স্বাস্থ্য বিমা নিয়ে খরচের চিন্তা? বেছে নিন প্রিমিয়াম কমানোর এই ৫ স্মার্ট উপায়

Health Insurance tips: স্বাস্থ্যই সবথেকে বড় সম্পদ—এই প্রবাদটি আমরা সকলেই জানি। কিন্তু ব্যস্ত জীবনে এই অমূল্য সম্পদকে আমরা প্রায়শই উপেক্ষা করি। অসুস্থতা যখন আমাদের স্পর্শ…

Worried About Health Insurance Costs

Health Insurance tips: স্বাস্থ্যই সবথেকে বড় সম্পদ—এই প্রবাদটি আমরা সকলেই জানি। কিন্তু ব্যস্ত জীবনে এই অমূল্য সম্পদকে আমরা প্রায়শই উপেক্ষা করি। অসুস্থতা যখন আমাদের স্পর্শ করে, তখনই টের পাই এর প্রকৃত গুরুত্ব। চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস বলেছিলেন, “একজন সুস্থ মানুষ হাজারটা জিনিস চায়, কিন্তু একজন অসুস্থ মানুষ চায় মাত্র একটি—সুস্থতা।” এই কথাগুলিই আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সুস্থতা এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি কতোটা গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের প্রেক্ষাপটে, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খরচ দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। তথ্য বলছে, দেশে মেডিক্যাল ইনফ্লেশন বা চিকিৎসা ব্যয়ের বৃদ্ধি হার প্রতি বছর গড়ে ১০-১২% হারে বেড়ে চলেছে। এর ফলে অনেকের পক্ষেই মানসম্মত চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে, স্বাস্থ্য বিমা বা হেলথ ইনশিওরেন্স একটি অপরিহার্য দিক হয়ে উঠেছে।

   

জেনে নিন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় যা আপনাকে সাশ্রয়ী অথচ কার্যকর হেলথ ইনশিওরেন্স গ্রহণে সাহায্য করতে পারে:

১. মাসিক EMI ও মাল্টি-ইয়ার প্ল্যান বেছে নিন
অনেক সময় এককালীন প্রিমিয়াম দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বর্তমানে অনেক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি EMI-তে প্রিমিয়াম দেওয়ার সুবিধা দিচ্ছে। এর ফলে মাসিক খরচ নিয়ন্ত্রণে রেখে মানসম্মত বিমা করা সম্ভব।

তাছাড়া, এক বছরের পরিবর্তে তিন বছরের জন্য বিমা গ্রহণ করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। এতে ভবিষ্যতের খরচও বাঁচে, এবং কভারেজেও বিঘ্ন ঘটে না।

২. নেটওয়ার্ক হাসপাতাল ব্যবহার করুন
নির্দিষ্ট নেটওয়ার্ক হাসপাতালের মাধ্যমে চিকিৎসা করালে অনেক বিমা কোম্পানি প্রিমিয়াম ১৫% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। কারণ এই হাসপাতালগুলির সঙ্গে বিমা কোম্পানির চুক্তি থাকে, যার ফলে চিকিৎসা ব্যয় কমে। কিছু বিমা পরিকল্পনায় পছন্দের হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে বা সাধারণ ওয়ার্ড বা টুইন-শেয়ার্ড রুম বেছে নিলে আরও খরচ বাঁচানো যায়।

৩. অনলাইনে তুলনা করুন ও অল্প বয়সে শুরু করুন
বর্তমানে অনেক অনলাইন টুলস রয়েছে যা বিমা পলিসি তুলনা করতে সাহায্য করে। এতে আপনি নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী সর্বোত্তম কভারেজ ও সাশ্রয়ী প্রিমিয়াম খুঁজে নিতে পারবেন। বিভিন্ন বিমা কোম্পানির মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতিও ভিন্ন হয়, ফলে তুলনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যত আগে বিমা শুরু করবেন, তত কম প্রিমিয়াম দিতে হবে। অল্প বয়সে বিমা করলে প্রি-এক্সিস্টিং ডিজিজের ঝুঁকি কম, ফলে বিমা কোম্পানিও কম রেট চায়।

Advertisements

৪. সুপার টপ-আপ প্ল্যান ব্যবহার করুন
পূর্ণাঙ্গ বিমার পরিবর্তে সুপার টপ-আপ প্ল্যান একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। এগুলি তখনই কার্যকর হয় যখন আপনার বেস পলিসির নির্ধারিত ডিডাক্টিবল সীমা অতিক্রম করে। এতে অতিরিক্ত কভারেজ পাওয়া যায় অনেক কম খরচে।

ডিডাক্টিবল ও কো-পেমেন্ট নির্ধারণ করেও প্রিমিয়াম কমানো সম্ভব। তবে এটি করতে হলে নিজের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

৫. ভালো CIBIL স্কোর রাখুন এবং নো-ক্লেম বোনাস উপভোগ করুন
আজকাল অনেক বিমা কোম্পানি গ্রাহকের ক্রেডিট স্কোর, বিশেষত CIBIL স্কোর, দেখে প্রিমিয়াম নির্ধারণ করে। আপনার স্কোর ভালো হলে কম প্রিমিয়ামে ভালো কভারেজ পাওয়া সম্ভব। তাই সময়মতো ঋণ পরিশোধ ও ক্রেডিট ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ।

তাছাড়া, নো-ক্লেম বোনাস বা ক্লেম না করায় প্রতি বছর বিমার পরিমাণ বাড়ে অথবা প্রিমিয়ামে ছাড় পাওয়া যায়। অতএব, অপ্রয়োজনীয় ক্লেম না করে সুস্থ জীবনযাপন করলে দীর্ঘমেয়াদে অনেক লাভ হয়।

স্বাস্থ্য বিমা মানেই বিশাল খরচ নয়। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে কম খরচে সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়া সম্ভব। আজকের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে এই কথাটাই আমাদের মনে রাখা জরুরি—স্বাস্থ্য এবং অর্থের সুরক্ষা দুটোই একসঙ্গে নিশ্চিত করতে হলে একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন।