মহারাষ্ট্রে পরপর সরকারি ছুটির কারণে আগামী কয়েকদিন ইকুইটি মার্কেটের নিষ্পত্তি (Settlement) প্রক্রিয়ায় বিলম্ব দেখা দেবে। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই) ৪ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে যে ৫ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) এবং ৮ সেপ্টেম্বর (সোমবার) — এই দুই দিনকে নিষ্পত্তি ছুটি হিসেবে ধরা হবে। এর ফলে শেয়ারবাজারে (Stock Market) লেনদেন চালু থাকলেও, শেয়ারের ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে ক্রেডিট ও ফান্ড পেআউট কয়েক দিনের জন্য পিছিয়ে যাবে।
Stock Market: বিনিয়োগকারীদের জন্য দুশ্চিন্তা
প্রথমে ৫ সেপ্টেম্বর ঈদ-এ-মিলাদ উপলক্ষে মহারাষ্ট্র সরকার ওই দিনকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছিল। এর ভিত্তিতে বাজারে এটি নিষ্পত্তি ছুটি হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু পরে রাজ্য সরকার সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানায়, মুম্বাই শহর ও শহরতলিতে সরকারি অফিসগুলো ৫ সেপ্টেম্বর খোলা থাকবে, পরিবর্তে ৮ সেপ্টেম্বর ছুটি পালন করা হবে।
ফলে পরিস্থিতি দাঁড়াল এমন— শেয়ারবাজারে (Stock Market– যেমন NSE ও BSE) ৮ সেপ্টেম্বর ট্রেডিং স্বাভাবিকভাবেই চলবে, কিন্তু এনএসডিএল (NSDL) ও সিডিএসএল (CDSL) এর মতো ডিপোজিটরি সংস্থাগুলো বন্ধ থাকবে। এর অর্থ হল, ওই দিনের লেনদেনের নিষ্পত্তি কার্যক্রম সম্পূর্ণ থেমে যাবে।

এই সমন্বয়ের ফলে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে লেনদেন হবে, সেগুলোর শেয়ার ক্রেডিট বা ফান্ড পেআউট দেখা যাবে না সঙ্গে সঙ্গে। ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে ক্রয় করা শেয়ার প্রতিফলিত হবে শুধুমাত্র ৯ সেপ্টেম্বরের শেষে। একইভাবে, যে টাকা পেআউট হওয়ার কথা ছিল, সেটিও ওই দিন পর্যন্ত আটকে থাকবে।
শেয়ার কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক বিনিয়োগকারীকে তাই কিছুটা বাড়তি সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। অনেকে যারা স্বল্পমেয়াদি ট্রেডিং করেন বা T+1 নিষ্পত্তির উপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য এই বিলম্ব একটি অসুবিধা তৈরি করবে। বিশেষ করে যারা একই দিনে শেয়ার বিক্রি করে অন্য কোনো শেয়ার কেনেন, তাদের পরিকল্পনা খানিকটা পিছিয়ে যাবে।
শুধু ইকুইটির নিষ্পত্তিই নয়, ৮ সেপ্টেম্বর আরও বেশ কিছু ক্ষেত্র প্রভাবিত হবে। ওই দিন RBI ছুটি থাকার কারণে—
সরকারি সিকিউরিটি মার্কেট, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন, মানি মার্কেট, রুপি ইন্টারেস্ট রেট ডেরিভেটিভস।
সবই বন্ধ থাকবে। এছাড়াও নিষ্পত্তি ছুটিতে নিলাম বাজার (Auction Market) ও মুদ্রা ডেরিভেটিভসেও কোনো লেনদেন হবে না। ফলে বাজার অংশগ্রহণকারীদের সেই দিন কার্যত শুধু এক্সচেঞ্জে লেনদেনের সীমাবদ্ধ সুযোগ থাকবে, নিষ্পত্তি ও ফান্ড মুভমেন্ট বন্ধ থাকবে।
এখানে একটি বিশেষ দিক লক্ষণীয়— এই সংশোধিত ছুটি শুধু মুম্বাই শহর ও তার আশেপাশের জেলাগুলির জন্য প্রযোজ্য। সেখানে ৫ সেপ্টেম্বর অফিস খোলা থাকলেও ৮ সেপ্টেম্বর বন্ধ থাকবে। কিন্তু মহারাষ্ট্রের অন্যান্য জেলায় পূর্বঘোষিত সূচি অনুযায়ী ৫ সেপ্টেম্বর ঈদ-এ-মিলাদের ছুটি পালন করা হবে।
এর ফলে যারা রাজ্যের বিভিন্ন অংশে কাজ করেন বা একাধিক শাখার মাধ্যমে ট্রেডিং ও ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করেন, তাদের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা সময়সূচির কারণে কিছুটা জটিলতা তৈরি হতে পারে।
যদিও এই বিলম্ব সাময়িক, বিনিয়োগকারীদের নিজেদের লেনদেন পরিকল্পনা করার সময় এই দেরিকে বিবেচনায় রাখতে হবে। বিশেষ করে যারা শেয়ার বিক্রি করে সঙ্গে সঙ্গে টাকা ব্যবহার করতে চান, কিংবা নির্দিষ্ট দিনে ফান্ড পেআউট প্রত্যাশা করেছিলেন, তাদের কিছুটা পরিকল্পনা বদল করতে হবে।
শেয়ার বাজারে (Stock Market) এমন পরিস্থিতি খুব অস্বাভাবিক নয়। ছুটি বা টেকনিক্যাল কারণে প্রায়শই নিষ্পত্তির তারিখ পিছিয়ে যায়। তবে এখানে যেহেতু পরপর দু’টি নিষ্পত্তি ছুটি পড়েছে, তাই একসঙ্গে অনেক লেনদেন ৯ সেপ্টেম্বর ক্লিয়ার করা হবে। ফলে ওই দিনে নিষ্পত্তি কার্যক্রমের চাপ বেশি থাকবে।
৯ সেপ্টেম্বর যখন আবার স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হবে, তখন বিনিয়োগকারীরা একসঙ্গে একাধিক লেনদেনের ক্রেডিট ও পেআউট পাবেন। স্বল্পমেয়াদি তারল্য সংকট থাকলেও বাজারের মূল গতি বা ট্রেডিং প্রবাহে বড় কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কিছু ট্রেডার যারা হাই-ফ্রিকোয়েন্সি ট্রেডিং করেন, তাদের জন্য কার্যত তিন-চার দিনের ক্যাশ ফ্লো আটকে থাকার কারণে কৌশলগত পরিবর্তন করতে হতে পারে।
সার্বিকভাবে বলা যায়, মহারাষ্ট্র সরকারের ছুটি পুনর্নির্ধারণের কারণে ইকুইটি মার্কেটে (Stock Market) সাময়িক নিষ্পত্তি বিলম্ব তৈরি হলেও এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি উদ্বেগের কারণ নয়। এক্সচেঞ্জে ট্রেডিং চলতে থাকবে, কিন্তু ফান্ড এবং শেয়ারের প্রকৃত হস্তান্তর কয়েক দিনের জন্য পিছিয়ে যাবে। তাই এই সময় বিনিয়োগকারীদের সচেতনভাবে লেনদেন পরিকল্পনা করতে হবে এবং ৯ সেপ্টেম্বরের পরে সবকিছু স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।