ক্রেডিট স্কোর ঠিক, তবু লোন নয়—কারণ কুসংস্কার! জানুন বিস্তারিত

Despite Good Credit: ব্যবসা বড় হচ্ছে, গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে, সম্প্রসারণেরও সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু দোকানের মালিকটি ঋণ নেননি—কারণ সেদিন ছিল মঙ্গলবার। আর তাঁর বিশ্বাস অনুযায়ী,…

Why Indian SMEs Avoid Loans Despite Good Credit

Despite Good Credit: ব্যবসা বড় হচ্ছে, গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে, সম্প্রসারণেরও সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু দোকানের মালিকটি ঋণ নেননি—কারণ সেদিন ছিল মঙ্গলবার। আর তাঁর বিশ্বাস অনুযায়ী, মঙ্গলবার ঋণ নেওয়া অশুভ।

এই গল্পটি অদ্ভুত শোনালেও একেবারে বাস্তব। সম্প্রতি কনসুমা (Consuma)-র গবেষণা বলছে, ভারতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার (SME/SMB) উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রায় ৪৩ শতাংশ মানুষ সাংস্কৃতিক কুসংস্কার, পারিবারিক চাপ ও মানসিক দ্বিধার কারণে ঋণ নেওয়া এড়িয়ে যান কিংবা বিলম্বিত করেন।

   

ঋণ নয়, আবেগের প্রশ্ন
বছরের পর বছর ধরে এমএসএমই (MSME) ঋণ সংক্রান্ত আলোচনা সীমাবদ্ধ থেকেছে কাগজপত্র, সুদের হার ও আর্থিক সচেতনতার মধ্যে। কিন্তু এই গবেষণা জানাচ্ছে, সমস্যার গভীরে রয়েছে এক নিরব, অব্যক্ত সমস্যা—বিশ্বাস ও আবেগ।

রাহু কাল, অমাবস্যা বা নির্দিষ্ট বার এড়িয়ে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা আজও বহু ব্যবসায়ীর কাছে বাস্তব সিদ্ধান্ত। কারণ তারা মনে করেন, ভুল দিনে ঋণ নেওয়া ব্যবসার অমঙ্গল ডেকে আনতে পারে।

“ঋণ নিলে সমাজ কী বলবে?
গবেষণায় উঠে এসেছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: প্রায় ১৭.৮৩ শতাংশ ব্যবসায়ী ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে বন্ধু ও আত্মীয়দের থেকে টাকা ধার নেওয়া পছন্দ করেন। কারণ? ব্যাংকে আবেদন করলেই অনেক সময় আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী বা পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে “অপ্রাসঙ্গিক” প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়।
সোশ্যাল জাজমেন্ট বা সামাজিক সমালোচনার ভয় আজও অনেক ব্যবসায়ীর আর্থিক সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলছে।

প্রোডাক্ট ডিজাইন থেকে ছিটকে থাকা বাস্তবতা
বহু ফিনটেক সংস্থা তাদের অ্যাপ, প্রোডাক্ট বা পরিষেবা ডিজাইনে গ্রাহকের অভিজ্ঞতার কথা ভাবলেও সাংস্কৃতিক বা আবেগগত প্রেক্ষাপটকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দেয় না।

একজন ঋণগ্রহীতা যখন দেখেন যে প্রক্রিয়া কঠিন, অবিবেচক বা সাংস্কৃতিকভাবে “আনফিট”, তখন তিনি নিরাপদ বিকল্প খোঁজেন। সেটা হোক পরিচিত কেউ, হোক স্থানীয় মহাজন, অথবা একজন জ্যোতিষীর পরামর্শ।

ব্যাংকের থেকে ঋণ নেওয়া শুধুই সুদের হিসাব নয়, সেটা একটা আস্থা, সম্মান ও পারিবারিক গৌরবের প্রশ্ন। আর এটাই অনেক সময় আনুষ্ঠানিক অর্থব্যবস্থাকে পরাস্ত করে দেয়।

ঋণ নয়, আস্থা গড়ার লড়াই
ঋণ নেওয়া অনেক ব্যবসায়ীর কাছে স্ট্র্যাটেজিক সিদ্ধান্তের বদলে ব্যক্তিগত দুর্বলতা স্বীকারের মতো। কনসুমার গবেষণায় বলা হয়েছে, অনেকে পরিবারের মধ্যেও নিজের আর্থিক অবস্থা প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করেন—এটা গোপনীয়তার চেয়ে বেশি গৌরব ও লজ্জার প্রশ্ন।

যেখানে ব্যাংকের টেলিফোন কল, ঋণ সংগ্রহকারীর আচরণ, বা আবেদন প্রক্রিয়ার জটিলতা মানুষকে মানসিক ক্লান্তিতে ফেলে দেয়, সেখানে সোজাসুজি ঋণ প্রত্যাখ্যান বা পিছু হটাও অস্বাভাবিক নয়।
গবেষণায় এমনকি উঠে এসেছে কিছু গ্রাহকের অভিজ্ঞতা, যেখানে ‘হ্যারাসমেন্ট’, ‘ট্রমা’ এবং ‘ইরিটেশন’-এর মতো শব্দ ব্যবহার করেছেন ঋণ সংগ্রহ প্রক্রিয়ার বর্ণনায়।

সুদের হার নয়, বিশ্বাসের হার
আজকের দিনে যেখানে গ্রাহকের অভিজ্ঞতা নিয়ে কর্পোরেট বিশ্ব হইচই করছে, সেখানে এই সব তথ্য উদ্বেগজনক। কারণ, একটি ঋণ প্রক্রিয়ার প্রতিটি অংশ—আবেদন, অনুমোদন, ফোন কল, মনে করিয়ে দেওয়া—একটি ব্র্যান্ড ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের বিশ্বাস গড়ে তোলে।

সিএমওদের জন্য সতর্কবার্তা
একটি বড় ফাইন্যান্স সংস্থার মার্কেটিং প্রধান (CMO)-এর কাছে এ এক নতুন চ্যালেঞ্জ। তাঁর আসল প্রতিযোগী হয়তো আরেকটি ব্যাংক নয়, বরং একজন জ্যোতিষী, আত্মীয়, অথবা প্রতিবেশী।

এই বাস্তবতা শুধুমাত্র প্রোডাক্ট উন্নয়নের নয়, বরং একটি আবেগঘন ও সংস্কৃতিসচেতন ব্র্যান্ড গঠনেরও প্রশ্ন।
একটি ব্যবসায়িক ঋণ শুধুই টাকা নয়, এর সঙ্গে থাকে ভয়, আশা, অহংবোধ ও সংস্কার। কনসুমার গবেষণা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রতিটি ফর্মের আড়ালে থাকে একজন মানুষ।

একজন যার বিশ্বাস আছে। সীমা আছে। এবং যিনি একটি সাধ্য ঋণ শুধু মাত্র রাহু কালের জন্য এড়িয়ে যেতে পারেন।
এই বাস্তবতাকে বোঝা এখন আর বিলাসিতা নয়। এটা হলো—একজন সেবাদাতা হওয়ার চেয়ে বেশি, একজন ভরসাযোগ্য সঙ্গী হওয়ার প্রথম শর্ত।