পানি জোম্যাটো (Zomato) লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) রিনশুল চন্দ্র শনিবার তাঁর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তিনি জোম্যাটোর ফুড অর্ডারিং এবং ডেলিভারি ব্যবসার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এক্সচেঞ্জ ফাইলিংয়ে প্রকাশিত তাঁর পদত্যাগপত্রে রিনশুল জানিয়েছেন যে, তিনি নতুন সুযোগ এবং আগ্রহের ক্ষেত্রে পা বাড়াতে চান। তিনি লিখেছেন, “গত সাত বছর জোম্যাটোতে আমার যাত্রা অসাধারণভাবে পরিপূর্ণ ছিল। এখানে আমি যে ভরসা, সমর্থন এবং সুযোগ পেয়েছি, তার জন্য আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ। ইটার্নালের আমাদের বিশ্বমানের দলগুলোর জন্য আমি শুভকামনা জানাই।” তাঁর শেষ কর্মদিবস হবে আগামী ৭ এপ্রিল।
জোম্যাটো থেকে ইটার্নাল: নতুন যুগের সূচনা
রিনশুল চন্দ্রের পদত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে জোম্যাটো কোম্পানি হিসেবে একটি বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আগামী ৯ এপ্রিল থেকে কোম্পানির অনুমোদিত নতুন নাম ‘ইটার্নাল’ কার্যকর হতে চলেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে জোম্যাটোর বোর্ড তাদের কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে ‘ইটার্নাল’ করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল, যা তাদের ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়িক পোর্টফোলিওর প্রতিফলন।
কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) দীপিন্দর গোয়াল শেয়ারহোল্ডারদের জানিয়েছিলেন যে, এই নাম পরিবর্তন শুধুমাত্র কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য হবে, জোম্যাটো ব্র্যান্ড বা অ্যাপ্লিকেশনের নামে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ‘ইটার্নাল’ নামের অধীনে জোম্যাটোর চারটি মূল ব্যবসায়িক খাত থাকবে—তাদের প্রধান ফুড ডেলিভারি পরিষেবা, কুইক-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্লিঙ্কিট, বিটুবি সাপ্লাই ব্যবসা হাইপারপিওর এবং ডাইনিং-আউট প্ল্যাটফর্ম ডিস্ট্রিক্ট। এই নতুন ছাতার নিচে জোম্যাটো তাদের ব্যবসাকে আরও বিস্তৃত এবং বৈচিত্র্যময় করে তুলতে চায়।
রিনশুলের অবদান এবং জোম্যাটোর যাত্রা
রিনশুল চন্দ্র গত সাত বছর ধরে জোম্যাটোর ফুড ডেলিভারি ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে কোম্পানি ভারতের ফুড ডেলিভারি বাজারে নিজেকে শীর্ষে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি জোম্যাটোর এই অভূতপূর্ব বৃদ্ধি এবং গ্রাহকভিত্তিক উদ্ভাবনের পেছনে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানি একটি নতুন অধ্যায়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে ‘ইটার্নাল’ নামটি তাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের প্রতীক হয়ে উঠবে।
শেয়ার বাজারে জোম্যাটোর অবস্থান
শুক্রবার ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে (এনএসই) জোম্যাটোর শেয়ার ০.১৮% হ্রাস পেয়ে প্রতি শেয়ার ২১০.৫৩ টাকায় বন্ধ হয়। এটি নিফটি ৫০-এর ১.৪৯% পতনের তুলনায় কম। গত ১২ মাসে জোম্যাটোর শেয়ার ১০.৫১% বেড়েছে, তবে এ বছর এখন পর্যন্ত ২৪.৮% হ্রাস পেয়েছে। ব্লুমবার্গের তথ্য অনুসারে, কোম্পানিটির উপর নজর রাখা ৩০ জন বিশ্লেষকের মধ্যে ২৪ জন ‘কিনুন’ রেটিং, দুজন ‘ধরে রাখুন’ এবং চারজন ‘বিক্রি করুন’ সুপারিশ করেছেন। বিশ্লেষকদের গড় ১২ মাসের লক্ষ্যমূল্য থেকে বোঝা যায়, শেয়ারের দামে ৩৩.৮% বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
রিনশুল চন্দ্রের প্রস্থান এবং ‘ইটার্নাল’ নামে নতুন পরিচয় গ্রহণের মাধ্যমে জোম্যাটো একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে। কোম্পানির সিইও দীপিন্দর গোয়ালের নেতৃত্বে জোম্যাটো কেবল ফুড ডেলিভারি নয়, বরং কুইক-কমার্স, বিটুবি সাপ্লাই এবং ডাইনিং-আউটের মতো ক্ষেত্রে নিজেদের উপস্থিতি জোরদার করছে। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে জোম্যাটো ভারতের টেক এবং সার্ভিস সেক্টরে আরও বড় ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।
বাঙালি ব্যবসায়ী এবং প্রযুক্তি উৎসাহীদের কাছে জোম্যাটোর এই যাত্রা একটি আগ্রহের বিষয়। কলকাতার মতো শহরে, যেখানে ফুড ডেলিভারি এবং কুইক-কমার্সের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, জোম্যাটোর এই বিস্তৃতি এবং নতুন নামকরণ স্থানীয় বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে। রিনশুল চন্দ্রের বিদায়কে অনেকে একটি যুগের সমাপ্তি হিসেবে দেখলেও, ‘ইটার্নাল’ নামটি কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হয়ে উঠেছে।
রিনশুল চন্দ্রের পদত্যাগ এবং জোম্যাটোর ‘ইটার্নাল’ হয়ে ওঠার এই ঘটনা কোম্পানির জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। তাঁর সাত বছরের অবদান কোম্পানির ভিত শক্তিশালী করেছে, এবং এখন নতুন নামে জোম্যাটো ভারতের ডিজিটাল অর্থনীতিতে আরও বড় ভূমিকা পালনের জন্য প্রস্তুত। শেয়ার বাজারে বিশ্লেষকদের আশাবাদ এবং কোম্পানির ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়িক পরিসর ভবিষ্যতে এর সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করে তুলছে।