META-র প্রধান AI বিজ্ঞানী ইয়ান লেকুন সতর্ক করলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রযুক্তি প্রতিভাদের বৃহৎ পরিমাণে স্থানান্তর হতে পারে, এবং এই প্রতিভারা ইউরোপের দিকে চলে যেতে পারেন। এই ব্যাপারে তিনি সম্প্রতি একটি পোস্ট করেন LinkedIn, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র তার পাবলিক গবেষণা তহবিল ব্যবস্থা ধ্বংস করতে যাচ্ছে, এবং এর ফলস্বরূপ অনেক যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞানী এখন তাদের ‘প্ল্যান বি’-এর দিকে তাকাচ্ছেন।
লেকুনের এই মন্তব্য এমন সময়ে এসেছে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন একাধিক নির্বাহী আদেশ জারি করে জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনআইএইচ) সহ অন্যান্য গবেষণা প্রকল্পগুলির জন্য সরকারি তহবিল কাটছাট করেছে, যা বহু বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করে বায়োমেডিক্যাল গবেষণার জন্য। এছাড়া, এলন মাস্কের সরকারী দক্ষতা বিভাগ (ডগি) এ এনআইএইচ, ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA), পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা (EPA) এবং নাসার খরচ কাটানোর পরিকল্পনা করছে।
লেকুন তার পোস্টে বলেন, বিজ্ঞানীরা যে কারণে সবচেয়ে সৃজনশীল এবং উৎপাদনশীল হতে পারেন, তা হলো তাদের হাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা থাকা। তিনি বলেন, “বিজ্ঞানীদের জন্য গবেষণা পরিবেশ তৈরি করতে হলে কিছু মৌলিক শর্ত পূর্ণ করা উচিত।” লেকুনের মতে, বিজ্ঞানীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো:
১. সেরা ছাত্র এবং জুনিয়র সহযোগীদের সাথে যোগাযোগের সুযোগ।
২. গবেষণা তহবিলের সহজলভ্যতা এবং কম প্রশাসনিক বোঝা।
৩. ভালো ক্ষতিপূরণ (যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, কানাডার শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তুলনীয়)।
৪. তাদের নিজস্ব গবেষণার বিষয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করার স্বাধীনতা।
৫. গবেষণা সুবিধায় প্রবেশাধিকার (যেমন কম্পিউটিং অবকাঠামো ইত্যাদি)।
৬. শিল্প এবং স্টার্টআপদের সাথে সহযোগিতা বা পরামর্শ করার সুযোগ।
৭. মাঝারি Teaching এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব।
এদিকে, লেকুন আরও বলেন যে ইউরোপীয় একাডেমিয়া এই শর্তগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি শর্ত পূর্ণ করলেও, তাতে তেমন গবেষণা তহবিলের ব্যবস্থা এবং শিল্পের সঙ্গে সহযোগিতার সুযোগ নেই। তিনি জানান, ইউরোপের শিল্পখাতের ক্ষেত্রেও সেসব সুযোগ অত্যন্ত কম।
লেকুনের এই মন্তব্য, যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক গবেষণা তহবিলের ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে আরও গুরুতর হয়ে উঠছে। বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা যদি ইউরোপে চলে যান, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে বড় ধরণের বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিলের অভাব এবং প্রশাসনিক জটিলতা তাদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে কাজ করা আরও কঠিন করে তুলবে।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় দেশগুলিতে গবেষণার জন্য কিছু সুবিধা থাকলেও, তাদের গবেষণা প্রকল্প এবং তহবিলের কাঠামো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম শক্তিশালী এবং সীমাবদ্ধ। এতে অনেক বিজ্ঞানী ইউরোপে যাওয়ার বিকল্পকেই পছন্দ করছেন, যদিও তারা সেখানকার শিল্প খাতে আগের মতো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না।
লেকুন আরও জানান যে ইউরোপের একাডেমিয়া বেশ কয়েকটি দিক থেকে অগ্রগতির পথে থাকলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সেখানে কাজের সুযোগ কম। এসব দিক থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং শীঘ্রই এক দেশ থেকে আরেক দেশে প্রতিভার স্থানান্তর প্রবণতা তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এছাড়া, তিনি যোগ করেন যে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি গবেষণার ক্ষেত্রকে আরও আকর্ষণীয় করতে হলে বিজ্ঞানীদের জন্য আরও ভালো সুযোগ তৈরি করতে হবে। ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এ ধরনের তুলনা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, কারণ এখনকার বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং গবেষণার জন্য সরকারি তহবিলের ভূমিকায় পরিবর্তন আসতে পারে।
অতএব, লেকুনের এই সতর্কবার্তা বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি খাতে বড় পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিচ্ছে, যেখানে বিজ্ঞানীরা এবং গবেষকরা তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলোর জন্য নতুন রুট খুঁজে পেতে পারেন।