আপনারও কি Credit Card আবেদন বাতিল? চেক করুন এই ১০টি মূল কারণ

ভারতে ক্রেডিট কার্ড (Credit Card) এখন ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনলাইন শপিং, রেস্টুরেন্টে খাওয়া বা ছুটি কাটানোর জন্য বুকিং — সব ক্ষেত্রেই ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার…

Multiple Credit Card india girl

ভারতে ক্রেডিট কার্ড (Credit Card) এখন ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনলাইন শপিং, রেস্টুরেন্টে খাওয়া বা ছুটি কাটানোর জন্য বুকিং — সব ক্ষেত্রেই ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বাড়ছে। ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের (RBI) সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ ১৫% বৃদ্ধি পেয়ে রেকর্ড ২১.১৬ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। আগের অর্থবছরে এই অঙ্ক ছিল ১৮.৩২ লাখ কোটি টাকা।

এই বিশাল বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকের আকর্ষণীয় রিওয়ার্ড প্রোগ্রাম, ক্যাশব্যাক অফার, সহজ EMI সুবিধা এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে দ্রুত আবেদন ও অনুমোদন প্রক্রিয়া।
তবে এত সুযোগ-সুবিধা সত্ত্বেও অনেকেই এখনও ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হন। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তাই ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করার আগে নিজের যোগ্যতা (eligibility) সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।

   

কী কী কারণে ক্রেডিট কার্ডের আবেদন বাতিল হতে পারে?
১. কম ক্রেডিট স্কোর:
ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করার আগে ব্যাংক বা ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন আপনার ক্রেডিট স্কোর দেখে। এই স্কোর আপনার ঋণ শোধের ইতিহাস এবং আর্থিক দায়িত্বের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত ৭০০ এর উপরে ক্রেডিট স্কোর থাকা ভালো। কম স্কোর থাকলে ব্যাংক আপনাকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গ্রাহক হিসেবে বিবেচনা করে এবং আবেদন বাতিল করতে পারে।

২. অনিয়মিত আয়:
যদি আপনার আয় স্থায়ী না হয় বা অনিয়মিত হয়, তাহলে ব্যাংক আপনার ঋণ শোধের সক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ে। অনিয়মিত বা কম আয়ের কারণে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে।

৩. অতিরিক্ত ঋণ:
যদি আপনার আগে থেকেই একাধিক ঋণ থাকে, যেমন পার্সোনাল লোন, হোম লোন বা অন্য কোনো ধরণের ঋণ, তাহলে ব্যাংক ভাবতে পারে যে নতুন ক্রেডিট কার্ডের কারণে আপনার ঋণের বোঝা আরও বাড়বে। ফলে আবেদন প্রত্যাখ্যাত হতে পারে।

৪. ঋণ শোধে ব্যর্থতা:
পূর্বের কোনো ঋণ সময়মতো শোধ না করলে বা ডিফল্ট করলে তা সরাসরি আপনার ক্রেডিট স্কোরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে নতুন ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

৫. অতিরিক্ত আবেদন করা:
অনেকে একসাথে একাধিক ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করেন। এতে আপনার ক্রেডিট রিপোর্টে ‘হার্ড ইনকোয়ারি’ যুক্ত হয়, যা স্কোর কমিয়ে দেয়। ফলে ব্যাংকের চোখে আপনি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন।

৬. আবেদনপত্রে ভুল তথ্য:
ব্যক্তিগত তথ্য, আয়ের তথ্য বা চাকরির বিবরণে কোনো ভুল থাকলে আবেদন সঙ্গে সঙ্গেই বাতিল হয়ে যেতে পারে। সঠিক ও স্বচ্ছ তথ্য প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisements

৭. সীমিত ক্রেডিট হিস্ট্রি:
যদি আপনি প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করেন, তাহলে আপনার ক্রেডিট হিস্ট্রি সীমিত থাকে। এই অবস্থায় ব্যাংক আপনার আর্থিক আচরণ বোঝতে পারে না। এর সমাধান হিসেবে, কিছু ব্যাংক ফিক্সড ডিপোজিটের ওপর ভিত্তি করে সিকিউরড ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে, যা আপনার ক্রেডিট হিস্ট্রি তৈরি করতে সাহায্য করবে।

৮. চাকরির স্থিতিশীলতা:
আপনার নিয়োগকর্তার সুনাম, আপনার চাকরির সময়কাল এবং প্রায়ই চাকরি পরিবর্তনের প্রবণতা ব্যাংকের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক স্থিতিশীলতার প্রমাণ দিতে পারলে ব্যাংক সহজে আস্থা পায়।

৯. উচ্চ ক্রেডিট ব্যবহার হার (utilisation ratio):
যদি আপনার বিদ্যমান ক্রেডিট কার্ডের লিমিটের একটি বড় অংশ আপনি নিয়মিত ব্যবহার করেন, তাহলে ব্যাংক মনে করতে পারে আপনি ক্রেডিটের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল। এর ফলে নতুন কার্ড পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

১০. উচ্চ ঋণ-আয় অনুপাত (Debt-to-Income Ratio):
আপনার আয়ের কত অংশ ঋণ পরিশোধে যায় তা ব্যাংক খেয়াল রাখে। এই অনুপাত বেশি হলে ব্যাংক আপনার ঋণ শোধের ক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান হয়।

কীভাবে যোগ্যতা বাড়ানো যায়?
প্রথমেই আপনাকে নিজের ক্রেডিট স্কোর চেক করতে হবে এবং তা ৭০০ এর বেশি রাখার চেষ্টা করতে হবে। সময়মতো ঋণ শোধ করা, অপ্রয়োজনীয় ঋণ না নেওয়া, এবং ক্রেডিট লিমিটের মধ্যে সীমিত ব্যবহার করা প্রয়োজন।

এর পাশাপাশি, আয় স্থিতিশীল রাখা এবং চাকরির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা দরকার। আবেদনপত্রে সব তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করা জরুরি। একসাথে একাধিক কার্ডের জন্য আবেদন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি আপনার ক্রেডিট হিস্ট্রি না থাকে, তাহলে প্রথমে সিকিউরড কার্ড নিয়ে ব্যবহার শুরু করতে পারেন।

ভারতের ক্রেডিট কার্ড বাজার যেমন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি বাড়ছে প্রতিযোগিতাও। সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আবেদন করলে এবং ব্যাংকের শর্তাবলী মেনে চললে, খুব সহজেই আপনার প্রয়োজনীয় ক্রেডিট কার্ড পেতে পারেন। শেষ পর্যন্ত, দায়িত্বশীল আর্থিক আচরণই আপনার যোগ্যতার মূল চাবিকাঠি।