ডিএ বকেয়া নিয়ে বড় আপডেট, সংসদে কেন্দ্রের জবাব

কোভিড-১৯ মহামারির সময় কেন্দ্রীয় সরকার কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য ধার্য তিন কিস্তির মহার্ঘ ভাতা (DA arrears) এবং মহার্ঘ ভাতা রিলিফ (ডিআর) স্থগিত করেছিল। অর্থনৈতিক বিপর্যয়…

West Bengal Government Employees’ Expectations Soar for 8th Pay Commission Salary Hike

কোভিড-১৯ মহামারির সময় কেন্দ্রীয় সরকার কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য ধার্য তিন কিস্তির মহার্ঘ ভাতা (DA arrears) এবং মহার্ঘ ভাতা রিলিফ (ডিআর) স্থগিত করেছিল। অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং সরকারি অর্থনীতির উপর চাপ কমানোর প্রয়োজনীয়তার কারণে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি, ১ জুলাই এবং ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রদেয় এই তিন কিস্তির অর্থ বন্ধ রাখা হয়েছিল।

সংসদে এই বকেয়া অর্থ প্রদানের সময়সীমা ও সরকারের আর্থিক অবস্থার বিষয়ে একাধিক প্রশ্ন ওঠে। সমাজবাদী পার্টির সাংসদ আনন্দ ভদৌরিয়া সরকারের কাছে জানতে চান— কেন ডিএ ও ডিআর স্থগিত করা হয়েছিল, বর্তমানে আর্থিক অবস্থা কী, এবং বকেয়া অর্থ কবে দেওয়া হবে।

   

মহার্ঘ ভাতা ও মহার্ঘ ভাতা রিলিফ কী?
মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance বা DA) হলো কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ার ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া অতিরিক্ত অর্থ। পেনশনভোগীদের জন্য একই ধরনের ভাতা দেওয়া হয়, যেটি মহার্ঘ ভাতা রিলিফ (Dearness Relief বা DR) নামে পরিচিত। এর উদ্দেশ্য হলো বাজারে পণ্যের দাম বাড়লেও তাঁদের ক্রয়ক্ষমতা যেন কমে না যায়।
বর্তমানে ৭ম বেতন কমিশনের অধীনে ডিএ মূল বেতনের ৫৫ শতাংশ। নতুন বেতন কমিশন কার্যকর হলে সাধারণত ডিএ শূন্যে রিসেট হয়।

সরকারের অবস্থান:
সরকার লিখিত জবাবে জানিয়েছে—“কোভিড-১৯-এর সময় অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং সরকারি আর্থিক ভারসাম্যের উপর চাপ কমানোর জন্য ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি, ১ জুলাই এবং ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রদেয় তিন কিস্তির মহার্ঘ ভাতা/মহার্ঘ ভাতা রিলিফ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।”

অর্থাৎ, ওই সময় রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল, অথচ সরকারের ব্যয় বেড়েছিল নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের কারণে। এই পরিস্থিতিতে ডিএ/ডিআর-এর বাড়তি অর্থ প্রদানের আর্থিক সামর্থ্য ছিল না।

আর্থিক ঘাটতির চিত্র:
সরকার আরও জানায় যে, কোভিডের সময় দেশের রাজস্ব ঘাটতি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল— ২০২০-২১ অর্থবর্ষে তা হয়েছিল জিডিপির ৯.২ শতাংশ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে বাজেটের অনুমান অনুযায়ী ঘাটতি কমে ৪.৪ শতাংশে নামবে।

তবে এই উন্নতি সত্ত্বেও, মহামারির আর্থিক প্রভাব এবং অতিরিক্ত কল্যাণমূলক ব্যয়ের “ফিসক্যাল স্পিলওভার” বা আর্থিক প্রতিক্রিয়া একাধিক বছর ধরে চলেছে। তাই ১৮ মাসের ডিএ-ডিআর বকেয়া পরিশোধ করা “বাস্তবসম্মত নয়” বলে সরকার জানায়।

বেতন কমিশনের প্রেক্ষাপট:
ডিএ/ডিআর বকেয়া নিয়ে আলোচনার মাঝেই দেশে নতুন ৮ম বেতন কমিশন নিয়ে জল্পনা চলছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইউনিয়ন ক্যাবিনেট কমিশন গঠনের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিলেও, এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশন গঠিত হয়নি।

Advertisements

কমিশন গঠিত হলে, তা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন, অর্থ মন্ত্রণালয়, এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে বেতন কাঠামো, ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রস্তুত করবে। সাধারণত এই প্রক্রিয়াটি এক বছরের বেশি সময় ধরে চলে। রিপোর্ট জমা ও সুপারিশ কার্যকর হওয়ার পর ডিএ আবার শূন্যে গিয়ে পুনরায় গণনা শুরু হয়।

স্থগিত অর্থ নিয়ে কর্মচারীদের দাবি:
সরকারি কর্মচারী সংগঠন ও পেনশনভোগীদের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি উঠছে, ২০২০-২১ সালে স্থগিত হওয়া তিন কিস্তির ডিএ/ডিআর ফেরত দেওয়া উচিত। তাঁদের যুক্তি— এই অর্থ তাঁদের প্রাপ্য এবং কোভিডের সময় কাজ চালিয়ে যাওয়া কর্মচারীদের প্রতি ন্যায্যতা প্রদর্শনের জন্য এটি দেওয়া জরুরি।

তবে সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে— রাজস্ব ঘাটতি এবং কোভিড-পরবর্তী আর্থিক চাপে এখনও এই অর্থ দেওয়া সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি উন্নত হলে এ বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে, কিন্তু বর্তমানে কোনও সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি।

ডিএ-ডিআর বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা:
যদিও বকেয়া কিস্তি দেওয়া হয়নি, ২০২১ সালের জুলাই থেকে পুনরায় ডিএ/ডিআর বাড়ানো শুরু হয়েছে এবং ২০২৫ সালের হিসাবে এটি মূল বেতনের ৫৫ শতাংশে পৌঁছেছে। প্রতি ছয় মাস অন্তর জানুয়ারি ও জুলাই মাসে মুদ্রাস্ফীতির হার অনুযায়ী ডিএ/ডিআর-এর হার সমন্বয় করা হয়।

কোভিড মহামারির সময় সরকারের আর্থিক সংকট মোকাবিলার অংশ হিসেবে গৃহীত ডিএ-ডিআর স্থগিতের সিদ্ধান্ত এখনও কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য অমীমাংসিত একটি বিষয় রয়ে গেছে। একদিকে সরকারের দাবি— আর্থিক ভারসাম্য পুনর্গঠনই এখন অগ্রাধিকার, অন্যদিকে কর্মচারীদের আশা— দীর্ঘদিনের প্রাপ্য অর্থ ফেরত পাবে তারা।

৮ম বেতন কমিশন কার্যকর হলে বেতন কাঠামো ও ভাতা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসতে পারে, তবে ততদিন পর্যন্ত ১৮ মাসের বকেয়া ডিএ/ডিআর পাওনা কেবলই একটি অপেক্ষার বিষয় হয়ে থাকবে।