ক্রেডিট কার্ড নয়, UPI-ই কি হবে সাশ্রয়ের পথ? জানুন বিস্তারিত

ভারতে ডিজিটাল অর্থপ্রদানের পরিকাঠামোয় UPI (ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস) নিরবিচারে রাজত্ব করে চলেছে। ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে ইউপিআই লেনদেনের পরিমাণ ৯৩.২৩ বিলিয়ন পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায়…

UPI Replace Credit Cards

ভারতে ডিজিটাল অর্থপ্রদানের পরিকাঠামোয় UPI (ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস) নিরবিচারে রাজত্ব করে চলেছে। ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে ইউপিআই লেনদেনের পরিমাণ ৯৩.২৩ বিলিয়ন পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪২ শতাংশ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (NPCI) এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

এই প্রবল জনপ্রিয়তার প্রেক্ষিতে এবার ভারত সরকার এমন একটি পরিকল্পনা নিচ্ছে, যার ফলে UPI-র মাধ্যমে অর্থপ্রদান আরও সাশ্রয়ী হতে পারে ক্রেতাদের জন্য। কেন্দ্রের ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রক এমন এক প্রক্রিয়ার কথা ভাবছে, যার মাধ্যমে UPI ব্যবহারের আর্থিক সুবিধা সরাসরি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।

   

ক্রেডিট কার্ডের তুলনায় UPI-তে মিলবে দামি পণ্যে ছাড়
লিভমিন্ট-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই পরিকল্পনা কার্যকর হলে UPI ব্যবহারকারীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল্যের ক্ষেত্রে একটি ছাড় পাবেন। যেমন ধরা যাক, একটি পণ্যের মূল্য যদি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে ১০০ টাকা হয়, তাহলে UPI ব্যবহার করলে সেটি পড়বে মাত্র ৯৮ টাকা।
এই ব্যবস্থার মূল পেছনে রয়েছে ক্রেডিট কার্ডের সঙ্গে যুক্ত MDR (Merchant Discount Rate) এর বিষয়টি। সাধারণত ক্রেডিট কার্ড লেনদেনে ২-৩ শতাংশ পর্যন্ত এমডিআর ধার্য করা হয়, যা ব্যবসায়ীদের লাভের হার কমিয়ে দেয় বা খরচ হিসেবে গ্রাহকদের ওপর এসে পড়ে। অন্যদিকে, UPI-তে এই অতিরিক্ত খরচ নেই।

ডিজিটাল লেনদেনে স্বচ্ছতা ও সাশ্রয় আনবে এই পদক্ষেপ
Ezeepay-এর সিইও শামস তাবরেজ এই পরিকল্পনাকে “বাস্তবসম্মত এবং খরচ কার্যকারিতার একটি চমৎকার উপায়” বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “যদি গ্রাহক স্পষ্টভাবে একটি অর্থনৈতিক সুবিধা পান UPI ব্যবহারে — যেমন ১০০ টাকার জিনিস ৯৮ টাকায় কেনা যায় — তাহলে দৈনন্দিন কেনাকাটার অভ্যাসে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে এবং খুচরো দামের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বাড়বে।”

উল্লেখযোগ্য যে, ২০২৫ সালের জুন থেকে UPI লেনদেনের গতি দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যার ফলে এটি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে।
উদ্দেশ্য এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এই প্রস্তাবিত পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হল UPI লেনদেনকে আরও জনপ্রিয় করে তোলা এবং ডিজিটাল ইকোসিস্টেমকে সমর্থন জোগানো। ইতিমধ্যেই গ্রামাঞ্চলে ইউপিআই ব্যবহারের ব্যাপকতা বেড়েছে, আর শহরাঞ্চলে এটি রুটিন লেনদেনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Advertisements

ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রক আগামী জুন মাসে এই বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ওই বৈঠকের পরই একটি চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করা হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাজারে এর সম্ভাব্য প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি UPI-তে মূল্যে এমন ছাড় বাস্তবে চালু হয়, তাহলে এটি শুধু ক্রেতাদেরই নয়, বিক্রেতাদের কাছেও উপকারী হবে। একদিকে যেখানে গ্রাহক কম দামে পণ্য কিনতে পারবেন, অন্যদিকে ব্যবসায়ীরাও এমডিআর খরচের ঝামেলা ছাড়াই লেনদেন পরিচালনা করতে পারবেন। এছাড়া ছোট দোকানদার এবং ক্ষুদ্র ব্যবসার ক্ষেত্রেও এই ধরনের সুবিধা ডিজিটাল লেনদেনের গতি বাড়াতে সহায়ক হবে।

ভারতে ডিজিটাল পেমেন্টের ভবিষ্যৎ প্রতিনিয়ত রূপান্তর হচ্ছে, এবং UPI তার কেন্দ্রে রয়েছে। সরকারের এই নতুন উদ্যোগ যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে তা UPI-কে আরও ব্যাপক ভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলবে। এটি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্যই খরচ কমাতে সাহায্য করবে, এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়া উদ্যোগকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

UPI-এর মাধ্যমে এখন শুধু অর্থপ্রদান নয়, বরং অর্থনীতি গঠনের একটি নতুন পথ তৈরি হচ্ছে — এক ঝটকায়, আরও দ্রুত, স্বচ্ছ ও সাশ্রয়ী।